জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, বিচার ও সংস্কার ছাড়া জনগণ নির্বাচন গ্রহণ করবে না। পুলিশ জুলাই হত্যার দায় অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের ওপর যে দমন-পীড়ন হয়েছে, আমরা বাধ্য হয়েছিলাম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। আমাদের লড়াই ছিল ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র, ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপার এলাকায় দলটির এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পুরোনো সিস্টেমে, পুরোনো আইনে এই বাংলাদেশকে আর চলতে দেওয়া হবে না। অভ্যুত্থানের পর নানা শক্তি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা
বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান মানেই মুজিববাদী সংবিধান। দেশের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য সেই সংবিধানের সংস্কার প্রয়োজন, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক
শক্তি বাহাত্তরের সংবিধানকে রক্ষায় রাজপথে নামছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সক্রিয় থাকতে হবে।’
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘বানিয়াচংয়ে পুলিশ হত্যার দায় অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চলছে। আমরা ৩ আগস্ট এক দফার মাধ্যমেই স্পষ্ট করেছি, আমাদের লড়াই ছিল শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে, তার দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে। আমরা ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে বাধ্য হয়েছিলাম।’
চা-শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় চা-শ্রমিকেরা দৈনিক ৫৫০ টাকা ও ভারতে ৪৫০ টাকা মজুরি পেলেও বাংলাদেশে পান মাত্র ১৭০ টাকা। এই টাকায় একজন শ্রমিক কীভাবে দিনযাপন করবে? কীভাবে তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যয় বহন করবে? আমরা যে বাংলাদেশ চাই, সেই বাংলাদেশে একজন চা-শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরি ও অধিকার পাবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতিসত্তার অধিকারও নিশ্চিত করা হবে।’
এর আগে সকালে নাহিদ ইসলাম সিলেটে বীর শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শহীদের স্বজনেরা বিচার ও সংস্কারের দাবিতে তাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরেন বলে জানা যায়। মৌলভীবাজারে পথসভা শেষে এনসিপি নেতারা শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে রওনা দেন।
পথসভায় দলটির মৌলভীবাজার জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ফাহাদ আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী ও যুগ্ম সম্পাদক প্রীতম দাস প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মারুফ আল হামিদ, জাকারিয়া ইমনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জেলার ৭ উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যোগ দেন। সকাল থেকেই মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে মৌলভীবাজার শহর। এ সময় তারা ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ, মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’ স্লোগান নিয়ে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সমবেত হন।
আপনার মতামত লিখুন :