মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি আজ

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৫, ১১:৪৪ পিএম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জয়ের চিত্র।    ছবি- সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জয়ের চিত্র। ছবি- সংগৃহীত

আজ ৫ আগস্ট পূর্ণ হচ্ছে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তথা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর। একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ এবং খুনি শেখ হাসিনার পতনের প্রথম বর্ষপূর্তি। ২০২৪ সালের এই দিনে জুলাই মাসজুড়ে চলা ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণআন্দোলনের মুখে গোপনে পদত্যাগ করে ভারত পালাতে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঐতিহাসিক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারী এবং পর্যবেক্ষকরা একে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নামে অভিহিত করে থাকেন।

এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণসহ সব ধরনের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও আপামর জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, এই বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করাই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য।

আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, জুলাই আমাদের নতুন করে আশার আলোÑ একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। হাজারো শহিদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।

পতিত স্বৈরাচার ও তার স্বার্থলোভী গোষ্ঠী এখনও দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে। আসুন সবাই মিলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না।

আন্দোলনের সূচনা: কোটা সংস্কার থেকে একদফা

২০২৪ সালের জুনের শেষদিকে তরুণদের একটি অংশ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এই দাবি পুরোনো হলেও নতুন মাত্রা পায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন এবং সারা দেশের শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে মানববন্ধন, রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। কিন্তু আন্দোলন দ্রুতই কোটা সংস্কারের গন্ডি ছাড়িয়ে স্বৈরশাসন, নির্বাচনি অনিয়ম, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক বিস্তৃত গণজাগরণে রূপ নেয়।

জুলাই মাসজুড়ে উত্তাল রাজপথ

২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব উত্তেজনার সময়। শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের প্রতিদিনের বিক্ষোভে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে অচলাবস্থা তৈরি হয়। ‘মেধা না কোটা? মেধা মেধা’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে রাজপথ। প্রশাসনের দমননীতি, বারবার ইন্টারনেট বন্ধ, গ্রেপ্তার ও গুমের প্রতিবাদে আন্দোলনের মাত্রা আরও তীব্র হয়।

দেশের সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম একটানা রাজপথে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দেয়Ñ পরিবর্তন চাই। দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত না করে ছাত্র-জনতা যে ঘরে ফিরবেন না, সেই সংকল্পে বোঝা যায় আগস্ট মাসকেও জুলাই হিসেবে গণনার মধ্য দিয়ে। আগস্ট মাসের প্রথম দিনটিকে ১ আগস্টের বদলে, ৩২ জুলাই হিসেবে অভিহিত করতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এভাবে ৫ আগস্ট হাসিনার পলায়নের দিন অভ্যুত্থানকারীদের পঞ্জিকায় স্থান পায় ‘৩৬ জুলাই’ হিসেবে।

৩৬ জুলাই তথা ৫ আগস্ট: শেখ হাসিনার ভারত পলায়ন

আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। সেদিন দুপুরে ঘোষণা আসে যে, সেনাবাহিনী প্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এই ঘোষণার পর অনুমান করা যায় যে, দেশের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে। তবে তখনো জানা যায়নি যে, হাসিনা ভারত পালিয়েছেন। বিকেল ৩টার দিকে শেখ হাসিনার ভারত পালানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়

৫ আগস্টের ঘটনার পর দেশের ভার পড়ে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ওপর। কয়েক দিনের মধ্যে একজন সর্বজনগ্রাহ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনার মাধ্যমে অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কার, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়।

বর্ষপূর্তিতে দেশজুড়ে কর্মসূচি

আজকের বর্ষপূর্তিকে ঘিরে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর নিজেদের মতো নানা কর্মসূচি পালন করবে। রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন জেলা শহর, উপজেলা এবং পৌরসভাতেও দিবসটি উদযাপন করা হবে।

এদিন ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে; বন্ধ থাকবে শেয়ারবাজারের লেনদেন। ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস উপলক্ষে দিনটি উদযাপন করবে সরকার।

প্রধান অনুষ্ঠানটি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালিত হবে। সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে এরই মধ্যেই প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে এই অনুষ্ঠান।

দিনব্যাপী এই আয়োজনে থাকছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ড্রোন শো। অনুষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে আছে বেলা ১১টা থেকে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর সংগীত পরিবেশনা, হাসিনার পালানোর ঘটনা উদযাপনে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ফ্যাসিস্টের পলায়ন উদযাপন, বিকেল ৫টায় ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশেষ ড্রোন শো এবং রাত ৮টায় ব্যান্ড দল আর্টসেলের পরিবেশনা। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের জেলা থেকে হাজার হাজার জনতা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!