নানা উদ্যোগ চালিয়েও দেশে প্লেনের টিকিট কেলেঙ্কারি থামানো যাচ্ছে না। এবার অভিনব কায়দায় এয়ার টিকিট বিক্রি করে বিদেশে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে সায়মন ওভারসিজ লিমিটেড নামে একটি ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির টিকিট কেলেঙ্কারির বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় তদন্ত শুরু করেছে। ক্রস বর্ডারে (দেশের বাইরে) এয়ার টিকিট বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহর বিরুদ্ধে ১৬ কোটি টাকা পাচারের তথ্য মিলেছে বলে জানা গেছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া অভিযোগ থেকে দেখা যায়, সায়মন ওভারসিজ নামের ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় নিজেদের কোম্পানির নামে থাকা গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (জিডিএস) আইডি ব্যবহার করে বিদেশে এজেন্টদের মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রি করে আসছিল। অবৈধভাবে এই টিকিট বিক্রির টাকা বৈধ পথে দেশে আনা সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানটি ক্রস বর্ডারে এয়ার টিকিট বিক্রি করে অভিনব কায়দায় অর্থ পাচারে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর সায়মন ওভারসিজ লিমিটেডের কাছে ক্রস বর্ডার (দেশের বাইরে) এয়ার টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহর কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সায়মন ওভারসিজ ট্রাভেল এজেন্সি কর্তৃক ক্রস বর্ডার (দেশের বাইরে) টিকিট বিক্রির একটি স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত সায়মন ওভারসিজ বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) ডিডিএস আইডি ব্যবহার করে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওই সব দেশের ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে মোট ১ হাজার ৮৯৪টি এয়ার টিকিট বিক্রি করেছে। এই টিকিটের আনুমানিক দাম ১৬ কোটি টাকা। টিকিটগুলো ব্যবহার করে যাত্রীরা ওই সব দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন কিংবা তৃতীয় দেশে ভ্রমণ করেছেন। যাত্রীরা ওই সব দেশে টিকিটের টাকা প্রদান করলেও তা বাংলাদেশে ফেরত আসেনি বলে অভিযোগ এসেছে।
একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের (জিডিএস) মাধ্যমে ট্রাভেল এজেন্টরা এয়ার টিকিট বিক্রি করে থাকেন। এ জন্য নিজস্ব আইডি থাকে, যা বাংলাদেশ থেকেই পরিচালনা করতে হয়। মূলত ওই আইডির মাধ্যমে এয়ার টিকিট বিক্রি করে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) মাধ্যমে এয়ারলাইন্সগুলোকে অর্থ পরিশোধ করতে হয়।
এয়ারলাইন্সগুলো এভাবে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে নিজ দেশে অর্থ নেয়, যার হিসাব রিজার্ভে থাকে। কিন্তু সায়মন ওভারসিজ অবৈধভাবে নিজেদের আইডি বিভিন্ন দেশের ট্রাভেল এজেন্সিকে দিয়েছে। ওই এজেন্সিগুলো থেকে বিদেশে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সেই বিক্রির টাকা আর দেশে আসছে না। দেশের রিজার্ভেও যুক্ত হচ্ছে না। এভাবেই প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পাচার করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রাভেল এজেন্টদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) মহাসচিব ছিলেন আসফিয়া জান্নাত সালেহ। মূলত তিনি ওই পদের প্রভাব খাটিয়ে ট্রাভেল খাতে বড় ধরনের অনিয়ম করেন। চলতি বছরের আগস্টে সংগঠনটির সভাপতি ও মহাসচিবের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের একাধিক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আটাব কমিটি বাতিল করে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর থেকেই আসফিয়ার বিরুদ্ধে এয়ার টিকিট কেলেঙ্কারির একাধিক অভিযোগ উঠতে থাকে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সায়মন ওভারসিজ নামের ট্রাভেল এজেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফিয়া জান্নাত সালেহ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাদের কাছে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। এ ছাড়া অভিযোগের বিপরীতে যত ডকুমেন্ট রয়েছে, সবগুলোই আমরা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। অভিযোগটি মিথ্যা ও বানোয়াট।’ তিনি দাবি করেন, ‘যে অভিযোগটি করেছে, সে নিজেও টিকিট সিন্ডিকেটের সদস্য। আমি (আসফিয়া) নিজে আটাবের মহাসচিব ছিলাম। তখন এই টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমরা কাজ করেছিলাম। তখন টিকিট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ব্যক্তি ওই মামলার প্রধান আসামি। তার গ্রুপও আসামি।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন