সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ১১:১৮ পিএম

ফের পিছিয়ে গেল ড্যাপের গেজেট

মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২৫, ১১:১৮ পিএম

ফের পিছিয়ে গেল ড্যাপের গেজেট

ফের পিছিয়ে গেল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) চূড়ান্ত গেজেট। গত ১০ আগস্ট সংশোধিত ড্যাপ উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এটি অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেদিন হয়নি। ফলে সংশোধিত ড্যাপের চূড়ান্ত গেজেট কার্যত ঝুলেই গেল। কবে হবেÑ সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ। অংশীজনদের মাঝে জল্পনা চলছে, কম করে হলেও পাঁচ মাসের জন্য ঝুলে গেছে ড্যাপ। তবে রাজউক সূত্র এসব জল্পনা মানতে নারাজ।  

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও ড্যাপের নেপথ্য কারিগর আশরাফুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে জোর দিয়ে বলেছেন, ‘আশা করা যায়, আগামী এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত গেজেট হয়ে যাবে। এর আগেও হতে পারে’। তিনি আরও বলেন, ‘সব ঝুট-ঝামেলা শেষ। অংশীজনদের সবাই ড্যাপের সর্বশেষ সংশোধনীতে খুশি’।  

রাজউকের পক্ষে কোনো কাজ বাকি রয়েছে কি নাÑ প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সব কাজকর্ম সম্পন্ন, আর কিছুই বাকি নেই। এখন শুধু মন্ত্রণালয়ভিত্তিক প্রক্রিয়াগুলো বাকি’। তিনি জানান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়ে গেছে, এখন এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য যাবে। আইন মন্ত্রণালয় ছেড়ে দিলে যাবে উপদেষ্টা কমিটির কাছে। কমিটির অনুমোদন পেলেই তা দ্রুত গেজেট হয়ে যাবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অংশীজনদের ব্যাপক অসন্তোষ এবং উপদেষ্টা কমিটির মতপার্থক্যের কারণে আবাসন খাতের প্রাণস্পন্দন সংশোধিত ড্যাপের চূড়ান্তকরণ থমকে যায়। এরপর রাজউক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অসন্তুষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে তাদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করে। সেই আলোকে ব্যাপক বিয়োজন ও সংযোজনের মাধ্যমে রাজউক ড্যাপ সংশোধনীটি চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মন্ত্রণালয়ও সেটিতে কয়েকদফা কাঁচি চালায়। মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ মতামতও রাজউক খসড়া ড্যাপ সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্তরূপ দেয়। এরপর গত ৩ আগস্ট গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে পুনর্মূলায়ন শেষে তা চূড়ান্ত করতে সাত দিন পর ১০ আগস্ট সময় নির্ধারণ করা হয়। সেদিন সংশোধিত ড্যাপ এবং ঢাকা ইমারত বিধিমালা-২০২৫ চূড়ান্তকরণের কথা থাকলেও তা হয়নি। ব্যাপক আশা নিয়ে এই দিনটির দিকে তাকিয়ে ছিলেন অংশীজনেরা। এতে তারা আশাহত হন।

তবে কেন সেদিন ড্যাপ অনুমোদন হয়নি, সেই কারণ কেউ জানাতে পারেনি। তবে রাজউক সূত্রের বক্তব্যের প্রেক্ষিত ধরে রূপালী বাংলাদেশ জানতে পেরেছে, ড্যাপকে অধিকতর নিরাপদ ও সংশয়মুক্ত রাখার তাগিদে এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ায় সেদিন এটি স্থগিত রাখা হয়।  

অন্যদিকে অংশীজনদের কেউ কেউ মনে করেন, সংশোধিত ড্যাপে প্রচুর ফাঁক-ফোকর থেকে যাওয়ায় এটি আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। সেই ধারণা থেকেই ড্যাপের চূড়ান্তকরণ আপাতত ঝুলে গেছে। 

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, নগর পরিকল্পনাবিদরা সংশোধিত ড্যাপ নিয়ে এখনো কমবেশি নাখোশ। তাদের মতে, আবাসন ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার)’ বাড়ানো হয়েছে, যা নগরায়ণের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভবিষৎ নগর সুরক্ষা। তাদের মতে, এতে নগরায়ণের স্বাভাবিক বিকাশ বিঘিœত হবে এবং এলাকাভিত্তিক বৈষম্য বাড়বে।  

নতুন এই ড্যাপ নিয়ে বেশি অসন্তোষ রয়েছে রাজধানীর ভূমি মালিকদের সংগঠন ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের। গত ২০ মে সংগঠনটি রাজউক ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। নতুন ড্যাপ নীতি ভূমি মালিকদের জন্য বৈষম্যমূলক এবং স্বার্থবিরোধী বলে দাবি তাদের। কর্মসূচি চলাকালে তারা বেশকিছু দাবি উত্থাপন করেন। সংগঠনটির দাবি, জলাধার ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়েছে ড্যাপ। তাই এটি বাতিল করে ইমারত বিধিমালা ২০০৮ পুনর্বহাল এবং ভূমি মালিকদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। 

এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, এই ড্যাপ নিয়ে কেউ খুশি কেউ খুশি না। এখানে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে।

ফার কী :

ফ্লোর এরিয়া রেশিওর সংক্ষিপ্ত নাম হলো ‘ফার’। এটি কতটুকু জায়গা নিয়ে ভবন নির্মাণ করা যাবে তার অনুপাত। যেমন: ১ হাজার বর্গফুট জমির ফার যদি ১.৫ হয়, তবে মোট ফ্লোর স্পেস হবে ১ হাজার ৫০০ বর্গফুট। সেই প্লটে পাঁচতলা ভবন হলে প্রতি তলা হবে ৩০০ বর্গফুট। রাজউক কর্মকর্তাদের অভিমত, ফার নগর পরিকল্পনা ও ভবন নির্মাণের ঘনত্ব ও উচ্চতা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্ষেপে সংশোধিত ড্যাপ :

সংশোধিত ড্যাপে ‘সেট ব্যাক এলাকা’ ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। ভবনের যে অংশ খালি রেখে ভবন নির্মাণ করতে হয় তাকে সেট ব্যাক এলাকা বলে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নিশ্চিত করতে দুটি ভবনের মাঝে কৌণিক দূরত্ব কমপক্ষে ৭২ ডিগ্রি রাখার বিধানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিন্তু নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, এর আদর্শমান ৪৫ ডিগ্রি। এ নিয়েও আবাসন ব্যবসায়ীরা অসন্তুষ্ট। তাদের মতে, এ বিধান চালু হলে ঢাকা শহরের আবাসন সুবিধা নগণ্য হয়ে যাবে। জানা গেছে, মালিকানা ও বসবাসের ধরন অনুযায়ী ইমারত ৬ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। 

নতুন ড্যাপে যেসব পরিবর্তন :

নতুন ড্যাপে এলাকাভিত্তিক ফার-এ বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আবাসন ইউনিটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ফার নির্ধারণ করা হয়েছে ২.৩। এ রেশিও প্রযোজ্য হবে রামপুরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, তারাব পৌরসভা, হেমায়েতপুর ও সাভার পৌরসভা এবং টঙ্গীর ক্ষেত্রে। সর্বনি¤œ ফার হলো ১.৬। এলাকাভিত্তিক ফার এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এলাকা হলোÑ গুলশান ও বনানী।

এসব এলাকার সর্বোচ্চ ফার হলো ৫.৫ এবং সর্বনি¤œ হলো ২.০। ড্যাপ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এলাকাভিত্তিক ফার আগেকার ৪.১ রাখা হয়েছে। তবে আবাসন ইউনিটের ফার ১.৯ থেকে বৃদ্ধি করে ২.০ করা হয়েছে। বারিধারা আবাসিক এলাকার এলাকাভিত্তিক ফার ৪ থেকে বাড়িয়ে ৪.৭ করা হয়েছে। তবে আবাসন ফার ১.৮ থেকে কমিয়ে ১.৭ করা হয়েছে। 

গুলশান ও বনানীর এলাকাভিত্তিক ফার ৫.৫ রাখা হলেও আবাসন ফার ১.৭ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২.০। উত্তরা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের দুই ধরনের ফার এর ক্ষেত্রেই শূন্য.২ পয়েন্ট বেড়েছে। ধানমন্ডির আবাসন ফার ১.৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ২.১ এবং জলসিঁড়ি আবাসিক এলাকার ফার ১.৬ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২.১। পান্থপথ এলাকায় দুই ধরনের ফারই বেড়েছে। মহাখালী, মহাখালী ডিওএইচএস নিকেতনের দুই ধরনের ফারই বাড়ানো হয়েছে।

খিলক্ষেত আবাসিক এলাকার এলাকাভিত্তিক ফার ১.৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪.২ এবং আবাসন ফার ১.২ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২.০। আফতাবনগর, বনশ্রী ও উত্তরা তৃতীয় পর্বের ফারও বাড়ানো হয়েছে। মিরপুরের আবাসন ফার ১.৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ২.০ এবং এলাকাভিত্তিক ফার ২.৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩.৪। নারায়ণগঞ্জ সেন্টার এলাকার আবাসন ফার ১.২ থেকে বেড়ে হয়েছে ২.১। ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় ১.৬ থেকে বেড়ে ১.৯, রামপুরায় ১.৪ থেকে বেড়ে ২.৩, গ্রীন মডেল টাউনে ১.৫ থেকে বেড়ে ১.৯ এবং পূর্বাচলে ১.৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৯। তবে বিমানবন্দর এলাকার ফার নির্ধারিত হয়নি এখনো। 

ইমরাত বিধিমালা-২০২৫ :  

ইমারত বিধিমালা-২০২৫-এ বেশকিছু নতুন বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজউকের আওতাধীন যেকোনো স্থানে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ বা ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদদের অনুমোদন লাগবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!