শনিবার, ০৯ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আফরোজা লুনা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

স্বামীর কথামতো ভোট দেন গাইবান্ধার নারীরা

আফরোজা লুনা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৫, ১২:৫৫ এএম

স্বামীর কথামতো ভোট দেন গাইবান্ধার নারীরা

ময়না, আফরোজা, জাহিমারা ভোটার হওয়ার পর স্বামীর বাড়িতে এসে কোনো দিন ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজ ইচ্ছা প্রয়োগ করতে পারেননি। তাদের কথা হচ্ছে, আমরা মেয়ে মানুষ, আমাদের অভিভাবক যা বলবেন তা-ই শুনতে হয়। সিল মারতে হয় স্বামীর পছন্দের সেই মার্কায়। নির্বাচনের সময় এমন চিত্রই দেখা যায় গাইবান্ধার গ্রাম ও চরাঞ্চলে। 

মাঠপর্যায়ে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন কথাই শোনা গেছে এলাকার নারীদের কাছ থেকে। গাইবান্ধার গ্রামাঞ্চলে নারী ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়া নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। অনেক ভোটার আছেন, তারা কোনো দিন নিজের ইচ্ছায় ভোট দিতে পারেননি। স্বামী, শ্বশুর আর নিকটতম স্বজনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা ভোট দিয়ে চলছেন। 

গাইবান্ধা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে মালিবাড়ি ইউনিয়নের নয়নসুখ গ্রাম। এই গ্রামের গৃহিণী ময়নাসহ শত শত নারীর কেউ মাঠে কাজ করেন, কেউ আবার স্বামী-শ্বশুরের সাথে গৃহস্থালির কাজ ছাড়াও ধান মাড়াই থেকে শুরু করে গবাদি পশুর যতœ করেন। ময়না বলেন, এ পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের ভোট ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং দুবার এমপি ভোটও দিয়েছেন স্কুলের সেন্টারে গিয়ে। তার পিতা বলেছিল, ওমুককে ভোট দিতে কিন্তু পারেননি। ভোট দিয়েছেন তার স্বামী ফুলমিয়ার কথা অনুযায়ী। তার কথা হলো, এখন স্বামীর বাড়িই নিজের বাড়ি, স্বামীর কথা না শুনলে পাপ হবে। তাই পিতার কথা না শুনে স্বামীর কথা অনুযায়ী ভোট দিয়েছি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলতেই বলেন, ‘ভোট দেব, তবে ছোলের বাপ যাকে ভোট দিতে বলবে তাকেই ভোট দেমো।’

এই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দুস সাত্তার। তার সাফ কথা, তার পরিবারের ৫ জন ভোটার আছে। তারা সবাই তার কথায় ওঠে-বসে। ৫ ভোটারের মধ্যে কে কোথায় ভোট দিবেন তা আমিই নির্ধারণ করব। আমার বউ আম্বিয়া খাতুনেরও একই কথা, তার স্বামী যা বলবে তা-ই শুনব। 

কামারজানির বারোবলদিয়া গ্রামের কোহিনুর বেগম বলেন, এর আগে ভোট নিয়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া হয়েছিল। স্বামী বলেন একটা আর আমি বলি আরেক মার্কা। এই নিয়ে দুজনের তর্কবিতর্কের কারণে ভোট সেন্টারে যাওয়া হয়নি। কোহিনুর পড়ালেখা জানেন অল্প। তাই নিজের স্বাধীনতায় ভোট দিতে চান। কিন্তু স্বামী সাত্তারের কথা, আমি যা বলব সেই মার্কায় ভোট দিতে হবে। না হলে ভোটের সেন্টারে যাওয়া হবে না।

গাইবান্ধার পাঁচটি আসনে মহিলা ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি। গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনে ৩৯৩০৪৪ জন, গাইবান্ধা-২ সদর আসনে ৩৮১৯৬৯, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনে ৪৭৪৮৭৬, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) ৪৩৯৯২৫, গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনে ৩৬২৮৮৩ জনসহ মোট ২০৫২৬৯৭ ভোটার। তার মধ্যে ১০ লাখ  ৪১ হাজার ২০৭ জন নারী ভোটার এবার ভোট প্রয়োগ করবেন। শহর ও গ্রামে ভোটের জমজমাট আসর বসে। হইহই অবস্থা পুরুষ ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু সাড়া নেই নারী ভোটারদের মধ্যে। তারা ভোট দেন শুধু ভোটের দিন সেন্টারে গিয়ে। সাথে থাকেন তাদের স্বামীরা। তাদের কথামতোই সিল মারতে হয় মার্কায়। ফাহিমা নামের এক গৃহবধূ বলেন, ভোটের ট্যাকা খায় স্বামীরা। তারা নিজেরা আমার ভোট কখন বিক্রি করে দেয় তা আমি বুঝতেও পারিনো। কিন্তু ভোটের দিন বোঝা যায় আসল কথা। গাইবান্ধার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলজুড়ে নারীরা এভাবে অধিকারবঞ্চিত হয়ে আসছে। ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত চর খারজানি। এই গ্রামের অধিকাংশ নারী ভোটার ভোটের আগের দিনও জানতে পারেন না কাকে ভোট দিতে হবে। 

গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বাস করলেও চরাঞ্চলের মেম্বার-চেয়ারম্যান আর স্বামী-শ্বশুরের কথামতো ভোট দিতে হয়। এমন কথা জানালেন জোলেখা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমাগো ভোট তো দিয়া দিছি। খালি সিল মারা বাকি আছে। চেয়ারম্যান আর মেম্বররা যে মার্কায় সিল মারতে বলেন, হামরাও সেই মার্কায় ভোট দেই। হামার যাই উপকার করে, বিপদের সময় আসিয়া খোঁজখবর নেয়, তাকে ভোট দেই।’ তবে চরাঞ্চলজুড়ে নারীরা মাঠে-ময়দানে গতর খাটালেও ভোটের অধিকার সম্পর্কে কেউ তাদের কোনো সহযোগিতা করে না।

ভোট এলে হয়তো তাদের কপালে কোনো লাভ-লোকসানের হিসাব না থাকলেও তারা তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিতে পারে না। সকালে ভোট শুরু হলে স্বামী আর স্বজনরা এসে একখানে জড়ো করে সেন্টারে নিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে বলেন, অমুক মার্কায় ভোট দিবা। সেই আদেশ পেয়েই গ্রামীণ এসব পরিবারের নারীরা ভোট দিয়ে থাকেন। এ কথা বলেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর বেলকার গৃহিণী সাইবানী বেগম। তিনি বলেন, এবারও তাদের মধ্যে ভোটের আনন্দ থাকলেও তারা নিজের মতে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা নেই। স্বামী যা বলবেন সেই মার্কায় সিল দিয়ে আসবেন। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!