ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

চুলের ছন্দে ফ্যাশনের গল্প

আফরিন জাহান
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০২:২৬ এএম

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ‘মেঘবৌয়ের খোঁপা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নিদ্রিতার কেশরাশি’ কিংবা হুমায়ূন আহমেদের ‘সোনার কন্যার মেঘবরণ কেশ’ যেন চুলের ভিন্ন সৌন্দর্যের প্রতীক। বাস্তব জীবনেও চুলের নিজস্বতা একেক মানুষের জন্য একেকরকম। চারপাশে নানা রকম মানুষ আর তাদের মাথায় নানা রকম চুল দেখা যায়। কারো চুল সোজা, কারো চুল ঢেউ খেলানো আবার কারো চুল হয় কোঁকড়া। ধরন যেমনই হোক, চুলের আসল সৌন্দর্য নির্ভর করে চুলের সুস্থতার ওপর। সুস্থ চুলই প্রকৃত অর্থে আকর্ষণীয়। চুল সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার চুলের ধরন অনুযায়ী সঠিক যতœ। কারণ একই নিয়ম বা একই পণ্য সব চুলের জন্য কার্যকর হয় না। তাই নিজের চুলের প্রকৃতি বুঝে তারপর যতœ নেওয়াটা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিন্ন ধরনের চুলের জন্য প্রয়োজনীয় যত্ন।

তৈলাক্ত চুলের যত্ন 

তৈলাক্ত চুল সামলানো সবচেয়ে বেশি ঝামেলা। এ ধরনের চুল খুব তাড়াতাড়ি চটচটে হয়ে যায়, তাই স্টাইল ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় শ্যাম্পু করলেও একটু পরেই চুল লেপ্টে থাকে। এ ধরনের চুল নিয়মিত পরিষ্কার করা দরকার। তবে মাথার ত্বকে অতিরিক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত নয়, এতে ত্বকের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। চুল তৈলাক্ত হলে সপ্তাহে অন্তত একবার গরম তেল দিয়ে মাথায় হালকা ম্যাসাজ করে তারপরে শ্যাম্পু করা ভালো। এতে রক্তসঞ্চালন বাড়ে, মাথার ত্বক পরিষ্কার হয় এবং চুল সতেজ থাকে। কন্ডিশনার চুলকে আরও তেলতেলে করে তুলতে পারে। তাই কন্ডিশনার ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

শুষ্ক চুলের যত্ন 

শুষ্ক চুল সাধারণত ভঙ্গুর হয়। এমন চুল সহজেই ভেঙে যায়। অতিরিক্ত রোদ, ধুলাবালি বা বারবার স্টাইলিংয়ের কারণে চুলের প্রাকৃতিক তেল কমে গিয়ে এই সমস্যা দেখা দেয়। শুষ্ক চুলের যতেœ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাথায় আর্দ্রতা বজায় রাখা। এমন চুল যাদের, তাদের প্রতিদিন শ্যাম্পু করা এড়িয়ে চলা উচিত। বরং সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাইল্ড বা প্রোটিনসমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। এতে চুল নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল হবে। চাইলে সপ্তাহে একবার হেয়ার মাস্ক বা ডিম, মধু ও অলিভ অয়েলের প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে শুষ্কতা অনেকটাই কমে যাবে।

ঢেউ খেলানো চুলের যত্ন 

ঢেউ খেলানো চুল সাধারণত দেখতে আকর্ষণীয় হয়। তবে সঠিক যতœ না নিলে চুল ঝরে যেতে পারে বা সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যেতে পারে। আপনার চুল ঢেউ খেলানো হলে সপ্তাহে অন্তত একবার কুসুম গরম তেল দিয়ে মাথায় মালিশ করুন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হবে। চুল পড়ার সমস্যা থাকলে আমলা ও টক দইয়ের প্যাক খুব কার্যকর হতে পারে। আধা কাপ আমলা প্যাক ও এক কাপ টক দই মিশিয়ে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হবে। তবে যাদের চুল রং করা, তাদের ক্ষেত্রে প্যাক কেবল মাথার ত্বকে লাগাতে হবে, চুলে লাগানো যাবে না। বাইরে থেকে ফিরেই শ্যাম্পু করলে ধুলাবালি ও ঘাম জমতে পারবে না। মাসে এক-দুবার হেয়ার স্পা করালে চুল আরও প্রাণবন্ত থাকবে।

সোজা চুলের যত্ন 

সোজা চুল সাধারণত সুস্থই থাকে। এ ধরনের চুল মসৃণ হয়। তবে অনেক সময় এমন চুল অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে যায়, ফলে দেখে মনে হয় লেপ্টে আছে। এই ধরনের চুল প্রতিদিন শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। তবে সঠিক শ্যাম্পু বেছে নেওয়াটাও জরুরি। সোজা চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার না করাই ভালো, এতে চুল ভারী হয়ে যেতে পারে। প্রতি ১০-১৫ দিনে একবার মেহেদি পাতার প্যাক ব্যবহার করলে চুল লেপ্টে থাকার প্রবণতা কমে যাবে। আধা কাপ বাটা মেহেদি, এক টেবিল চামচ মেথি বাটা ও দুই চা চামচ তেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ২০ মিনিটের জন্য চুলে লাগানো যেতে পারে। এতে চুল থাকবে সতেজ। শীতকালে মেহেদি প্যাকের পরিবর্তে টক দই ও লেবুর রসের প্যাক ব্যবহার করা ভালো। এতে খুশকি কমবে ও মাথার ত্বক পরিষ্কার থাকবে।

কোঁকড়া চুলের যত্ন 

কোঁকড়া চুল দেখতে আকর্ষণীয় হলেও যতœ না নিলে এ ধরনের চুল ভীষণ রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। কোঁকড়া চুলে সহজেই জট লাগে, চুল ছিঁড়ে যায় এবং আগা ফেটে যায়। তাই নিয়মিত তেল মালিশ অত্যাবশ্যক। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন কুসুম গরম তেল ব্যবহার করা ভালো। তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ফল আরও ভালো হয়। কোঁকড়া চুলে ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার একসঙ্গে ব্যবহার করলে চুল আর্দ্র থাকে। প্রতিবার শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। সময় বাঁচাতে চাইলে শ্যাম্পুর সঙ্গে কন্ডিশনার মিশিয়েও ব্যবহার করা যায়। কোঁকড়া চুলের যতেœ বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। শুকনো অবস্থায় চুলের জট ছাড়ানোর চেষ্টা করা যাবে না, এতে চুল ভেঙে যেতে পারে। বরং স্প্রে ব্যবহার করে ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো ভালো। হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার বা কার্লার ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, যাতে ভেতর থেকে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে।