বহুল কাক্সিক্ষত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি একদিনেই হবে জাতীয় নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট। তপশিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই তপশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করল। প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোও এই তপশিলকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের পাশাপাশি নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তপশিলকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য নতুন অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তপশিল ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘তপশিলের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশ একটি কাক্সিক্ষত গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। যে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এ দেশের জনগণ জীবন বাজি রেখে লড়াই-সংগ্রাম করেছে।’
মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্রপ্রিয় সব দল অংশ নেবে। একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং সেই নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে।’
তপশিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে সংশয় থাকলেও তপশিল ঘোষণা আমাদের আশ^স্ত করেছে।’
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা এখন ইসির প্রধান দায়িত্ব।’ এটি নিশ্চিত করা ছাড়া নির্বাচন অর্থবহ করার সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অতীতে নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে জামায়াতের এই নেতা অভিযোগ করেন, ‘অতীতে দেখা গেছে নির্বাচনের আগে অনেক বিষয়ে আশ^স্ত করা হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায়নি। আশা করব আগামী নির্বাচনে এই ধারার পরিবর্তন হবে।’
তবে তপশিলকে স্বাগত জানালেও ইসির নিরপেক্ষতা-সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আগামী ১২ ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ একটি সুন্দর নির্বাচন দেখতে যাচ্ছে। আমরা একটি কথা বলব, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন নিয়ে সদিচ্ছা রয়েছে কিন্তু নিরপেক্ষতা এবং সক্ষমতার অভাব রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান যে পরিস্থিতি রয়েছে, লটারির মাধ্যমে এএসপি, ডিসি নিয়োগ করা হচ্ছে। সেটা জাতির সামনে সুস্পষ্ট করা হয় নাই। কাদের নিয়োগ করা হচ্ছেÑ এটা অসচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে করা হচ্ছে এবং সরকার গণভোটের যে প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলো রেখেছিল, সে বিষয়ে আমরা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। আমরা এ পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাইনি। নির্বাচনে আমরা যাচ্ছি। আমরা এই নির্বাচনে পুরো দেশবাসীকে বলব, কোনো দলীয় গু-া বাহিনী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যারা দুর্নীতি, মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, তারা ভোট কেন্দ্রগুলো দখল না করুক, যেন জনগণের ভোটকেন্দ্র জনগণই পাহারা দেই।’
নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার আমরা যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দেখতে পাচ্ছি না। বর্তমান যে নির্বাচন কমিশন রয়েছে, তাদের পুনর্গঠনের কথা কিন্তু আমরা বলে আসছি। তারা অনেক উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসী ভোটাধিকারের বিষয়ে, আমরা সেগুলোকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু তাদের কর্মের পরিচয় দেখাতে হবে।’
ঘোষিত তপশিলকে প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানায় ইসলামী আন্দোলনও। দলের যুগ্মমহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু, অবাধ, ক্রেডিবল ও উৎসবমুখর নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশীদার আটটি দলের দাবিকে উপেক্ষা করে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের যে চ্যালেঞ্জ তারা নিয়েছেন সেই চ্যালেঞ্জে তারা সফল হন; সেই প্রত্যাশা আমরা করি।’
এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এই তপশিলকে স্বাগত জানিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন