জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা এ সমাবেশে মওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চাই। মওলানা ভাসানীকে ইতিহাসে স্মরণ করা হয় না। ভাসানীর মতো মহান রাজনৈতিক পুরুষ, বাংলাদেশের স্থপতি থাকা সত্ত্বেও শুধু একজনকে জাতির পিতা ঘোষণা করা হয়েছে। গত ৫৪ বছরে একজন ব্যক্তিকে পূজা করা হয়েছে। কিন্তু ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতে পারতেন না।
বাংলাদেশে শুধু একজন জাতির পিতা নন, অনেক জাতির পিতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম মওলানা ভাসানী। মওলানা ভাসানী কৃষক ও শ্রমিকদের জন্য লড়াই করেছিলেন। তিনি গণমানুষের জন্য লড়াই করেছিলেন। আমরা মওলানা ভাসানীর সেই আদর্শকে ধারণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়।’ তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, মওলানা ভাসানী শুধু বাংলাদেশ নয়, উপমহাদেশের একজন রাজনৈতিক পুরুষ ছিলেন। ভাসানীর রাজনীতি শুরু হয়েছিল আসামে। সেই আসামে তিনি বাঙালি মুসলিম কৃষকদের অধিকার ও তাদের ভূমি অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। সেই লড়াই এখন পর্যন্ত আসামের বাঙালি মুসলমান ও হিন্দুদের লড়তে হয়। সেখানে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে পরিচিত হতে হয়। মওলানা ভাসানী প্রথম ব্যক্তি যিনি প্রথম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীদের বিদায় ঘোষণা করেছিলেন কাগমারী আন্দোলনের মাধ্যমে। মওলানা ভাসানী হচ্ছেন এমন রাজনৈতিক পুরুষ যিনি স্বাধীনতার পরে বলেছিলেন ‘আমার পিঞ্জির ভেঙেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়, দিল্লির গোলামী করার জন্য নয়।’
টাঙ্গাইলের শাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নামে জিআই পণ্যের স্বীকৃতির কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তাঁতশিল্পকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে, দেশের খাদ্য সয়ংগসম্পন্ন করতে আমরা কৃষকদের সংগঠিত করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রধান সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, প্রধান সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল), হাসনাত আব্দুল্লাহ, প্রধান সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানী, টাঙ্গাইল জেলার প্রধান সমন্বয়কারী মাসুদুর রহমান রাসেলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে তারা টাঙ্গাইল সার্কিট হাউসের সামনে থেকে পদযাত্রা নিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশস্থল শহিদ মিনার চত্বরে আসেন। গত সোমবার রাতে নাহিদ ইসলামসহ দলের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা টাঙ্গাইল সার্কিটসহ বিভিন্ন গেস্টহাউসে রাত্রীযাপন করেন। এর আগে তারা রাতে সন্তোষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধা ও জিয়ারত করেন।
এদিকে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সমাবেশস্থলসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করেন।