ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

পল্লবীতে যুবদল নেতা কিবরিয়া হত্যা জড়িত ‘ফোর স্টার’ সন্ত্রাসী গ্রুপ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০১:১৪ এএম

রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া হত্যা মামলায় দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তারকৃতরা মিরপুরকেন্দ্রিক গড়ে উঠা সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘ফোর স্টার’-এর সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তাররা হলেন- হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মো. মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ও মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজন।

র‌্যাব বলছে, পল্লবীর রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকা-। হত্যাকা-টি সুপরিকল্পিত এবং বাস্তবায়নে বড় অংকের অর্থের লেনদেন হয়েছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডও জড়িত থাকতে পারে। চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারিতে সাপোর্ট না দেওয়া এবং বিগত সময়ে যাদের সঙ্গে সখ্য ছিল রাজনৈতিক মেরূকরণের পরে সেই সখ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন কিবরিয়া। এসব কারণেই কিবরিয়াকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। 

গতকাল বুধবার বিকেলে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম। তিনি বলেন, ‘গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় পল্লবী থানাধীন বিক্রমপুর স্যানিটারি ও হার্ডওয়্যার দোকানে ৬ জন অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে বুকে ও পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে অতর্কিত গুলি করে পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করে। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময় স্থানীয় জনতার ওপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করে এবং এতে একজন রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়। পরবর্তীতে ছাত্র-জনতা তাদের ধাওয়া দিয়ে জনি ভূইয়া নামে এক সন্ত্রাসীকে আটক করে পল্লবী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।’

ঘটনার পরপরই র‌্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং আনুষঙ্গিক তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ নভেম্বর রাতে সাভার থানাধীন বিরোলিয়া এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মো. মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল এবং টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন মাজার বস্তি এলাকা থেকে হত্যাকা-ের সন্দিন্ধ ও ১৮টি মামলার শীর্ষ ও পলাতক সন্ত্রাসী মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকা-টি সংঘটিত হয়েছে। এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকা- যাতে বড় অংকের অর্থের লেনদেন হয়। আসামিরা পেশাদার হত্যাকারী এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। পাতা সোহেলের নামে একাধিক হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ পল্লবী থানায় মোট ৮টি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার দুজন মিরপুরকেন্দ্রিক গড়ে উঠা ফোর স্টার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লে. কর্নেল মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘ইব্রাহিম ও মামুন নিয়ন্ত্রিত যেসব এলাকা রয়েছে সেসব এলাকায় এই ফোর স্টার গ্রুপের সদস্যরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। এ ছাড়া এ ঘটনায় সোহেল ওরফে পাতা সোহেল অর্থ সরবরাহ করেছিলেন। তবে তিনি কীভাবে অর্থ পেয়েছেন কিংবা কার কাছ থেকে পেয়েছেন সেটা এখনো পরিষ্কার না।’

হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, ‘মিরপুর এলাকাকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি-মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং দ্বিতীয়টি হলো রাজনৈতিক কোন্দল। নিহত গোলাম কিবরিয়া একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব এবং মিরপুর এলাকায় রাজনৈতিকভাবে তিনি খুব সক্রিয় ছিলেন। এর আগে গোলাম কিবরিয়ার যাদের সঙ্গে সখ্য ছিল রাজনৈতিক মেরূকরণের পরে সেই সখ্যের বিরুদ্ধে তিনি কাজ করছিলেন। বিশেষ করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারে নিহত গোলাম কিবরিয়ার সাপোর্ট ছিল না। হয়তো এ কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।’

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আন্ডারওয়ার্ল্ড জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রসী মামুনের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কি না- তা অনুসন্ধান চলছে। তবে হত্যাকাণ্ডের আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশন থাকতে পারে। জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করলে এই হত্যার রহস্য উন্মোচিত হবে।’