ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

বিবিসি বাংলাকে তারেক রহমান

দ্রুতই দেশে ফিরে  নির্বাচনে অংশ নেব

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১০:৪৪ পিএম

দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবিসি বাংলার সঙ্গে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেছেন তারেক রহমান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার দুইজন সিনিয়র সাংবাদিক। 

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।  কিন্তু গণমাধ্যমের সাথে আপনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি। এত দিন ধরে আপনি কথা বলেননি কেন?

উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ব্যাপারটা বোধ হয় এ রকম না, ব্যাপারটা বোধ হয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাসজীবনে, তবে আমার ওপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে, তার পর থেকে আমি গ্রামে-গঞ্জে আমার নেতাকর্মীসহ তাদের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে, আমি সকলের সাথে কথা বলেছি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতিমতো একটা আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারত না। আমি একবার প্রেসক্লাবে কথা বলেছিলাম। তখন পরের দিন দেখলাম যে প্রেসক্লাবে একটি তখনকার যেই প্রেসক্লাবের যারা সদস্য ছিলেন বা কমিটি ছিল, তারা একটি মিটিং ডেকে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তখন আমাকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি বলেছিল, সে রকম কোনো ব্যক্তিকে তারা প্রেসক্লাবে কথা বলতে দেবে না। এভাবে তারা চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে।

দেশে ফেরার প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, কিছু সংগত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে ওঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসব।

নির্বাচনের আগে দেশে আসবেন এমন সম্ভাবনা বলা যায় প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেন, রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তা স্বাভাবিক, নির্বাচনের সাথে রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকব? আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত, যেই প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে, জনগণের সাথে জনগণের মাঝেই থাকব ইনশাআল্লাহ।

এ ছাড়া তার ফেরার পেছনে নিরাপত্তার শঙ্কার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে তারেক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনার দলের নেতা বা সমর্থক এই অভ্যুত্থানে আপনাকে ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন? তিনি বলেন, এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে ৫ আগস্ট, যেই আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত, এই আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটির প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে।

আমি মনে করি, জুলাই-অগাস্ট মাসে এসে জনগণ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাথে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়। আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসার ছাত্রদের, তারা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিণীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি কৃষক, শ্রমিক, সিএনজিচালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টসকর্মী - তারা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে। আমি বিশ্বাস করি দৃঢ়ভাবে সমাজের দল-মত-নির্বিশেষে, শ্রেণিবিন্যাস-নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তারা এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল বা কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, এককভাবে বিএনপি নির্বাচন করবে মানে দলগতভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে নির্বাচন করবে? উত্তরে তিনি বলেন, আমরা প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম কমবেশি একসাথে কাজ করার জন্য। এমনকি আমরা যে ৩১ দফা দিয়েছি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের, এটি প্রথমে ২০১৬ সালে আমরা দিয়েছিলাম শুধু বিএনপির পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ভিশন টুয়েন্টি ছিল। যেটা পরবর্তীতে কিছুটা আরেকটু ডেভেলপ করে আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম।

পরবর্তীতে আমরা আমাদের সাথে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের সাথে পরামর্শ করে সকলের মতামত নিয়ে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কারণটি হচ্ছে যে দলগুলোকে আমরা পেয়েছি আমাদের সাথে রাজপথের আন্দোলনে, আমরা চাই সবাইকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সকলের মতামতকে সাথে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই।

নির্বাচনে প্রার্থী বা মনোনয়নের কৌশল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, এর আগে বিভিন্ন সময় নির্বাচনগুলোতে পেশিশক্তির প্রভাব, টাকার প্রভাব, পারিবারিক বিষয় বিবেচনা এই বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ আছে। এবার ভিন্ন কী হবে আসলে? উত্তরে তারেক রহমান বলেন, কখনোই এসব বিবেচনায় নিয়ে আমার দল নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সবসময় কমবেশি যা ছিল বা ভবিষ্যতে আমরা যেটিকে মূল্যায়ন করব- সেটি হচ্ছে অবশ্যই কোনো একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইব, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সাথে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, উঠাবসা আছে, যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম।

নির্বাচনের অংশ নেওয়া এবং তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, 

আমি একজন রাজনৈতিক দলের সদস্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি। নির্বাচনের সাথে তো রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই নির্বাচন যেখানে একটি মানে জনগণের সম্পৃক্ত এ রকম একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই আমি নিজেকে দূরে থাকতে পারব না। আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই ইনশআল্লাহ থাকব আমি। আপনি আপনার প্রশ্নের পরের যে অংশটি ছিল, দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। 

নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকার বিষয়ে বিবিসি বাংলার প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, আপনি এমন একজন মানুষের কথা বলেছেন, যেই মানুষটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, যতবার গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে, প্রতিবার উনি অবদান রেখেছেন। সেই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুনরুদ্ধার করার জন্য। এবারও আপনাদের সবার চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তার ওপরে অত্যাচারের খড়গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু উনি আপস করেননি। এ রকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন কীভাবে উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো। ভবিষ্যতেরও  দলের জন্য ভূমিকা রাখবে। 

