ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

স্বস্তি ফিরছে খাগড়াছড়িতে 

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ১২:২৫ এএম
  • ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত, খুলছে দোকানপাট, চলছে গাড়ি 
  • অভিযোগ ওঠা কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি

টানা চার দিনের অবরোধের পর স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন স্থানীয়রা। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। তবে এখনো জেলা সদর, পৌরসভা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। এদিকে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ সংগঠনের পক্ষ থেকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিতের ঘোষণার পর জেলার পরিস্থিতির উন্নতি দেখা যাচ্ছে।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ি-ঢাকা, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিসহ বিভিন্ন রুটের কিছু দূরপাল্লার সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। অনেকে দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন। যারা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন তারও গন্তব্যে ফিরছেন। শহরে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে শহরের পরিবেশ। এ ছাড়া শহর ও শহরতলিতে সীমিত আকারে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চার দিন বন্ধ থাকার পর দোকানপাটও খুলতে শুরু করেছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার মধ্য রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে দুর্গোৎসবের প্রতি সম্মান এবং প্রশাসনের আট দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করে জুম্ম ছাত্র-জনতা। তবে প্রত্যাহার করা হয়নি ১৪৪ ধারা। ফলে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা বজায় আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জেলাজুড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ টহল অব্যাহত আছে। গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রবেশপথে বসানো চেকপোস্টে বরাবরের মতো জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গতকাল সকালে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় দেখা যায়, সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। অধিকাংশ দোকানপাটও খুলেছে। সকাল ৯টার পর থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। 

পানছড়ি অটোরিকশা স্টেশনে অনিল বিকাশ চাকমা জানান, তিনি ডাক্তার দেখাতে এসে আটকা পড়েন। অবরোধ তুলে নেওয়ার পর বাড়ি ফিরছেন। পৌর শহরে ট্রাকচালক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, অবরোধের কারণে ট্রাক বন্ধ ছিল। কয়েক দিন ধরে আয়-রোজগার বন্ধ। অবরোধ না থাকায় গাড়ি চালানো শুরু করলাম।

জসিম উদ্দিন নামের এক বাসচালক চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে বাস চালান জানিয়ে বলেন, অবরোধের কারণে বাস চলাচল না করায় গত কয়েক দিন উপার্জন করতে পারেননি। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। অবরোধ না থাকায় গতকাল থেকে গাড়ি চালানো শুরু করতে পেরেছেন, যে কারণে অনেক খুশি তিনি।

খাগড়াছড়ি গুইমারা থানার ওসি মো. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ধীরে ধীরে জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে। যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।’ 

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাসান মারুফ বলেন, ‘১৪৪ ধারা জারি থাকলেও শারদীয় দুর্গোৎসবের কারণে আমরা মানুষের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত করছি না। পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিগগির ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হতে পারে।’

এদিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি। গত মঙ্গলবার রাতে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, সিভিল সার্জনের কাছে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনে ধর্ষণের পরীক্ষার ১০টি সূচকের সব কটিতে স্বাভাবিক লেখা রয়েছে। এর অর্থ ধর্ষণের কোনো আলামত নেই।

গতকাল জেলা সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এ ঘটনায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। তারপরও এটি আদালতের বিষয়। আদালত সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাতেই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে।