ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কুমারখালিসংলগ্ন ‘মরানদী’ নামে পরিচিত বিশাল জলাশয়টি উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে জলাশয়টি পৌর এলাকার রুনু চৌধুরী এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে লিজ রয়েছে। প্রায় ৩০০ একর আয়তনের এ নদীর মধ্যে ১১৯.৭৪ একর তাদের নামে লিজ দেওয়া হলেও বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমে পুরো নদীটি দখলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে একাধিকবার মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা।
জানা যায়, সুগন্ধা নদীতে চর জমে যাওয়ার কারণে এর দক্ষিণ প্রান্তে জলাশয়টির সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নদীর বেড়িবাঁধ বাড়িয়ে কৃষিজমি দখল করে এটিকে লিজ গ্রহণকারীরা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। এ কারণে স্থানীয়দের দাবিÍ লিজ বাতিল করে প্রভাবশালীদের হাত থেকে জলাশয়টি উদ্ধার করে উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
জলাশয়ের পাশের বাসিন্দারা জানান, তারা বাপ-দাদার আমল থেকে এ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এখন জলাশয়টি লিজ দেওয়ায় সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের দাবি, মরানদীর সঙ্গে সংযুক্ত সব খালের বাঁধ কেটে দিয়ে সুগন্ধা নদীর সঙ্গে প্রাকৃতিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হোক এবং সরকার যেন জলাশয়টি নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যথাযথ সংস্কার করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ হাওলাদার বলেন, ‘এ মরানদীর আশপাশের মানুষের মিঠাপানির একমাত্র উৎস জলাশয়টি। কিন্তু মাছ চাষের কারণে খাবারে পানির মান নষ্ট হচ্ছে। সরকারকে অবশ্যই ভেবে দেখা উচিত শতাধিক পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। কয়েকজনকে সুবিধা দিতে গিয়ে সরকার এত মানুষকে কষ্টে ফেলতে পারে না।’
আরেক বাসিন্দা জুয়েল চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে কা-পাশা মৌজার জমি তাদের লিজ দেওয়া হলেও তারা ফরাসিনা মৌজার জমিও দখলে রেখেছে। যার মধ্যে আমার নিজের জমিও রয়েছে। বর্তমানে তাদের দখলে আনুমানিক ৩০০ একর জমি রয়েছে। এর আগ পর্যন্ত কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি, কারণ এটি সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর ঘনিষ্ঠ মুস্তাক খানের দখলে ছিল। তবে ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর তিনি এখানে আর আসেননি। তাই আমরা এখন আমাদের জমি ফিরে পেতে চাই এবং মরানদী উন্মুক্ত করে জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবি জানাই।’
সমাজকর্মী তাইফুর রহমান বলেন, ‘মরানদীকে লিজ না দিয়ে সরকার চাইলে বিকল্প উপায়ে রাজস্ব আয় করতে পারে। শীত মৌসুমে এখানে অনেক অতিথি পাখি আসে। স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুললে সরকারের রাজস্বও বাড়বে এবং এলাকাবাসীও উপকৃত হবে।’
লিজ অংশীদার রাজীব চৌধুরী জানান, ‘আমরা বৈধভাবেই জলাশয়টি লিজ নিয়েছি। প্রতি ১০ বছর পরপর নির্ধারিত ফি দিয়ে লিজ নবায়ন করা হয়। সরকার এখান থেকে রাজস্ব আয় করছে। আমাদের দখলে থাকা জমির মধ্যে অন্য কোনো মৌজার জমি নেই। তবে সরকার চাইলে জলাশয়টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে, আমাদের আপত্তি নেই।’
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জলাশয়টি অতীতে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লিজ নিয়েছিলেন, এখনো তারাই ভোগদখলে রয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই, কারণ লিজের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কেউ অবৈধভাবে জলাশয় দখল করে থাকলে, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নাহিদ ইসলাম জানান, ‘বর্তমানে আমাদের জলাশয় ব্যবস্থাপনার আওতাধীন কোনো লিজ কার্যক্রম চালু নেই। আগের যেসব জলাশয় লিজ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ পর্যায়ে। লিজের মেয়াদ শেষ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’