বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:২৩ এএম

রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

স্কুলের মাটিতে দখলের দেয়াল

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:২৩ এএম

স্কুলের মাটিতে দখলের দেয়াল

  • ঢাকার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ছাড়া বাকি জমি বেদখল
  • বিদ্যালয়ের জমি ব্যক্তি, খাস, সরকার কিংবা অধিদপ্তরের নামে রেকর্ডভুক্ত
  • ঢাকা জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫১টি, ঢাকা মহানগরে এই সংখ্যা ৩৪২
  • ঢাকায় প্রাক-প্রাথমিক ও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩০, যাদের মধ্যে সরকারিতে পড়ে মাত্র ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২১ জন
  • বেদখলের হিসাব নেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে
  • শিক্ষার পরিবেশ না থাকায় কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র তেজগাঁও থানাধীন পূর্ব রাজাবাজারের রোটারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এই স্কুল একসময় ছিল ওই অঞ্চলের শিশু শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসাস্থল। স্কুলটির ছিল ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ জমির ওপর সুন্দর একটি ক্যাম্পাস। স্কুলের সামনে ছিল সবুজ আঙিনা, বড় একটি খেলার মাঠ। সে সবই এখন অতীত। সেই মাঠের ওপর কুনজর পড়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের স্থানীয় অনুসারীদের। ২০১৫ সালে তারা মাঠটি দখলে নিয়ে নির্মাণ করেন দ্বিতলবিশিষ্ট আসাদুজ্জামান খান পাঠাগার। তার আগেই নিজেদের দখলে নেন এ জায়গা।

দখল করে নিজ নামে গড়ে তোলা পাঠাগারটির সভাপতিও ছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই সময় পাঠাগারের আড়ালে ভবনটিতে চলত মূলত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। ক্ষমতার পালাবাদলে পাঠাগার ভবনটির দখল এখন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে। পাঠাগারটির নাম বদলে তারা করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমের নামে ‘শহিদ ওয়াসিম স্মৃতি পাঠাগার’। বর্তমানে পাঠাগারটির সভাপতি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও স্থানীয় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে মাত্র ৯ শতাংশ জমির ওপর স্কুলটির চারতলা একটি ভবন ছাড়া আর কোনো জমি তাদের দখলে নেই। এই পাঠাগার ছাড়াও ওয়াসা কিছু জমি দখল করে পানির পাম্প বসিয়েছে। স্কুলটির চারদিকে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ ভবন তৈরি হওয়ায় বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় দিনের বেলায় অন্ধকার নেমে আসে। এ সময় বন্ধ থাকে পাঠদান।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমাদের স্কুলে কোনো মাঠ নেই। আমরা খেলাধুলা করতে পারি না। এ ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকলে ক্লাসগুলোর অন্ধকার হয়ে পড়ে। তখন আমাদের ক্লাস বন্ধ থাকে। 

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ইমনা সুলতানাও বললেন একই কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব জমি দখল হয়ে যাওয়ায় নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। যেমন জমির অভাবে আমাদের স্কুলের বাথরুমের পানি নিষ্কাশনের জায়গা নেই। ২২৮ শিক্ষার্থীর খেলাধুলারও কোনো জায়গা নেই। দখল হয়ে যাওয়া জমিটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১১ সাল থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা আর উদ্ধার হয়নি।

স্কুলের জমি দখল করে পাঠাগার নির্মাণ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘পাঠাগারটি স্কুলের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের আমলে পাঠাগারের নামে এটি স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ইরানের টর্চার সেল ছিল। জুলাই অভ্যুত্থানের পর স্কুলের দাতা সদস্যের পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে ওয়াসিম স্মৃতি পাঠাগার করেছেন। যেহেতু জমিটি স্কুলের, স্কুল চাইলেই ফেরত দেওয়া হবে।’ তবে তিনি পাঠাগারের সভাপতি নন বলে দাবি করে বলেন, ‘এটা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেহেতু টাকা-পায়সা, বইপত্র লাগেÑ তাই স্থানীয়রা আমাকে আহ্বায়ক বানিয়েছিলেন।’

