জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ দেশের ইতিহাসে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকায় থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। অনেক সময় পুলিশের বন্দুকের নলের মুখে দাঁড়াতেও পিছপা হন না তারা। অথচ রাজনীতির ‘আঁতুড় ঘর’খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ-ডাকসু নির্বাচনে এসে পিছিয়ে তারা। এবার ডাকসুর ভোটারদের মধ্যে ৪৮ শতাংশই নারী শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও ডাকসুতে ২৮টি পদে লড়ছেন ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে নারী ৬২ জন, যা মোট প্রার্থীর মাত্র ১৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত মতের সঙ্গে অমিল ও নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাইবার বুলিংয়ের কারণে তারা প্রার্থী হওয়ার সাহস করেননি।
এবার ডাকসু নির্বাচনে ভোটার প্রায় ৪০ হাজার, যার মধ্যে ১৮ হাজার ৯৫৯ জন ছাত্রী। ডাকসুর প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার ডাকসুতে সহসভাপতি বা ভিপি পদে ৪৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ছাত্রী মাত্র ৫ জন। আর সাধারণ সম্পাদক বা জিএস পদে প্রার্থী ১৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ছাত্রী মাত্র ১ জন। এ ছাড়াও সহসাধারণ সম্পাদক বা এজিএস পদে ২৫ প্রার্থীর মধ্যে ছাত্রী মাত্র ৪ জন।
এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন পদে দুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে একজন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে নয়জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে তিনজন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে দুজন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে একজন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে একজন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে তিনজন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক পদে দুজন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে তিনজন এবং সদস্য পদে ২৫ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আন্তর্জাতিক ও ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে কোনো নারী প্রার্থী নেই।
ছাত্রীদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হল রয়েছে পাঁচটি। এই পাঁচটি হল সংসদের প্রতিটিতে ১৩টি করে মোট ৬৫টি পদ রয়েছে। এসব পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৮৫ জন। এর মধ্যে দুটি হল সংসদের দুটি সম্পাদকীয় পদে দুই ছাত্রী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
ভিপি পদের প্রার্থীদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেত্রী উমামা ফাতেমা ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল এবং শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ভিপি পদে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়ছেন তাহমিনা আক্তার, মারজিয়া হোসেন জামিলা এবং জান্নাতি বুলবুল। জিএস পদে একমাত্র নারী প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেইঞ্জ’ প্যানেল থেকে লড়ছেন।
এজিএস পদে তিন বাম ছাত্র সংগঠনের সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১, অদম্য ২৪’ প্যানেল থেকে অদিতি ইসলাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে আশরেফা খাতুন, নাগরিক পার্টি থেকে বহিষ্কৃত মাহিন সরকারের প্যানেল থেকে ফাতেহা শারমীন এনি প্রার্থী হয়েছেন। আর সানজানা আফিফা অদিতি লড়ছেন স্বতন্ত্র হিসাবে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নারীরা আন্দোলনে বা অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থেকেছেন, কিন্তু সেই আন্দোলন বা অভ্যুত্থানের পর অধিকাংশ ঘরে ফিরে গেছেন, তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য সোচ্চার হননিÑ এটা ১৯৫২ সাল থেকেই আমাদের জন্য বাস্তবতা। কিন্তু এবার নারীরা নিজেদের রাজনৈতিক অধিকারের হিস্যাটা বুঝে নিতে চাইছেন। সে কারণে তাদের ওপর আক্রমণের মাত্রাও বহুবিধ।’
প্রসঙ্গত, ডাকসুর ১০০ বছরের ইতিহাসে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনজন নারী। ১৯৬০-৬১ শিক্ষাবর্ষে ডাকসুতে প্রথম কোনো নারী প্রার্থী ভিপি পদে জয়ী হন। তার নাম বেগম জাহানারা আখতার। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হন ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী মতিয়া চৌধুরী। এরপর ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে ডাকসুর ভিপি হন মাহফুজা খানম। তিনিও ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী ছিলেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন