ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগেই লটারির মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ওসিদের বদলি করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমরা শুধু এসপি এবং ওসিদের জন্য লটারি করব। ওসিদের লটারি ডিভিশন ওয়াইজ করতে হবে। ডিসিদের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কীভাবে কি করবে তাদেরটা তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আমি আশা করি, তারাও লটারি করবে।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নবিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণসংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগের দিন মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানিয়েছেন, তপশিল ঘোষণা করতে দ্রুতই নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেওয়া হবে। তার ঘোষণার পর গতকাল আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আজকের (গতকাল) আলোচনা সভায় সারা দেশের নির্বাচন পরিচালনার জন্য কত ফোর্স প্রয়োজন হবে- সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা ৮ লাখের মতো থাকবে। এর মধ্যে পুলিশ, আনসার থেকে শুরু বিজিবি, সেনাবাহিনী পর্যন্ত থাকবে। সব বাহিনীকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রিসাইডিং অফিসাররা যেন কারো বাসায় না থেকে নির্বাচনি কেন্দ্রে থাকতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে। তাদের সঙ্গে আনসার এবং পুলিশ সবাই থাকবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, ৪৭ হাজার ভোটকেন্দ্রের প্রতি কেন্দ্রেই একটি করে বডি-ওর্ন ক্যামেরা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। পুলিশের মধ্যে যিনি সিনিয়র পদধারী থাকবেন, তার কাছে বডি-ওর্ন ক্যামেরা থাকবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত সব বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন পোলিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেবে। বাহিনীগুলোর প্রশিক্ষণের পর তাদের মহড়া দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভালোভাবে হতে পারে, সে অনুশীলন করা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা চেষ্টা করব একটা জিনিস যেটা নিয়ে সব সময় আপনাদের প্রশ্ন থাকে যে, ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি- এরা নির্বাচনে একটা ভাইটাল রোল প্লে (মূল ভূমিকা পালন) করে। আপনাদের একটা সন্দেহ থাকে... বিভিন্ন প্রার্থীরা চায় যে তার পরিচিত কোনো ডিসি, এসপি, ইউএনও বা ওসি (নিজের নির্বাচনি এলাকায়) নিতে পারে কি না। এবার আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটা প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা থেকে। সিদ্ধান্তটা হলো- আমরা বিশেষ করে পুলিশ বিভাগের এসপি এবং ওসিদের সবার সামনে লটারির মাধ্যমে পোস্টিংটা (পদায়ন) আমরা করে দেব। এখন যারা যেখানে আছে, তাদেরই আমরা বিভিন্ন জায়গায় পদায়ন করব। সেটা আমরা লটারির মাধ্যমে করে দেব। যেন কারো কোনো ধরনের সন্দেহ না থাকে যে, সে অমুকের সাপোর্টার। এসপিদের লটারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েই হবে। ওসিদের বিভাগভিত্তিক পোস্টিং করে লটারি হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করার কিছুদিন আগে লটারির মাধ্যমে এসপি ও ওসিদের পদায়ন করা হবে। আপনারা জানেন শিডিউল ঘোষণা করার পর বদলি-পদায়নের বিষয়গুলো চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। এজন্য আমরা আমাদের কাজটা করে দেব। তারপরও যদি নির্বাচন কমিশন চায় তারা পরিবর্তন করবে, সেটাও তারা করতে পারবে।
পুলিশের ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৭৬ কর্মকর্তাকে সংযুক্তিতে বদলি করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটা রুটিন বিষয়। এটা সবসময় চলমান থাকবে।
ব্রিফিংয়ের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।