বিবিসি বাংলা পরবর্তীতে তারেক রহমানের কাছে জানতে চায় দুর্নীতি প্রশ্নে বিএনপি ভোটারদের আশ্বস্ত করবে কীভাবে। এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ছিল সেই সময়। আমরা ২০০১ সালের পয়লা অক্টোবরে সরকার নির্বাচনের পর ১০ অক্টোবর সরকার গঠন করি, সম্ভবত। এর বোধ হয় কিছুদিন পরে একটি সূচক বের হলো টিআইবির। মানে দুই তিন মাস পরে বোধ হয় একটি সূচক বের হলো। নিশ্চয়ই মাত্র নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষে তো ভালোমন্দ কোন কিছুই তিন মাসে করা সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে সূচকটি হয়েছিল সেটি তার আগে আমাদের আগে যে সরকারটি ছিল তারা যে পাঁচ বছর যা করেছে তার ওপর ভিত্তি করেই সেই সূচকটি তারা তৈরি করেছে। আপনি যদি ২০০১ থেকে ২০০৬ অর্থাৎ বিএনপি সরকার গঠন করার পরে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যখন ক্ষমতা হ্যান্ডওভার করে দিল, আপনি যদি সেই সংস্থা টিএইবি নামক সেই সংস্থাটার রিপোর্টই যদি আপনি দেখেন তাহলে দেখবেন পর্যায়ক্রমিকভাবে, এটি কিন্তু আমার কথা না, এটি তাদের পরিসংখ্যানের কথা- পর্যায়ক্রমিকভাবে কিন্তু নেমে এসেছে।

চাঁদাবাজি, দখলের মতো নানা অভিযোগের বিষয়ে বিবিসি বাংলা তারেক রহমানকে প্রশ্ন করে ৫ আগস্টের পরে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে চাঁদাবাজি বা দখলের মতো নানা অভিযোগ এসেছে। আপনাদের দল থেকে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা ঠিক, আবার একই সাথে এটাও ঠিক যে এই অভিযোগগুলো কিন্তু বারবার আসছে। তো এটা থামানো যাচ্ছে না কেন?

উত্তরে তারেক রহমান বলেন, এর মধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন যে, প্রায় ৭০০০-এর মতো আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এই ৭০০০-এ সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সাথে জড়িত নয়। এর মধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সাথে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এ রকম যখন অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে আমরা বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি। যেমন আমি দুই-একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। যেমন- ধরেন দুই ভাই। কোনো একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পত্তি সহায় সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। এক ভাই বিগত যে স্বৈরাচার পলাতক স্বৈরাচার তাদের কারো সাথে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক।

তার ফলে সে সেই স্বৈরাচারের যে দোসর যার সাথে এই এক ভাইয়ের সম্পর্ক, সে তার ইনফ্লুয়েন্সটি ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তিও জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন ৫ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না। তো অন্য যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি। সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে। এখন এক্সিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিনভাবে বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে সেই ভাই বিএনপি করে। বিএনপির কোনো একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক। চাপিয়ে দিল অভিযোগ তুলে দিল অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এ রকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি।

দীর্ঘদিনের জোট সঙ্গী জামায়াতের বিষয়ে তারেক রহমানের প্রতি বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে বিএনপির নেতাদের অনেক সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আপনার মনোভাবটা কী আসলে? উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বীকৃত যে নিয়ম, আইন-কানুন আছে, এগুলোর ভেতরে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করে অবশ্যই করতে পারে। বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কাজেই বিষয়টি আমরা এভাবেই দেখতে চাই। দেশের যে আইন কানুন আছে তার ভিতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, অবশ্যই সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। এবং আমরা তো চাই সবাই রাজনীতি করুক। বহুদলীয় রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি।

জামায়াত নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ২০২৪ সালে স্বৈরাচার যেই হত্যাগুলো করেছে দেশ স্বাধীনের পরে যখন তারা সরকার গঠন করেছিল ক্ষমতায় ছিল তখনো যেসব লুট তারা করেছে, খুন-গুম তারা করেছে। বিগত ১৭ বছর গুম খুন যারা করেছে, এর জবাব যে রকম তাদেরকেই দিতে হবে, ঠিক একইভাবে ’৭১ সালে কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের কোনো বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দেবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারব না। আমারটা আমি দিতে পারব। অন্যেরটা তো আমি দিতে পারব না।

জুলাই গণভুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আপনার আপনাদের বা বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, আমি ১৭ বছর যাবত প্রবাসজীবনে আছি। ওয়ান ইলেভেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যেই শারীরিক নির্যাতন আমার ওপরে হয়েছিল, তার পরে চিকিৎসার জন্য আমি এই দেশে আসি। আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম, ছোট ভাইকে। আমি যখন এই দেশে আসি, আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল।