জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আদেশ জারিসহ কয়েকটি দাবি পূরণ হলেই জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সনদে স্বাক্ষর করবে। ইতিমধ্যে সরকার বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে একটি আদেশ প্রস্তুত করছে।
গতকাল শনিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি জোটবদ্ধ ভোটে যাচ্ছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আক্তার বলেন, “আমরা এখনো নিজেদের স্বতন্ত্র ধরে রেখে কলেবর বাড়ানোর মতো কাজ করছি। যদি জাতীয় স্বার্থে দেশের প্রয়োজনে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা ‘ওপেন’ রয়েছি। তবে এখনো কোনো দলের সঙ্গে সুনিশ্চিতভাবে আলোচনা করিনি।”
এর আগে এদিন সকাল ১০টা থেকে তারা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আখতার বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির বিষয়ে একমত হওয়া সত্ত্বেও তা কীভাবে অর্জিত হবে, কখন থেকে কার্যকর হবে, তা ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে খোলাসা করা হয়নি। আইনি ভিত্তি পরিষ্কার না করেই সরকার স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি বাস্তবায়ন ছাড়াই জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়, তাহলে আমরা যতটুকু অর্জন করতে চেয়েছিলাম, তা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। আমরা জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে মূল বিষয় হিসেবে দেখি না, এটিকে একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবেই দেখি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জনগণের কাছে স্পষ্ট বার্তা উপস্থাপন করবে।’
আখতার আরও বলেন, ‘জুলাই সনদে আমাদের যতটুকু অর্জন, সেটি বাস্তবায়ন করতে চাইলে বাস্তবায়নের পথরেখা পরিষ্কার করতে হবে। আমরা কমিশনের কাছে আমাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছি।’
দাবিগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া ও বিষয়বস্তু জাতির কাছে উপস্থাপন করতে হবে। এই জুলাই সনদ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এটি জারি করবেন। সামনের নির্বাচিত সংসদকে কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার দিয়ে এটিকে একটি সংস্কারকৃত সংবিধান-২০২৬ ঘোষণা করতে হবে।’
আখতার বলেন, ‘আমাদের দাবির বিপরীতে কমিশন জানিয়েছে, তারা বাস্তবায়নের আদেশ প্রস্তুত করছে। তবে আদেশের বিষয়ে এখনই কোনো টেক্সট বা কনটেন্ট উপস্থাপন করতে তারা অপারগতা প্রকাশ করেছে। তবে কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, আমরা তাকে অগ্রগতি হিসেবে দেখছি।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘কোনো দলের চাপে পড়ে জুলাই সনদ যেন জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো কাগুজে দলিলে পরিণত না হয়, আমরা তা আশা করছি। তারা খসড়া প্রণয়ন করে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবে বলেও আশা করি।’
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা প্রক্রিয়ার সঙ্গে এনসিপি দৃঢ়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে মন্তব্য করে আখতার বলেন, ‘আমরাই সংস্কারের আলোচনাকে মূলধারায় রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। সংস্কার ও বিচার এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার যে ম্যান্ডেট অন্তর্বর্তী সরকারের রয়েছে, তা থেকে শুধু নির্বাচনের দিকে ধাবিত হয়ে যেন সংস্কার ও বিচার দূরীভূত না হয়, সে বিষয়ে আমাদের দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছি।’ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া চূড়ান্ত করে এনসিপির সঙ্গে শেয়ার করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, “এখনো নিজেদের স্বতন্ত্র ধরে রেখে কলেবর বাড়ানোর মতো কাজ করছি। যদি জাতীয় স্বার্থে দেশের প্রয়োজনে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা ‘ওপেন’ রয়েছি। তবে এখনো কোনো দলের সঙ্গে সুনিশ্চিতভাবে আলোচনা করিনি।”
তিনি আরও বলেন, ‘জোট একধরনের বিষয়, সনদ বাস্তবায়ন আরেক ধরনের বিষয়। সনদ বাস্তবায়নকে আমরা নির্বাচনে (আসন) ভাগাভাগির অংশ হিসেবে দেখতে প্রস্তুত নই। সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই আমরা নির্বাচনি জোটের বিষয়ে প্রস্তুত হতে পারব।’

