ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

লুনার অন্দরমহলে হতাশা আনন্দে ভাসছে হুমায়ুন বলয়

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৫, ১২:০৫ এএম

দিন শেষে কে পাচ্ছেন সিলেট-২ সংসদীয় আসনে বিএনপির টিকিট? নিখোঁজ এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা নাকি তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির?Ñ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পুরো সিলেটে শুরু হয়েছে আলোচনা। হিসাব মেলাতে ব্যস্ত নির্বাচনি এলাকার ভোটাররা। গত রোববার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘হুমায়ুন কবির, সিলেটে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন’Ñ এমন মন্তব্য করার পর নতুন করে শুরু হয়েছে আলোচনা। নির্বাচনি এলাকা এ তথ্যে তোলপাড়। বিশ্বনাথ ও ওসমানী নগর উপজেলায় এখন এটিই আলোচনার বিষয়Ñ টক অব দ্য সিলেট। 

ফখরুল অবশ্য বলেননি, হুমায়ুন কোন আসন থেকে প্রার্থী হচ্ছেন। তবে যেহেতু তিনি তার নিজের নির্বাচনি এলাকা থেকে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই সবাই সিলেট-২ আসনই ধরে নিচ্ছেন।

ইলিয়াস ভক্তরা এই আসনে মনেপ্রাণে চান ইলিয়াসপতœী লুনা প্রার্থী হয়ে আসুন। অন্তত একবার হলেও তিনি সংসদে গিয়ে এলাকার হয়ে কথা বলুন। তার মাঝেই এলাকাবাসী ইলিয়াসের প্রতিচ্ছবি দেখতে চান।যদিও সাধারণ ও দল নিরপেক্ষ ভোটাররা ভাবেন ভিন্ন কথা। এমনকি অতীতে যারা লুনার নানা কর্মকা-ে বিরক্ত দলের ভেতরের এমন মহল চান লুনা নয়, অন্য কেউ আসুক বিএনপির টিকিটে। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক জমিদারির ইতি টানা হোক। নেতৃত্ব তৈরি না করার মানসিক দৈন্য থেকে রাজনীতি ফিরে আসুক। সে জায়গায় তারা হুমায়ুন কবিরকে পছন্দ করছেন। তাকে এ আসনে স্বাগত জানিয়েছেন। 

হঠাৎ তুমুলভাবে আলোচনায় উঠে আসার পর এ নিয়ে বিশ্বনাথে লুনার অন্দরমহলে শুরু হয়েছে ক্ষোভ, বিরাজ করছে হতাশা। অপরদিকে হুমায়ুন কবির বলয়ে চলছে মিষ্টি বিতরণ। আনন্দে ভাসছেন তার পক্ষে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা। 

নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে একসময় সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনটি ছিল প্রাণবন্ত রাজনীতির কেন্দ্র। ইলিয়াস আলীর ‘গুমের’ পর স্বামীর অসমাপ্ত পথচলার দায়িত্ব নেন স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। স্বামীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি দ্রুত স্থানীয় বিএনপিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে তিনি বিএনপির সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। এতদিন তাকেই ভাবা হচ্ছিল বিএনপির একক প্রার্থী। ইলিয়াসবলয় ছাড়াও ইলিয়াস পরিবার নিশ্চিত ভেবে বসেছিল, এ আসনে বিএনপির টিকিট মানেই লুনা। লুনাও ছিলেন সংশয়হীন, নির্বিকার। তবে, গত এপ্রিলে তার স্বপ্নে চিড় ধরতে শুরু করে। বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির দেশে ফিরে বিশ্বনাথে এক সুধী সমাবেশে সিলেট-২ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করলে শুরু হয় নতুন রাজনৈতিক মেরূকরণ।

এরপর থেকে এতদিন বিষয়টি জল্পনা-কল্পনায় সীমাবদ্ধ থাকলেও, রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর সঙ্গে বৈঠককালে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুমায়ুন কবিরকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘হুমায়ুন সিলেট থেকে নির্বাচন করবেন।’ মহাসচিবের এমন বক্তব্য প্রকাশের পরই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় জোর আলোচনা। ধারণা করা হচ্ছে, সিলেট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন এবার হয়তো ভালোভাবেই তার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে।

বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সিলেট-২ আসনে, বিশেষ করে বিশ্বনাথে, শুরু হয়েছে নানামুখী প্রতিক্রিয়া। একদিকে হুমায়ুন কবিরের অনুসারীরা বিষয়টিকে দলের ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনার সমর্থকেরা মনে করছেন, স্বামীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার রক্ষায় এ আসনে লুনার বিকল্প নেই।

বিষয়টি আলোচনায় আসার পর ওইদিন রাতে হুমায়ূনের পক্ষে-বিপক্ষে বিশ্বনাথের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা যায়। কেউ লিখেছেন, ‘জল্পনার অবসান হলো, সিলেট-২ আসনে আমাদের নেতা মনোনয়ন পেয়েছেন।’ আবার কেউ কেউ লিখেছেন, মহাসচিব কোনো নির্দিষ্ট আসনের কথা স্পষ্টভাবে বলেননি। এ বক্তব্য স্থানীয় পর্যায়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে, অনেকে বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

বিশ্বনাথের বাজারের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, সিলেট-২ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে বিএনপি কোনো ভুল করলে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে। 

বিশ্বনাথের সিনিয়র সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম জুবায়ের বলেন, রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এই আসনটি দেশজুড়ে আলোচিত একটি আসন। নির্বাচনের পূর্বে এখনো অনেক নাটকীয়তা হতে পারে। আমরা মনে করছি, এই আসনে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। এমনও হতে পারে, এখানে এককভাবে বিএনপির কাউকে মনোনয়ন না দিয়ে জোটের কাউকে আসনটি দেওয়া হতে পারে। 

বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) গৌছ আলী বলেন, একটা রিউমার ছড়ানো হচ্ছে সিলেট-২ আসন নিয়ে। আমাদের মহাসচিব স্পেসিফিক কোনো আসনের কথা বলেননি। তবে আমরা মনে করছি, তিনি হয়তো সিলেট-৪ আসনের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সুহেল আহমদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ূন কবিরকে নিয়ে আমাদের দলের মহাসচিবের মুখ থেকে এ ধরনের কথা শোনা মানেই নিশ্চিত হওয়া যে, সিলেট-২ আসনে ধানের শীষের কান্ডারি হুমায়ূন কবিরই। আমরা সবাই আনন্দিত। হুমায়ূন কবির সিলেট-২ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হলে পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন বলেই আমরা প্রত্যাশা করছি।