পোড়া ক্ষত বা বার্ন একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা, যা তাপ, রাসায়নিক, বিদ্যুৎ বা বিকিরণের সংস্পর্শে আসার কারণে হতে পারে। পোড়া ক্ষতের তীব্রতা ও গভীরতার উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা ও প্রতিকার। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে পোড়া ক্ষত সংক্রমিত হতে পারে এবং স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পোড়া ক্ষতের প্রকারভেদ। পোড়া ক্ষত প্রধানত তিন ধরনের হয়:
প্রথম ডিগ্রি বার্ন: ত্বকের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে লালভাব, ফোলা এবং হালকা ব্যথা।
দ্বিতীয় ডিগ্রি বার্ন: ত্বকের উপরের স্তর এবং নিচের ডার্মিস স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফোসকা, তীব্র ব্যথা এবং লালভাব দেখা দেয়।
তৃতীয় ডিগ্রি বার্ন: ত্বকের সব স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং টিস্যু মারা যেতে পারে। ক্ষতস্থান কালো, সাদা বা বাদামি রঙের হতে পারে এবং ব্যথা অনুভূত নাও হতে পারে।
পোড়া ক্ষতের কারণ
পোড়া ক্ষত বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন:
তাপ: আগুন, গরম পানি, বাষ্প বা গরম বস্তুর সংস্পর্শ।
রাসায়নিক: এসিড, ক্ষার বা অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শ।
বিদ্যুৎ: বৈদ্যুতিক শক বা বিদ্যুৎ প্রবাহ।
বিকিরণ: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি বা রেডিওথেরাপির কারণে।
পোড়া ক্ষতের চিকিৎসা
পোড়া ক্ষতের চিকিৎসা নির্ভর করে এর তীব্রতা ও গভীরতার উপর। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হলো:
প্রাথমিক চিকিৎসা: পোড়া স্থান ঠান্ডা পানির নিচে ধুয়ে নিন (১০-১৫ মিনিট)। ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করুন। ফোসকা ফাটাবেন না, এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ক্ষতস্থানে আলত করে মলম বা জেল প্রয়োগ করুন।
মেডিকেল চিকিৎসা: ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ। সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম বা ওষুধ। বিশেষ ড্রেসিং বা স্কিন গ্রাফ্টিং (গভীর ক্ষতের জন্য)।
প্লাস্টিক সার্জারি: তৃতীয় ডিগ্রি বার্ন বা জটিল ক্ষতের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে। টিস্যু রিকনস্ট্রাকশন বা স্কিন গ্রাফ্টিং এর মাধ্যমে ক্ষতস্থান পুনর্গঠন করা।
পোড়া ক্ষতের প্রতিকার ও যত্ন:
পোড়া ক্ষতের সঠিক যত্ন নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
- ক্ষতস্থান পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ড্রেসিং পরিবর্তন করুন।
- সংক্রমণ এড়াতে হাত ধুয়ে ক্ষত স্পর্শ করুন।
- পুষ্টিকর খাবার খান, বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিন সি এবং জিংক সমৃদ্ধ খাবার।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ক্ষত নিরাময়কে ধীর করে দেয়।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- পোড়া ক্ষত বড় বা গভীর হলে
- ক্ষতস্থানে পুঁজ, গন্ধ বা জ্বর (সংক্রমণের লক্ষণ)
- তীব্র ব্যথা বা ফোলা
- মুখ, হাত, পা বা জেনিটাল এলাকায়
পোড়া ক্ষত
পোড়া ক্ষতের সঠিক চিকিৎসা ও যতœ নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে, প্রতিরোধই সর্বোত্তম পন্থা। পোড়া ক্ষত এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং নিরাপদে কাজ করুন।
ডা. সৈয়দা আসমিমা শশী
লেফটেন্যান্ট কর্নেল
এমবিবিএস, এফসিপিএস (সার্জারি), এমএস (প্লাস্টিক সার্জারি), সিনিয়র কনসালটেন্ট
এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রাম।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন