রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

গাজা পরিস্থিতি

ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না থামছে না

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম

ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না থামছে না

গাজার মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহ। এই শহরের বাসিন্দা আকরাম বাসির। তার ছোট তিন সন্তান। ক্ষুধার যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে তারা। কিন্তু কিছু করার নেই ৩৯ বছর বয়সি এই ফিলিস্তিনি বাবার। কেবল ক্ষুধার্ত সন্তানদের বুকে জড়িয়ে ধরে আশ্বাসই দিতে পারেন। সন্তানদের বলেন, ‘যখন ইসরায়েলের অবরোধ শেষ হবে, তখন তোমরা যা খুশি তাই খেতে পারবে।’

মিডল ইস্ট আইকে আকরাম বাসির বলেন, ‘আমি কিছুই করতে পারছি না। শুধু মানসিকভাবে সান্ত¡না দিচ্ছিÑ ইনশাআল্লাহ, সব ঠিক হয়ে যাবে, খাবার আসবে। এর বাইরে আমাদের আর কিছু করার নেই।’ গাজার ২১ লাখ মানুষের মতো তার পরিবারও গত মার্চ মাস থেকে পূর্ণাঙ্গ অবরোধের মধ্যে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। বাসির বলেন, ‘আমার সন্তানদের অনেক কিছুই বদলে গেছে অনাহারের কারণে। ওরা ওজন হারাচ্ছে, অতিরিক্ত ঘুমাচ্ছে, কোনো কাজেই মনোযোগ দিতে পারছে না সারা দিন শুধু খাবারের কথা ভাবে। বিশেষ করে মিষ্টি। কখনো কখনো সামান্য কিছু খাবার পাই, তবে সেটিও পুষ্টিগুণহীন। ওদের পেট কখনোই ভরে না। খাবার খেয়েও ক্ষুধা মেটে না, সবাই ওজন হারিয়েছে। সামান্য পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি।’ এর পরও বাসির ভাবেনÑ যেভাবেই হোক, সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তবে তার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে। বাবা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। বাসির বলেন, ‘বাবা কয়েকবার মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। কিছুদিন আগে হাত ভেঙে গেছে। আমরা তাকে সারাক্ষণ নজরে রাখি। কিন্তু দুধ, ডিম বা পুষ্টিকর কিছু খেতে না পারায় তিনি সুস্থ হচ্ছেন না।’

গাজায় গত কয়েক সপ্তাহে অনাহারে মারা গেছে অন্তত ১১৩ জন, যাদের মধ্যে ৮১ জন শিশু। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২৮ হাজারের বেশি অপুষ্টির ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। 
গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসেম মুনীর আল-হিন্নাওয়ি গত এক মাসে মাত্র চার-পাঁচ দিন পর পর একবার রুটি খেতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাপ্তবয়স্করা কখনো কখনো এই অনাহার সহ্য করতে পারি, কিন্তু ছোট শিশুরা কীভাবে বুঝবে, তাদের ইচ্ছা করে না খাইয়ে রাখা হচ্ছে? তারা কীভাবে বুঝবে যে, আমরা বাবা-মায়েরা নই, কারা তাদের খাবার দিচ্ছে না?’ হিন্নাওয়ি বলেন, ‘শেখ রাদওয়ানে হাঁটার সময় দেখলাম এক নারী রাস্তায় হঠাৎ পড়ে গেলেন ক্ষুধায়। তাকে রাস্তার পাশে রাখা হয়। পরে এক বাসিন্দা এক চামচ চিনি এনে খাইয়ে তাকে একটু সুস্থ করেন। পাঁচবার খাবার বিতরণ কেন্দ্রে গেছি, প্রতিবার খালি হাতে ফিরেছি। ট্যাংক, ড্রোনের গুলির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনও দিন গেছে, টানা চার দিন কিছু না খেয়ে শুধু লবণপানি খেয়ে বেঁচে ছিলাম।’ হিন্নাওয়ি জানান, তার মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, মাত্র ২০ মিটার হাঁটলেও পড়ে যান তিনি। 

ফিলিস্তিনের গাজায় প্রতি তিনজনে একজন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছেন বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি ডব্লিউএফপি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। এক বিবৃতিতে ডব্লিউএফপি জানায়, ‘গাজায় পুষ্টিহীনতা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।’ অনাহার পরিস্থিতি চলতি সপ্তাহে আরও তীব্র হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত শুক্রবার অপুষ্টিতে গাজায় আরও ৯ জন মারা গেছে। এর মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর ভূখ-টিতে ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২২। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ক্ষুধা ও মানবিক সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীন মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার হামাসের সঙ্গে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। দুজনেই বলেছেন, হামাস কোনো চুক্তি চায় না, তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল এখন তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিকল্প পথ ভাবছে। এই লক্ষ্যগুলো হলো গাজা থেকে জিম্মিদের উদ্ধার এবং সেখানে হামাসের শাসনের অবসান ঘটানো।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, তার বিশ্বাস, হামাস নেতাদের এখন খুঁজে বের করে নির্মূল করা হবে। তিনি দাবি করেন, ‘হামাস আদতে কোনো চুক্তি করতে চায়নি। আমার মনে হয় তারা মরতে চায়। এবং এটা খুবই খারাপ। আর পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কাজটা শেষ করতেই হবে।’ তার ধারণা, সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর ইসরায়েল কী করবে তা নিয়ে আতঙ্কে আছে হামাস। ট্রাম্প গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। 

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত ধাপে জিম্মি মুক্তির অপেক্ষায় আছি। আর তারা (হামাস) জানে, সবশেষ বন্দিদের ছাড়া হলে এরপর কী হতে পারে। মূলত সে কারণেই তারা আসলে চুক্তি করতে চায়নি।’ যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার জন্য হামাসকেই দায়ী করেছেন ট্রাম্প। 

গাজায় আক্রমণকারী দখলদার স্থল বাহিনীর সাহায্যে এক দিনে গাজাজুড়ে শতাধিক স্থানে হামলা করেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো। গতকাল শনিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিবৃতির ঊদ্ধৃতি দিয়ে আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে দখলদার বাহিনীর ৩৬তম ডিভিশন ‘অতিরিক্ত লক্ষ্যবস্তুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ সম্প্রসারণ এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস’ করার জন্য কাজ করছে বলে দাবি করেছে।

অর্থাৎ, হামলা আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত হচ্ছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীরে যিশুখ্রিষ্টের জন্মস্থান বেথলেহেমে বসতি স্থাপনকারী ও ইসরায়েলি সৈন্যরা আক্রমণ শুরু করেছে। এ ছাড়া জেরিকোতেও একই ধরনের হামলার খবর পাওয়া গেছে। আল-জাজিরা জানিয়েছে, বসতি স্থাপনকারীরা গ্রামগুলোয় আক্রমণ চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের জমি, সম্পত্তি ও গবাদি পশু লুটপাট করেছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!