একই অবস্থা মোহাম্মদপুরের টাউন হলের পাশে অবস্থিত শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও। সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, বিহারি ক্যাম্পের পেছনে ঘিঞ্জি পরিবেশে অবস্থিত এই বিদ্যালয়। ৩৬ শতাংশ জমি নিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও মাত্র ছয় শতাংশ জায়গা বিদ্যালয়টির ভবন ছাড়া বাকি ৩০ শতাংশ দখল করে ক্যাম্পের বাসিন্দারা তৈরি করেছেন একাধিক আবাসিক ভবন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সামনে দোকানপাট আর বিহারি ক্যাম্পের স্থানীয়রা গৃহস্থালির নানা কাজ করে থাকেন। ফলে দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে।

এই স্কুলে বর্তমানে ১০৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন, যাদের অধিকাংশই ক্যাম্পের বাসিন্দা। বিদ্যালয়টির শিক্ষকেরা বলেন, বিদ্যালয়টির চারদিকে ভবন তৈরি হওয়ায় আলো-বাতাস আসে না। এ ছাড়া স্থানীয়রা স্কুলের আঙিনা অপরিষ্কার করে রাখায় দমবন্ধ অবস্থায় থাকতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, স্থানীয় কয়েকজন বখাটের নেতৃত্বে স্কুলের আঙিনা ও ছাদে সন্ধ্যার পর বসে মাদকের আসর। এমনকি আমরা যাতে স্কুলের ছাদে যেতে না পারি, সে জন্য তারা আরেক ভবন দিয়ে এসে ছাদ আটকে দিয়েছে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবনের বাসিন্দারা ওপর থেকে স্কুলের আঙিনায় ময়লা ছুড়ে ফেলে। তাদের অনেক বোঝালেও কোনো কাজ হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুন নাহার বলেন, ‘একটা স্কুলের যে পরিবেশ থাকতে হয়, তা এখানে নেই। স্কুলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য মাঠ তো দূরের কথা, পা ফেলার মতো স্কুল ভবনের বাইরে কোনো জায়গা নেই। ভালো পরিবেশ না থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। বিহারি ক্যাম্পের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসে না। এ ছাড়া এনজিও পরিচালিত নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্যাম্পের শিশুদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে, ফলে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে।’

শুধু এ দুই বিদ্যালয় নয়; রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই একই অবস্থা। মূল ভবন ছাড়া বিদ্যালয়ের বাকি জমি বেদখল হয়ে গেছে। এসব জায়গায় তৈরি হয়েছে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ওয়াসার পাম্প, বাজার, ছিন্নমূল মানুষের আবাস, দোকান-হোটেল, রাস্তা, ধর্মীয় স্থাপনা কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ দূরে থাক, স্কুল ভবনের বাইরে পা ফেলার জন্য একটুকু জমিও নেই। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। এর বাইরেও রাজধানী ও বাইরের অধিকাংশ বিদ্যালয়ের জমি প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা শিক্ষা অধিদপ্তরের নামে নেই। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিভাগের ৪ হাজার ৭৭০টি বিদ্যালয়ের জমি প্রাথমিকের নামে নেই। জমিগুলো এখনো বিএস রেকর্ডে ব্যক্তির নামে, কোনোটি খাস, কোনোটি সরকারের অন্য মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তরের নামে রেকর্ডভুক্ত। এই রেকর্ড না থাকার কারণে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেক জমি বেদখল থাকলেও রেকর্ড না থাকার কারণে তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী রোডের বরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ এক ভবনে চলছে পাঠদান। ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ জমির মধ্যে পুরোনো ভবন আর সামনের কয়েক গজ ফাঁকা জায়গা ছাড়া কিছুই তাদের দখলে নেই। বিদ্যালয়ের পেছন দিকে জমি দখল করে কলোনি আর কয়েকটি দোকান বানানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাইয়ার সুলতানা বলেন, ‘বিদ্যালয় ঘেঁষে জমি দখল করে কলোনি বানানোর কারণে আমরা নিচতলা ও দোতলার জানালা খুলতে পারি না। এ ছাড়া অফিসরুম ঘেঁষে কলোনির বাসিন্দাদের বাথরুমের কারণে দুর্গন্ধে অফিসরুমেও বসা যায় না। এ ছাড়া কলোনির লোকজন নিয়মিত উচ্চ স্বরে ঝগড়া-বিবাদ করায় ঠিকমতো ক্লাস নেওয়াও সম্ভব হয় না।’

বিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক জানান, স্কুলের জমি স্কুলের নামে রেকর্ডভুক্ত নয়। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দখল হওয়া জমি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। বছর দুয়েক আগে বিদ্যালয়ের নতুন একটি ভবন তৈরির অনুমোদন পেলেও জমিসংকটের কারণে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে কলোনিতে গিয়ে দখলদার আবুল কালামকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার মোবাইল নম্বর চাইলেও দিতে পারেননি কলোনির কেউ।

মগবাজারের মীরবাগের রমনা রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব শুধুই সাইনবোর্ডে। বিদ্যালয়ের জন্য কেনা পাঁচ কাঠা জমিতে গড়ে উঠেছে পুরোদস্তুর কাঁচাবাজার। শেরেবাংলা নগরের শেরেবাংলা শিশু শিক্ষা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভেতরে বড় অংশ দেয়াল দিয়ে দখল করে রেখেছে শেরেবাংলা নগর কর্মচারী কল্যাণ সমিতি। এই দেয়ালের ভেতরে রয়েছে সমিতির একটি ভবন এবং সামনের দিকে কয়েকটি দোকান। মতিঝিলের আইডিয়াল বালক ও বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জমি দখল করে ওয়াসা তৈরি করেছে পানির পাম্প। মিরপুর চম্পা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল করে তৈরি হয়েছে বহুতল ভবন।

সব বেদখলের হিসাব নেই ডিপিওর কাছে

রাজধানীসহ আশপাশের থানাগুলোর অধিকাংশ বিদ্যালয়ের জমি বেদখল হলেও সেই তথ্য নেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে। ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, তাদের কাছে ঢাকা জেলার ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখলের তথ্য আছে। অথচ এর বাইরে আরও ২০টি বিদ্যালয় সরেজমিনে দখলের তথ্য পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। সূত্র বলছে, ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোয় স্কুলের জমি দখলের পরিমাণ কিছুটা কম। আবাসিকের বাইরে প্রায় ৯৫ শতাংশ বিদ্যালয়ের জমি কম-বেশি বেদখল রয়েছে।

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, কোতয়ালী থানার ছোট কাটরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ জমি দখল করে শাহ আব্দুল হামিদ কালান্দার বালিকা বিদ্যালয় ও ভাঙারির দোকান, সুরিটোলা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৬ বাই ৩৬ ফুট জমিতে পানির পাম্প, এফকেএম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ দশমিক ২০ শতাংশ জমিতে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ শতাংশ জমিদে শহীদ নবী উচ্চ বিদ্যালয়, ইসলামী ইউপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দশমিক ৪০৮ শতাংশ জমিতে মাছের বাজার, ডেমরার ধার্মিকপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯ শতাংশ জমিতে পুকুর, কামারগোপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ শতাংশ জমিতে সিটি করপোরেশনের রাস্তা, মাতুয়াইল ২ নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ শতাংশ জমিতে ওয়াসার পানির পাম্প, সারুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১.৬৫ শতাংশ জমিতে ওয়াসার পাম্প, মাা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ শতাংশ জমিতে মা-া উচ্চ বিদ্যালয়ের দোতলা ও তিনতলা ভবন, ব্রাহ্মণচিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩ শতাংশ জমিতে খেলার মাঠ ও কথিত দাতা সদস্যের দখল, নাসিরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫ শতাংশ জমিতে হাই স্কুল, মতিঝিলের দক্ষিণ বাসাবো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে  ৩ শতাংশ জমিতে পার্শ্ববর্তী মসজিদ ও এক বাড়িমালিকের দখল, মতিঝিলের মাদারটেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯ শতাংশ জমি মসজিদ, ওয়াসা ও বাজার কমিটির দখলে, মতিঝিল আইডিয়াল মুসলিম বালক ও বালিকা বিদ্যালয় ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ জমিতে ওয়াসার পাম্প, খিলগাঁও স্টাফ কোয়ার্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ জমিতে উচ্চ বিদ্যালয়, রমনার দিলকুশা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ দশমিক ১১৯ শতাংশ জমিতে রাস্তা ও উচ্চ বিদ্যালয়, গুলশানের চালাবন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিতে হাজী কফিল উদ্দিন মুন্সি আদর্শ বিদ্যালয়, মেরাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ শতাংশ জমিতে পানির পাম্প, মিরপুরের খলিলুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০ শতাংশ জমিতে বস্তি, ইসলামিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ জমিতে পানির পাম্প, চম্পা পারুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিতে বহুল ভবন, আব্দুল মান্নান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২ কাঠা জমিতে শিয়া সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, গাবতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ শতাংশ জমিতে দোকান, ধানমন্ডি ১ নং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিতে পানির পাম্প বসানো হয়েছে।

ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯৫১। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৪২। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জানিয়েছেন, জমি দখলের বিষয়টি তারা থানা শিক্ষা অফিসে জানিয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু তা উদ্ধারে শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো উদ্যোগই নেই।

মতিঝিলের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমরা জমি উদ্ধারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারি। মারামারি করে জমি উদ্ধারের সক্ষমতা আমাদের নেই। আর যারা জমি দখল করেন, তারা স্থানীয় প্রভাবশালী। দল পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দখলদারও পরির্বতন হয়েছেন।

দখল-দূষণে নেই শিক্ষার পরিবেশ, কমছে শিক্ষার্থী

সরজমিনে ঢাকার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বিদ্যালয়ই জরাজীর্ণ ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নেই কোনো খেলার মাঠ। এমনকি অনেক বিদ্যালয়ের জমিও বেদখল হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিতে বাজার, কলোনি কিংবা অন্যান্য স্থাপনা তৈরি হওয়ায় দুর্গন্ধ আর ঘিঞ্জি পরিবেশের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করে, তাদের প্রায় সবাই নি¤œবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।

সরেজমিন একাধিক স্কুল ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম এখন যেন শুধু শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ তথা সৃজনশীল কার্যক্রমের কোনো সুযোগ এখানে প্রায় নেই বললেই চলে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, ঢাকায় প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৯০৭। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে ৪৫ হাজার ৪১৮ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৭২৩। তাদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে মাত্র ২ লাখ ৯০ হাজার ৬০৩ জন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে এখানে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২০ দশমিক ৬ শতাংশ পড়াশোনা করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নেই বিধায় ভালো শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও দিনে দিনে কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। মোহাম্মদপুরের বরাবো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩২২। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০২৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪২ জনে। রোটারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২৮, যা ২০২০ সালে ছিল ৪০০ জনের মতো। একই অবস্থা প্রায় সব বিদ্যালয়ের।

একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান জানান, এসব স্কুলে যেসব শিক্ষার্থী আসে, তারা মূলত নি¤œবিত্ত পরিবারের। তাদের বেশির ভাগই ভাসমান জনগোষ্ঠী। এলাকা পরিবর্তনের কারনে কিছু শিক্ষার্থী কমে। তবে বড় কারণ হলোÑ খেলার মাঠ, বিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং জরাজীর্ণ অবস্থা; ফলে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চান না।

একাধিক শিক্ষক জানান, ঢাকার প্রাইমারি স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষকই উচ্চশিক্ষিত। তাদের নানা প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়। তার পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি স্কুল-কিন্ডারগার্টেনগুলোয় শিক্ষার্থী বেশি। এর মূল কারণ হলো বিদ্যালয়ের পরিবেশ।

তবে যেসব স্কুলের পরিবেশ ভালো, সেসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব একটা কমে না। লালমাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির সুন্দর ভবন, সামনে খেলার মাঠ। সেই মাঠে রয়েছে নানা খেলাধুলার সরঞ্জামও। বিরতিতে খেলাধুলা করে শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা শারমিন সুলতানা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব একটা কমে না। ২০২০ সালে ছিল ৩০০ শিক্ষার্থী এখন তা ২৮১ জন। এখানে মধ্যবিত্ত থেকে নি¤œবিত্তÑ সব শ্রেণির শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।’

শিক্ষার্থী না কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্কুলের পরিবেশ সুন্দর। খেলার মাঠ ও নানা খেলাধুলার সরঞ্জাম আছে। সামনেও লালমাটিয়া হাউজিংয়ের খেলার মাঠ রয়েছে। এ ছাড়া গোটা বিদ্যালয় বাউন্ডারির আওতায় থাকায় অভিভাবকেরা এখানে তাদের সন্তানদের ভর্তি করতে নিরাপদ বোধ করেন।’

বাধাগ্রস্ত শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ

খেলার মাঠের অভাবে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা তাদের মধ্যে স্থূলতা, স্থবিরতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করছে। মাঠের অভাবে অনেক শিশু ডিভাইসের প্রতি আসক্ত এবং খেলাধুলা ও বিনোদনের অভাবে অনৈতিক কাজেও জড়িয়ে পড়ছে।

মোহাম্মদপুরের বরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাছলিমা আক্তার ও জান্নাত বেগম জানায়, ‘আমরা এখানে একটি বস্তিতে থাকি। সেখানে খেলাধুলার পরিবেশ নেই। স্কুলেও খেলার মাঠ নেই। সারাক্ষণ ক্লাসরুমে বসে থাকতে হয়। তাই স্কুলে আসতে ভালো লাগে না।’

একই কথা বলেন মোহাম্মদপুরের নুরজাহান রোডের পারভিন আক্তার নামের এক অভিভাবক। তার মেয়ে বরাবো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। পারভিন পেশায় গৃহকর্মী। তিনি বলেন, ‘স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, এখন বাসায় বাসায় কাজ করি। গরিব মানুষ, মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়ানোর সামর্থ্য নেই। তাই প্রাইমারি স্কুলে দিয়েছি। কিন্তু স্কুলের যে পরিবেশ, তাতে মেয়ে স্কুলে যেতে চায় না। সেখানে গিয়ে যদি খেলাধুলার সুযোগ থাকত, তাহলে হয়তো যেতে চাইত।

বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক বলেন, খেলাধুলা এবং বিনোদন শিশু-কিশোরদের জন্য শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ঢাকার বাইরের শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ পেলেও ঢাকার শিশুরা অধিকাংশই থাকে চার দেয়ালে বন্দি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘একসময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তে কিন্ডারগার্টেন নামক প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকের বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকায় কিন্ডারগার্টেন চালু হওয়ার পর থেকেই সরকারি বিদ্যালয়গুলো মানুষের নজর ও স্মৃতির বাইরে চলে গেছে। অধিকাংশ মানুষ এখন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার সন্তানদের পাঠাতে চায় না। এর কারণ হলো, বিদ্যালয়ের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও ভবন। এমন জায়গায় মানুষ যেতে চায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, ঢাকার নগর উন্নয়নকে যদি সঠিক পথে নিতে হয়, তাহলে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সময়োপযোগী করতে হবে। শুধু খেলার মাঠের কারণেই শত শত শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমছে। শিক্ষা হলো দেহ, মন ও সামাজিক বোধের সুসম্মিলিত উন্নয়ন। যদি শিশুকে পড়াশোনা করিয়ে বিকশিত করতে চাই, তাহলে দেহ পেছনে পড়ে থাকবে। সরকারের উচিত মাঠগুলোর দখল পুনরুদ্ধার, ভবন সুসজ্জিত এবং শিক্ষার পরিবেশ মানসম্পন্ন করা।’ 

ঢাকার ৪ হাজার ৭৭০ বিদ্যালয়ের জমি অন্যের নামে

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে জানা যায়, সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অথবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নামে বিএস রেকর্ডভুক্ত করার বিধান রয়েছে। তার পরও দেশের ১১ হাজার ৮৮১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি এখনো বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৪ হাজার ৭৭০টি বিদ্যালয়ের জমি রয়েছে অন্যের নামে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব বিদ্যালয়ের জমি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি, সেসব জমিতে আইনত সরকার বা ওই কর্তৃপক্ষের মালিকানা নেই। এসব জমি অতি দ্রুত রেকর্ডভুক্ত করা প্রয়োজন। তা না হলে এসব জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সারা দেশের ১১ হাজার ৮৮১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি এখনো বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি। এমন বিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, মোট ৪ হাজার ৭৭০টি। এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা সবচেয়ে কম খুলনা বিভাগে ২৬৮টি। এ ছাড়া বরিশাল বিভাগের ১ হাজার ২৫৯টি, রাজশাহী বিভাগের ৫৮২টি, রংপুর বিভাগের ৮৪৯টি, ময়মনসিংহ বিভাগের ১ হাজার ৪৪৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগের ২ হাজার ৩৬৯টি, সিলেট বিভাগের ৩৩৯টি বিদ্যালয়ের জমি এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা যা বলছেন

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘জমি দখল করে কারা? স্থানীয় ক্ষমতাসীন ও বড় বড় দলের নেতারা। এই অপকর্ম করার পর সরকার দেখেও না দেখার ভান করে। তারা একটা কাগজ দেয়Ñ দখল হয়ে গেছে, উদ্ধার করেন। কিন্তু কোনো পরিবর্তন নেই। সরকার পরিবর্তন হলেও দখলের চিত্র পরিবর্তন হয়নি। অনেক স্কুলের জমি দখল হয়ে যাওয়ার কারণে নতুন অবকাঠামো তৈরি করা যাচ্ছে না। তাই দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জমি উদ্ধারে সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দখলদারদের কাছ থেকে জমি উদ্ধার করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্কুলগুলোর কোনো মা-বাপ নেই। এগুলো অনাথ। এসব বিদ্যালয়ের বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশন কোনো দায়িত্ব নেয় না। ফলে যে যেখানে পারছে জমি দখল করে রেখেছে। আবার এসব স্কুলে নি¤œবিত্ত শ্রেণির শিশুরা পড়াশোনা করতে যায়। ফলে তাদের পক্ষে কথা বলারও কেউ নেই। বিদ্যালয়গুলোর দুরবস্থা খুবই দুঃখজনক। দায়িত্ব¡ নিয়েই বিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে সরকারের ভাবা উচিত।’

ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসে বিদ্যালয়ের জমি দেখভাল করেন এমন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দখল উদ্ধারে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটি আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছিল। তারাও ব্যর্থ হয়েছে। এই জমি উদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক কমিটমেন্ট দরকার। না হলে উদ্ধার হওয়া সম্ভব নয়।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখল প্রসঙ্গে জানতে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (প্রশাসন) মো. আমিরুল ইসলামকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।

ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরুল হাসান বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। বেদখল হওয়া জমি উদ্ধারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শামীমা সুলতানা বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বেদখল জমি উদ্ধারে চিঠি দিলে জেলা প্রশাসনের খাসজমি উদ্ধার কমিটির জমি উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!