তিস্তা নদীর তীরবর্তী তিন জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল তিস্তায় মওলানা ভাসানী সেতু খুলে দেওয়ায় তিন জেলার মানুষের মধ্যে দিনটি উৎসবে পরিণত হয়েছে। নদীর দুই পারের হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের মানুষ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে চরাঞ্চল এখন নতুন জনপদে পরিণত হয়েছে। নতুন স্বপ্নে বিভোর চরাঞ্চলের মানুষ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরিপুরে তিস্তায় মওলানা ভাসানী সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল বুধবার দুপুরে সেতুর হরিপুর পয়েন্টে উদ্বোধনের পর তিনি মওলানা ভাসানী সেতু পার হয়ে তিনি সেতুর চিলমারী প্রান্তে ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন।
সেতুটি উদ্বোধনের পর থেকেই যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। হাজার হাজার নারী-পুরুষ সেতু খুলে দেওয়ায় পার হয়ে এসেছেন বিভিন্ন স্থান থেকে। এখন উত্তর জনপদের তিন জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধার ৩৫ লাখ মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সুবিধা অনেক বৃদ্ধি হবে। এসব জেলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই সেতু অনেক বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন। চিকিৎসা সুবিধা, অল্প সময়ে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়াসহ কৃষিপণ্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সহজ হবে বলে জানান চরাঞ্চলের মানুষ।
গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মধ্যে সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১৪ সালে এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়। ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান চীনের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিএসসিইসি)। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়। চলতি বছর জুলাই মাসে ব্রিজের কাজ শেষ হয়। গতকাল তিস্তায় মওলানা ভাসানী সেতুর খুলে দেওয়া হলে তিস্তা পারের মানুষকে আনন্দ উৎসব করতে দেখা যায়।
প্রায় ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার, ৩১টি স্প্যান, নদী শাসন সাড়ে ৩ কিলোমিটারসহ এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় ৯২৫ কোটি টাকা। সেতুটি নির্মিত হয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুরঘাট এলাকায়। অপর প্রান্তে কুড়িগ্রামের চিলমারী ঘাট। সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামের দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার কমে আসবে, সময় সাশ্রয় হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের নয় বরং উত্তরাঞ্চলের তিস্তা তীরবর্তী আরও কয়েকটি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে বলে স্থানীয়রা জানান।