আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট ইজারা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি)। হাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) তথা সাবেক সিপিটিইউ’তে প্রকাশিত না হওয়ায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
বিপিপিএ’তে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ইস্যুতে কার্যত কর্মকর্তা এবং প্রশাসক দ্বিমুখী অবস্থানে রয়েছেন। গাবতলীর পশুর হাটের সূত্রে কর্মকর্তারা চাইছেন বিপিপিএ ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে। এমনটা হলে হাট ইজারার বদলে ‘খাস’ আদায়ের দিকে যেতে হবে ডিএনসিসিকে। অন্যদিকে ইজারা পদ্ধতিতেই হাট বসবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
গত ২৯ এপ্রিল নিজেদের এলাকায় ১০টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডিএনসিসি। প্রথম পর্যায়ে এই দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ১৮ মে। এরপর দরপত্র উন্মোচনে দেখা যায়, পাঁচটি হাটে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম মূল্যের দরপত্র জমা পড়ে। এগুলো হলো ভাটারা সুতিভোলা (সরকারি মূল্য ৩ কোটি ৭০ লাখ), উত্তরা দিয়াবাড়ী (৮ কোটি ৯০ লাখ), বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের আফতাব নগর (১ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার), মোহাম্মদপুর বছিলা (২ কোটি ২০ লাখ) এবং ভাটুলিয়া সাবেক আলী (৮১ লাখ ২০ হাজার)। তবে এর মধ্যে আফতাব নগরে পশুর অস্থায়ী হাট বসাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকায় কেউ দরপত্র জমা দেয়নি। অন্যদিকে চারটি হাটের জন্য সরকারি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যের দরপত্র জমা পড়েছে। এগুলো হলোÑ মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং (১ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৮৬), তেজগাঁওস্থ ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (৬৪ লাখ ২ হাজার ৪০০), খিলক্ষেতের মস্তুল (১ কোটি ৭ হাজার ৫০০) এবং একই এলাকার বনরূপা আবাসিক এলাকার হাট (১ কোটি ৮০ লাখ)।
তবে হাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি বিপিপিএ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জটিলতা। গত এপ্রিলে একই কারণে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ গাবতলী পশুর হাটের ইজারা বাতিল করে শুধু ‘খাস’ আদায়ের সিদ্ধান্ত দেন। অভিযোগ উঠেছে, তার ঘনিষ্ঠ একটি পক্ষ খাস আদায়ের নামে হাসিল সংগ্রহ করছে। বিষয়টিকে ‘রেফারেন্স’ (সূত্র) হিসেবে নিয়ে কোরবানির পশুর হাট ইজারা বিজ্ঞপ্তিও বিপিপিএ ওয়েবসাইটে প্রকাশের মত ডিএনসিসির একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার। তবে এমনটা না হওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
গত ১৮ মে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শফিকুর আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ডিএনসিসিকে নির্দেশনাপূর্বক এক চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে ‘সরকারি হাট-বাজারসমূহের ব্যবস্থাপনা, ইজারা পদ্ধতি ও উহা হতে প্রাপ্ত আয় বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালা, ২০১১’ অনুযায়ী, ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বলা হয়। এই নীতিমালা বিশ্লেষণে দেখা যায়, অনুচ্ছেদ ২.৭ অনুযায়ী হাট ইজারার দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে হাটবাজারের ইজারামূল্য ১ কোটি টাকার বেশি হলে ইজারা বিজ্ঞপ্তি সিপিটিইউ (বর্তমান বিপিপিএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। তবে সিপিটিইউ’র ক্ষেত্রে অস্থায়ী এবং স্থায়ী হাট পৃথকীকরণ করে কিছু বলা নেই ওই নীতিমালায়।
