আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে রয়েছে ৫৫ লাখ ৯১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্য টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা শতাংশের হিসাবে কমিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটে এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর এটি ছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর প্রথম বাজেট। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ চলতি অর্থবছরের জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি হয়েছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এই বাস্তবতায় আগামী অর্থবছরের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এই হিসাবে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
এই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৪.৫-এর বেশি হবে না। আবার আগামী অর্থবছরের বাজেটে যদি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৫ ধরা হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়বে। বিপরীতে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হলে ২০০ বেসিস পয়েন্ট কমাতে হবে। যা কোনোভাবেই বাস্তবায়নযোগ্য না।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০ লাখ ১৩ হাজার ২১ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটেও একই লক্ষ্য রাখা হয়। আর প্রকৃত জিডিপিতেও একই হার দেখানো হয়। এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা, যা সংশোধন করে করা হয়েছিল ৪৪ লাখ ১৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। তবে প্রকৃত জিডিপি হয়েছিল ৫০ লাখ ৭০২ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে সরকারের ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অবশ্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস থেকে বেশি। যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত ২২ এপ্রিল পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর এক দিন পর (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই পূর্বাভাস দিল সংস্থাটি। আর কয়েক দিন আগে আরেক দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছিল, বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আইএমএফ জিডিপির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আরও কমিয়ে দিল।
এর আগে বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সাম্প্রতিক বন্যার কারণে এই অর্থবছর শেষে দেশের প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৪ শতাংশ। এ ছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) গত সেপ্টেম্বর মাসে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
জানা গেছে, মূল্যস্ফীতির হারও সংশোধন করা হচ্ছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বর্তমান অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৯ শতাংশের নিচে রাখা হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্তের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণের মাত্রা কত হওয়া উচিত, তা উল্লেখ ছিল। আইএমএফ বলেছিল, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ এখন যা আছে, তা ২০২৬ সালের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ কমাতে হবে। এর পর থেকে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি নেতিবাচক হয়ে যায়। সে জন্য সরকারকে এখন সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ানোর কৌশল নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করতে পারে ৬.৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরও ছিল সাড়ে ৬ শতাংশ। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৩.৬২ শতাংশ। মোট আয় ধরা হবে ৫ লাখ ৬৪ কোটি টাকা।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন