ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসে সমাবেশ নিজ দেশে ফেরার আকুতি  চাইলেন গণহত্যার বিচার

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৭:০১ এএম

কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে পথসভা, মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় উখিয়া উপজেলার ৪ নম্বর বর্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বালুর মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ। এতে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফেরার আকুতি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ‘গণহত্যার’ বিচারের দাবি জানান।

আট বছর আগে রাখাইনে ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল লাখ লাখ রোহিঙ্গা। সেই স্মৃতিবহ ২৫ আগস্টকেই তারা পালন করছে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ হিসেবে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় সকাল থেকেই পালিত হয় নানা কর্মসূচি। নিহত স্বজনদের স্মরণ, সমাবেশে পূর্ণ হয়ে ওঠে ক্যাম্প। জমায়েত মাঠ ছাড়িয়ে পাহাড়েও। এ সময় স্লোগানে উচ্চারিত হয় একটাই দাবিÑ  নিরাপদে সম্মানের সঙ্গে নাগরিক অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন।

সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান, আট বছর কেটে গেলেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার। উল্টো প্রত্যাবাসন পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে। গত এক বছরে নতুন করে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। এদিকে আন্তর্জাতিক সহায়তাও কমছে দিন দিন। ফলে সংকটে পড়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য কার্যক্রম। এতে বেড়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।

গতকাল সকালে সমাবেশস্থলে নানা দাবি সংবলিত ফিতা ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সমাবেশে জড়ো হন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। কিছুক্ষণ পরপর মিছিল করে সমাবেশে নানা বয়সি মানুষকে জড়ো হতে দেখা যায়। সমাবেশে অনেকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হওয়া নিজেদের স্বজনদের ছবিও নিয়ে আসেন। 

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কী করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভবÑ তা আন্তর্জাতিক মহলকে ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে হবে। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রত্যাবাসন করলে আরাকান আর্মির বাধার মুখে পড়তে হবে রোহিঙ্গাদের।

সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলার ইনানী সৈকতের একটি হোটেলে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন থাকায় সকাল ১০টার দিকে তড়িঘড়ি করে সমাবেশ শেষ করা হয়।

রোহিঙ্গারা জানান, আট বছর পরও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, কমতে থাকা সহায়তা আর ভিন দেশে অনেকটা বন্দি জীবন; এসব নিয়েই কেটে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের দিন। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে রাখাইন রাজ্যে এখন থেমে নেই নির্যাতন-নিপীড়ন, চলছে গণহত্যা। এতে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তের বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে। এমন দুর্বিসহ জীবন থেকে মুক্তি পেতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতায় স্বদেশে ফেরার আকুতি রোহিঙ্গাদের।

উখিয়া রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মোহাম্মদ হুমায়ুন জানান, তারা নিরাপত্তা ও অধিকার পেলে নিজ দেশে ফিরবেন। তারা আর শরণার্থী হিসেবে থাকতে চান না।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন আশ্রয় নেওয়ায় রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়েছেন নানা অপরাধে। মাদকপাচার, মানবপাচার, অপহরণ ও ডাকাতিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই রোহিঙ্গাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে না। এতে দিন দিন বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার ভার বহন করা বাংলাদেশের জন্য বড় চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩ আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে ১ লাখ ২৪ হাজার এসেছে গত ১৮ মাসে। নিবন্ধিতদের বাইরেও অনেক রোহিঙ্গা রয়েছে। কিন্তু গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।