শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জনাব আলী, রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

সাজিদের ফিরে আসা অলৌকিক-বিস্ময়কর

জনাব আলী, রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫, ১১:৫৮ পিএম

সাজিদের ফিরে আসা  অলৌকিক-বিস্ময়কর

  • ৩৫ ঘণ্টা পর ৪৫ ফুট গভীর থেকে উদ্ধার দুই বছরের শিশু সাজিদ
  • রাতভর প্রার্থনা আর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান

দীর্ঘ ৩৫ ঘণ্টার অপেক্ষা শেষে ৪৫ ফুট গভীর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছরের শিশু সাজিদকে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান। একই তথ্য জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। উদ্ধারের পর শিশু সাজিদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে গত বুধবার দুপুর ১টার দিকে বাড়ির পাশে বিলে মায়ের সঙ্গে যাওয়ার সময় পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যায় দুই বছরের শিশু সাজিদ। স্থানীয়রা প্রথমে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে ভেন্টিলেশন দেয়। পরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আরও দুটি ইউনিট এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। স্থানীয়রা বলছেন, মাটির এত গভীরে দুই বছরের শিশুর ৩৫ ঘণ্টা বেঁচে থাকা অলৌকিক এবং বিস্ময়কর।

শিশুটিকে উদ্ধারে গত বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট। মূল গর্তের পাশ থেকে কেটে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য গতকাল সন্ধ্যা থেকে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে খননকাজ শুরু করা হয়। অবশেষে ৪৫ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।

যদিও এর আগে শিশু সাজিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে গভীর নলকূপে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে জীবিত বা মৃত উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘শিশুটি যে গর্তে পড়েছে সেটার প্রস্থ সরু হওয়ায় এবং মাটি এঁটেল-দোআঁশ মাটি হওয়ায় শিশুটিকে ওই গর্ত থেকে বের করা সম্ভব না। এ জন্য পাশাপাশি সমান্তরাল গর্ত করে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ প্রতি ১০ ফুট অন্তর অন্তর গর্ত খুঁড়ে শিশুটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। আরও গভীর খনন করার জন্য এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি দূরে সরিয়ে ব্যালান্স করা হয়। যাতে ওপর থেকে মাটি নিচে না পড়ে।’

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম বলেছিলেন, শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে, তার পাশেই এক্সকাভেটর দিয়ে ৩৫ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। রেসকিউ টিম সেই খননকৃত গর্ত থেকে নলকূপের গর্তে সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে। সুড়ঙ্গ করার পরও সেখানে শিশুটিকে না পেলে আর খনন করা সম্ভব ছিল না। তখন ওই গর্ত থেকেই অন্য কৌশলে উদ্ধার করতে হতো। কারণ নলকূপটির গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ ফুটÑ শিশুটি ভেতরে যেকোনো জায়গায় আটকে থাকতে পারে।’

গত বুধবার দুপুর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল গর্তের পাশে খনন করা সুড়ঙ্গ পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুটিকে তুলে আনে। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের চৌকসদল অভিযানে অংশ নেয়।

গর্তটি খনন করেছিলেন জমির মালিক কছির উদ্দিন :

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে সেচের জন্য সেমিডিপ নলকূপ বসাতে গিয়ে এ গর্তটি খনন করেছিলেন জমির মালিক কছির উদ্দিন। কিন্তু পানি না পাওয়ায় কাজটি আর এগোয়নি। পরে খোলা অবস্থাতেই বিপজ্জনক এ গর্তটি রয়ে যায়। খড়-কুটায় ঢাকা থাকায় গর্তটি হয়ে ওঠে মারণফাঁদ।

ছেলের জন্য অপেক্ষায় মা-বাবার আহাজারি

ছেলের জন্য রাতভর অপেক্ষা :

সাজিদের মা রুনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের প্রচ- জ্বর ছিল। দাদার সঙ্গে হাটখোলায় যেতে চেয়েছিল। কিন্তু জ্বর থাকায় দাদা নিয়ে যাননি। সকালে আমি ওষুধ এনে তাকে খাইয়ে দিয়েছি। কে জানত এমন সর্বনাশ অপেক্ষা করছে! আমার অসুস্থ ছেলেটা এখন মাটির নিচে।’ আহাজারি করতে করতে মা রুনা খাতুন বলেন, ‘আল্লাহ আমার ছাওয়ালকে (ছেলে) কত কষ্ট করে মানুষ করেছি। আল্লাহ তুমি কাইড়া (কেড়ে) নিয়ো না। আল্লাহ আমি কষ্ট করে মানুষ (বড়) করব। তুমি কাইড়া (কেড়ে) নিয়ো না আল্লাহ। আল্লাহ তুমি আমার ছাওয়ালকে (ছেলে) আমার বুকে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ।’

শিশু সাজিদের বাবা মোহাম্মদ রাকিব ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। বুধবার দুপুরে খবর পাওয়ার পরপরই তিনি রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন। রাতে গ্রামে পৌঁছে দেখেন তার শিশুপুত্রকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের জোর তৎপরতা চলছে। ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। রাকিব বলেন, ‘ছেলে গর্তে পড়ার বেশ পরে আমি খবর পেয়েছি। আসতে আসতে তো অনেক সময় পার হয়ে গেল। এখনো আমার ছেলেকে দেখতে পেলাম না। বেঁচে আছে কি না কিছুই জানি না। এখন আল্লাহর ওপরই ভরসা। ছেলেকে আল্লাহর জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।’

সাজিদের জন্য নির্ঘুম রাত, এলাকাবাসীর প্রার্থনা :

শিশু সাজিদকে জীবিত ফিরে পেতে এক নির্ঘুম রাত কেটেছে উদ্ধারকর্মী, এলাকাবাসী, গণমাধ্যমকর্মীসহ স্থানীয় জনতার। সঙ্গে স্বজন ও স্থানীয়দের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। বুধবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, রাত গড়িয়ে ভোরÑ পরদিন বৃহস্পতিবার। এভাবে চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এরপরও উদ্ধার করা যায়নি শিশুটিকে। বৃহস্পতিবার সকাল হতে না হতে উদ্ধার অভিযানস্থলে শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় জমান। তাদের সরাতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!