এমন প্রেক্ষাপটে, বিপিপিএ ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়া ব্যতীত হাট ইজারা না দেওয়ার পক্ষে মত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে পরিচয় গোপনের শর্তে এক কর্মকর্তা জানান যে, ‘গাবতলী হাটের ক্ষেত্রে যে কারণ দেখিয়ে প্রশাসক হাট ইজারার বদলে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেই একই কারণ এখানেও প্রযোজ্য। তেজগাঁওয়ের হাটের সরকারি মূল্য ১ কোটি টাকার নিচে। তাই শুধু এই একটি হাট ছাড়া অন্য কোনো হাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি বিপিপিএ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত ইজারা দেওয়া যাবে না।’ আরেক কর্মকর্তা জানান, এত হাটে নিজস্ব লোকবল দিয়ে খাস আদায়ের সক্ষমতা ডিএনসিসির নেই। এদিকে ইজারা পেতে জমাকৃত দরপত্রের বিষয়ে আজ (মঙ্গলবার) মূল্যায়ন কমিটির সভা রয়েছে ডিএনসিসিতে।
সূত্র বলছে, গাবতলীর হাটের মতোই ইজারা পদ্ধতি বাতিল করে পছন্দের লোকদের দিয়ে খাস আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে ডিএনসিসির একটি মহলের। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডিএনসিসি প্রশাসক।
মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী হাট ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘সিপিটিইউতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত না হওয়ায় সরকারের কাছে নির্দেশনা চেয়েছিলাম। তারা (মন্ত্রণালয়) নির্দেশনা দিয়েছেন। মূল্যায়ন কমিটি সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন করবে। মূল্যায়ন কমিটি যে প্রতিবেদন দিবে, সেটা অনুমোদন করে দিব’। যে হাটগুলোতে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম দর জমা পড়েছে সেগুলোর বিষয়ে আগামী সপ্তাহে এক সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। আইনগতভাবে দরপত্র দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন যেভাবে অস্থায়ী হাট ইজারা দেওয়া হতো, সেভাবেই দেওয়া হবে। আইনগতভাবে যিনি পান, তাকেই দেওয়া হবে।’ তবে ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী সপ্তাহে হাট ইজারার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, এত অল্প সময়ে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন খুবই কঠিন হবে।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম মূল্যের দরপত্র জমা হলে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এক্ষেত্রে তেমনটা করা হবে কি না সেটা নির্ভর করছে মূল্যায়ন কমিটির সভার ওপর। আজ ডিএনসিসিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে এক সূত্রের মতে, এই সভায় প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ উপস্থিত থাকবেন না। এক্ষেত্রে বিলম্বিত হতে পারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হাট ইজারার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা না হলে সৃষ্টি হতে পারে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা। হাটকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে ডিএনসিসির পক্ষ থেকে দ্রুত হাট ইজারা সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত এক সূত্র নিশ্চিত করে রূপালী বাংলাদেশকে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, সেখানে হাট ইজারার বিজ্ঞপ্তি বিপিপিএ ওয়েবসাইটে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি। ফলে ডিএনসিসির ক্ষেত্রে একরকম এবং ডিএসসিসির ক্ষেত্রে ভিন্নরকম প্রক্রিয়া অবলম্বনের সূত্রপাত হয়েছে।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, “অস্থায়ী হাট ব্যবস্থাপনার কোনো উল্লেখ ওই নীতিমালায় নেই যে সিপিটিইউ’তে দিতে হবে। সর্বোচ্চ দরদাতা যারা, তাদেরকে ইজারা দিয়েছি”। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিটি সংস্থাকে আলাদা করে দেখার কথা উল্লেখ করে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, একেক জায়গার বাস্তবতা একেক রকম। সেখানে (ডিএসসিসি) তো ঢুকতে পারতেছে না। আমাদের বাস্তবতা একরকম। সবাইকে তো একভাবে ‘ট্রিট’ করা যাবে না। স্মার্ট ব্যবস্থাপনা হচ্ছে, একেক জনের সমস্যা একেকভাবে সমাধান করতে হবে। এগুলো কোনো বিষয় না। সমস্যা চিহ্নিত করে নাগরিকদের সমাধানে কাজ করতে পারছি কিনা, সেটা দেখার বিষয়”।

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                    -20251031020255.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন