২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবি আদায়ে টানা তিন দিন আন্দোলনে রয়েছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। তারপরও দাবি পূরণে কোনো আশ্বাস মেলেনি। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার মধ্যে দাবি না মানলে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যুমনায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এরপরও দাবি আদায় না হলে আমরণ অনশনে বসার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষকরা পূর্বঘোষিত শহিদ মিনার থেকে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি শুরু করেন। তবে হাইকোর্টের কাছাকাছি যেতেই সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে শিক্ষকদের আটকে দেয় পুলিশ। সেখানেই সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। এ অবস্থান কর্মসূচি থেকে অনশনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। এ সময় এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ‘আজ (গতকাল মঙ্গলবার) আমরা এখানে (হাইকোর্টের সামনে) অবস্থান করব, আগামীকাল বেলা ১১টার মধ্যে যদি আমাদের দাবি না মানেন, আমরা শাহবাগে অবস্থান নেব। তারপরও যদি দাবি না মানা হয়, আমরা যমুনায় যাব। এরপরও দাবি পূরণ না হলে আমরা আমরণ অনশনে বসব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আর পিছু হটার সুযোগ নেই। কারণ, আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সরকারকে আমাদের দাবি মানতেই হবেÑ এটি এখন বাস্তবায়ন না করার সুযোগ নেই।
বিকেল ৪টায় শহিদ মিনার থেকে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সাড়ে ৪টার দিকে পদযাত্রাটি হাইকোর্টের মাজার গেইটের সামনে পৌঁছলে পুলিশ তা আটকে দেয়। পরে সেখানেই বসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষকরা। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিচ্ছিলেন। অধিকাংশ শিক্ষকের মাথায় ‘২০ শতাংশ বাড়িভাড়া’ লিখিত ফিতা বাঁধা ছিল। শত শত শিক্ষক এ সময় স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম শহিদ মিনারে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে এবং প্রজ্ঞাপন জারির আশ্বাসে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
এর আগে গত রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এর মধ্যে দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক থেকে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। একই সঙ্গে লাঠিপেটা করা হয় শিক্ষকদের। এতে কয়েকজন শিক্ষক গুরুতর আহত হন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবে ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকেরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা অন্তত ২ হাজার বা ৩ হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তাঁরা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও মে মাস থেকে তারা বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন