যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে এক ব্যক্তির শরীরে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ নামের একধরনের মাংসখেকো পরজীবী মাছি শনাক্ত হয়েছে। মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ গত রোববার জানায়, আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি গুয়াতেমালা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে আসেন।
আক্রান্ত ব্যক্তি মেরিল্যান্ডে চিকিৎসা নেন। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্ম’ শনাক্ত হওয়ার প্রথম ঘটনা এটি। এই পরজীবী জীবন্ত গবাদি পশু ও অন্য উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মাংস খেয়ে ফেলে। মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ মেক্সিকোতে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ছে এবং তা ক্রমাগত উত্তর দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সংক্রমণটির কথা নিশ্চিত করে। তবে গোপনীয়তার কারণে ওই রোগীর পরিচয় বা বিস্তারিত জানানো হয়নি। এর আগে দেশটির গবাদি পশু শিল্পের একটি সূত্র জানিয়েছিল, আক্রান্ত ব্যক্তি আসলে গুয়াতেমালা থেকে ফিরেছিলেন। যদিও সরকারি ঘোষণায় সেই তথ্য ভিন্ন।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, মার্কিন জনস্বাস্থ্যের জন্য এ ঝুঁকি খুবই কম। এখন পর্যন্ত দেশটিতে কোনো প্রাণীর মধ্যে এই সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। তবে সংক্রমণের খবর সামনে আসতেই আতঙ্কে কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল গবাদি পশু ও গরুর মাংস শিল্প। মধ্য আমেরিকা থেকে শুরু করে মেক্সিকোর দক্ষিণাংশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া স্ক্রুওয়ার্ম উত্তর দিকে এগোচ্ছে আর সেই হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রও দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই পরজীবী মূলত মাছির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। মার্কিন কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিন্স সম্প্রতি টেক্সাস সফরের ঘোষণা দেন, সেখানে নতুন একটি জীবাণুমুক্ত মাছি উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। কৃষি দপ্তরের হিসাব বলছে, কেবল টেক্সাসেই যদি প্রাদুর্ভাব ছড়ায়, তবে গবাদি পশু মৃত্যু, শ্রম ব্যয় ও ওষুধ খরচ মিলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ১৮০ কোটি ডলার।
গত রোববার সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের পশু চিকিৎসক বেথ থম্পসন রয়টার্সকে বলেন, মেরিল্যান্ডের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এক ব্যক্তি গত সপ্তাহে তাকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন।
আরেকটি সূত্র বলেছে, তারা ২০ আগস্ট কিছু ইমেইল দেখেছে। গবাদি পশু ও গোমাংস শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় দুই ডজন ব্যক্তিকে ‘বিফ অ্যালায়েন্স’ শিল্পগোষ্ঠীর এক নির্বাহী ওই ইমেইলগুলো পাঠিয়েছিলেন। ইমেইলে লেখা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) গুয়াতেমালা থেকে মেরিল্যান্ডে আসা এক ব্যক্তির শরীরে মাংসখেকো পরজীবী মাছি শনাক্ত করেছে। সূত্রটি পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হয়নি।
সাউথ ডাকোটা অঙ্গরাজ্যের পশু চিকিৎসক বেথ থম্পসন বলেন, বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপকালে এ-সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে গেছে সিডিসি কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্য সূত্রে বিষয়টি জানতে পেরেছি। পরে সিডিসির কাছে জানতে চেয়েছি, কী ঘটছে। কিন্তু তারা কোনো তথ্যই খোলাখুলিভাবে জানায়নি; বরং পুরো বিষয় আবার অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দিয়েছেÑ যেন এই ভ্রমণকারীর দেহে কী পাওয়া গেছে বা আসলে কী ঘটেছে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যেরই।
স্ক্রুওয়ার্ম কী?
এটি মাছির মাধ্যমে ছড়ানো একধরনের পরজীবী। স্ত্রী মাছি উষ্ণ রক্তের প্রাণীর ক্ষতস্থানে ডিম পাড়ে। সেখান থেকে ফোটে শত শত লার্ভা, যারা ধারালো মুখ দিয়ে জীবন্ত প্রাণীর মাংস খেতে থাকে। চিকিৎসা না করালে আক্রান্ত প্রাণী বা মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ে। নামটি এসেছে লার্ভার খাওয়ার ভঙ্গি থেকে, যেন কাঠে পেরেক ঢুকছে স্ক্রু ঘোরানোর মতো।
মানুষের শরীরের এই সংক্রমণ বিরল হলেও বিপজ্জনক। চিকিৎসা মানে শত শত লার্ভা হাতে ধরে সরানো, ক্ষত জীবাণুমুক্ত করা। দ্রুত চিকিৎসা পেলে বাঁচা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়াটি কষ্টকর।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও ঝুঁকি বিশাল। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর মেক্সিকো থেকে ১০ লাখেরও বেশি গরু আমদানি করে। কিন্তু মেক্সিকোর ভেতরে সংক্রমণ বাড়ায় সীমান্ত দিয়ে পশু আমদানি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি ভেরাক্রুজ অঙ্গরাজ্যে মার্কিন সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৭০ মাইল দক্ষিণে নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে পশু বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে।