খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের উত্তর গড়ের আবাদ ও পূর্বগজালিয়া এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এখন একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। নৈরনদীর ওপর নির্মিত এই সাঁকোটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হন। বর্ষায় কোমর সমান পানি ওঠায় এই সাঁকো এখন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁদখালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে নৈরনদীর ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে এ অঞ্চলের শত শত মানুষ চলাচল করেন। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সাঁকোটির কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রোগী, কৃষক ও কর্মজীবী মানুষদের প্রতিদিনই এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই এলাকায় কোনো সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার্থীদের পূর্বগজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতেই হয়, যার একমাত্র পথ এই বাঁশের সাঁকো।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিনিয়তই সাঁকোতে দুর্ঘটনা ঘটছে। কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলে প্রচুর পণ্য উৎপাদন হলেও যাতায়াত সমস্যার কারণে সেগুলো সময়মতো বাজারে পৌঁছানো যায় না। এতে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মোটরভ্যান, নসিমন, করিমনচালকরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেকে যানবাহন রাস্তার মাথায় বা অন্যের বাড়িতে রেখে সাঁকো পার হয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। শুকনা মৌসুমে কেউ কেউ বাদুড়িয়া ব্রিজ বা চৌমুহনী বাজার ঘুরে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে চলাচল করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে গ্রামবাসী নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জোয়াদুর রসুল বাবুর আমলে সরকারি বরাদ্দে স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস ঢালী কিছু পাকা পিলার ও কাঠ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই সেটিও ভেঙে যায়। পরে আবারও বাঁশ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করা হয়, যা বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা একটি স্থায়ী সেতুর দাবি জানিয়ে এলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। বর্ষা এলেই দুর্ভোগ চরমে ওঠে। তাই পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অবিলম্বে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।