মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম

বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল

জেন - জি বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, নিহত ১৯

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১০:৪৭ পিএম

জেন - জি বিক্ষোভে উত্তাল নেপাল, নিহত ১৯

একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে গতকাল সোমবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর মান্ডালা মোড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। খবর দ্য হিমালয়ান টাইমসের। ‘জেন-জি’ পরিচিত তরুণ ও শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশের সময় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে দেশটির বিভিন্ন শহরে স্থানীয় প্রশাসন কারফিউ জারি করেছে।

হাসপাতালের রিপোর্টের বরাত দিয়ে দ্য হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ট্রমা সেন্টারে ৬ জন, সিভিল হসপিটালে ৩ জন, এভারেস্ট হসপিটালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে (কেএমসি) ১ জন ও ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং হসপিটালে ১ জন রয়েছেন। বাকি নিহত তিনজনের খবর পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আহতের সংখ্যা শতাধিক। তবে নিহত ও আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি। 

কাঠমান্ডু ভ্যালি পুলিশ কার্যালয়ের মুখপাত্র শেখর খানাল বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘সমাবেশ চলাকালে রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হন। এ ছাড়াও পূর্বাঞ্চলীয় শহর ইতাহারিতেও দুজন নিহত হয়েছে। পুলিশসহ প্রায় শতাধিক চিকিৎসাধীন।’

সরকারের মুখপাত্র এবং যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বিবিসিকে বলেছেন, ‘সরকার কিছু একটা করবে’।

গতকাল কাঠমান্ডুতে তরুণদের কর্মসূচি শুরু হয় জাতীয় সংগীত দিয়ে; পরে তারা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। তরুণরা, যাদের মধ্যে কয়েকজন কলেজ ইউনিফর্ম পরা ছাত্র, সকাল ৯টা থেকেই মান্দালায় জড়ো হতে শুরু করে, সরকারি দুর্নীতির নিন্দা জানিয়ে স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। জনপ্রিয় র‌্যাপার ওএমজি স্পার্কও সেখানে লাইভ সংগীত পরিবেশন করেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠলে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। 

সংঘর্ষ মান্ডালা থেকে ছড়িয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষ কেবল রাজধানীর বানেশ্বর এলাকায় কারফিউ দিয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা এ সময় নিউ বানেশ্বরের ফেডারেল পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সেও হামলা চালায়। বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত ওই এলাকায় পরিস্থিতি অশান্ত ছিল। ক্রুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে কারফিউর বিধিনিষেধ ভেঙে পার্লামেন্টের কাছে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়ার পর নেপালের রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজারাম বাসনেত বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসন আইন-২০২৮ এর বিধান অনুসারে জেলা নিরাপত্তা কমিটির সুপারিশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের গাছের ঢাল ও পানির বোতলের হামলা রুখতে পুলিশ জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, জানিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট। পরবর্তীতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় কারফিউর আওতা বাড়ায়।

সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, মহারাজগঞ্জের লাইনচুরে ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সিঙ্গা দুর্বার এলাকার সব অংশ, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও সংলগ্ন এলাকায় কারফিউ জারি হয়েছে। স্থানীয় সময় দুুপুর সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিক্ষোভের কারণে গতকাল বিকেলে নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে বানেশ্বরে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে কান্তিপুর টেলিভিশনের সাংবাদিক শ্যাম শ্রেষ্ঠাও রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির শহর দামাকেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

কাঠমান্ডুতে সহিংসতার পর নেপালের বুটওয়াল, চিতওয়ান, পোখরা এবং বির্তামোডসহ প্রধান শহরগুলোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কাস্কির জেলা প্রশাসন অফিস (ডিএও) পোখরায় একই রকম কারফিউ জারি করেছে যেখানে পুলিশ গুলি চালিয়েছে, কিছু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। পোখারায় বিক্ষোভকারীরা মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভাঙচুর করার পর সেখানেও কারফিউ জারি হয়। পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ওলি।

সিভিল সার্ভিস হাসপাতালের মেডিকেল ডিরেক্টর দীপক পাউডেল জানিয়েছেন, শুধু ওই হাসপাতালেই একশজনেরও বেশি আহত ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল। তাদের অনেকেই রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন।

কাঠমান্ডু ভ্যালি পুলিশ অফিসের মুখপাত্র শেখর খানাল বলেছেন, ‘কতজন আহত হয়েছেন তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিক্ষোভকারী উভয় পক্ষের লোকজনই আহত হয়েছেন’।

বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারী হামি নেপালের রোনেশ প্রধান বলেন, ‘তরুণদের কণ্ঠস্বর গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একই বৃদ্ধদের দ্বারা শাসিত হতে পারি না। আমরা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত’।

২৪ বছর বয়সি শিক্ষার্থী ইউজান রাজভা-ারি বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আমাদের টনক নড়িয়েছে, যদিও এখানে একত্র হওয়ার এটিই একমাত্র কারণ নয়। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ করছি, কেননা দুর্নীতি নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে’। 

২০ বছর বয়সি আরেক শিক্ষার্থী ইক্ষমা তুমরক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সরকারের ‘কর্তৃত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি’ তাকে ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা পরিবর্তন দেখতে চাই। অন্যরা এসব মেনে নিয়েছে, কিন্তু আমাদের প্রজন্মের হাতে এর শেষ হবে।’ 
বিক্ষোভকারীদের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায়ও তরুণ নেপালিরা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন: ‘আমাদের করের টাকা আসলে কোথায় যায়?’ অথবা ‘কেন বাজেট বাতাসে মিলিয়ে যায়?’ 

প্রতিবাদে উপস্থিত ২২ বছর বয়সি ছাত্রী সুস্মিতা খাড়কা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা অবিশ্বাস্যভাবে কার্যকর হতে পারে। কিন্তু যখন এটি সহিংস হয়ে ওঠে, তখন এটি পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তোলে।’

কাঠমান্ডুর রাস্তায় সহিংসতার মাঝখানে আটকে পড়া পথচারী সঞ্চিত মহারজন বলেন, ‘আমি আশা করিনি যে, এত বিশাল জনতা হবে। আমি কেবল পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি। আমি কাঁদানে গ্যাসের আঘাতে আক্রান্ত হয়েছিলাম। তবুও, তরুণদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শক্তিশালী বোধ হয়।’

অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়াকে কারণ দেখিয়ে জুলাইয়ে নেপাল সরকার ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছিল। গত শুক্রবার ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম ব্লক করে দেওয়ার পর ফেসবুক, এক্স, ইউটিউবসহ ওই সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটগুলো ব্যবহারকারী লাখ লাখ নেপালি ক্ষুব্ধ হয়। নেপাল এর আগেও জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। নিষেধাজ্ঞার আওতায় না পড়ায় টিকটক এখনো দেশটিতে সচল রয়েছে।

নেপালের সরকার গত মাসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধন, যোগাযোগের কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং অভিযোগ সমাধান ও নিয়মনীতি মানা হচ্ছে কি নাÑ তা দেখতে দুই কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল। গত রোববার এক বিবৃতিতে নেপাল সরকার জানায়, তারা মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এসবের সুরক্ষা ও অবাধ ব্যবহার নিশ্চিতের পরিবেশ তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!