ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যানের  বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৮:০৮ এএম

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার বিকেলে দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর-৩১। সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এর সহকারী পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম মামলাটি রেকর্ড করেন। নুরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ডোনার হিসেবে পরিচিত।

মামলার এজাহারে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বলা হয়, মো. নূরুল ইসলাম জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করে নিজের ভোগদখলে রেখেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা তদন্তের মাধ্যমে বের করা হবে। দুদক আইনের ২৭(১) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে।

এজাহারের সংক্ষিপ্ত বিবরণে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আসামি নূরুল ইসলাম নিজ নামে ঢাকার গুলশান আবাসিক এলাকায় সার্কেল-২-এর বাড়ি নং-১৯ (অর্ধেকাংশ), রোড-৪৪, ব্লক-সি, ডব্লিউএন(বি), গুলশান-২ (স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম আধুনগর হরিণা, ঘাটিয়াপাড়া, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম), পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে সাতটি প্লটসহ অর্জিত স্থাবর সম্পদের মূল্য ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৮ হাজার ৪৯৯ টাকা। এ ছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসির শেয়ারের মূল্য ৮ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার ৪৫০ টাকা এবং নোমান গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে অস্থাবর সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৩৮ কোটি ৮১ লাখ ৫৯ হাজার ৬৯ টাকা। অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে মোট সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ৬২ কোটি ২১ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬৮ টাকা।
২০২৪-২৫ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী তার দায়দেনা ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফলে দায়দেনা বাদ দিলে তার নিট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২ কোটি ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৬৮ টাকা।

আসামি নূরুল ইসলামের নামে ২০১৬-১৭ করবর্ষে প্রদর্শিত নিট সম্পদ ছিল ৪৫ কোটি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৩ টাকা। ২০১৬-১৭ করবর্ষ পর্যন্ত তার মোট আয় বিবেচনায় রেখে ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত তার মোট গ্রহণযোগ্য আয় ধরা হয়েছে ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার ৩৭৪ টাকা। ওই সময়ে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৬ টাকা। এতে সঞ্চয়/অবৈধ উৎসের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ কোটি ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৮ টাকা।

এভাবে নূরুল ইসলামের নামে জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত ১৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। যা তিনি অবৈধ উপায়ে অর্জন করে নিজের ভোগদখলে রেখেছেন। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজাহারে ঘটনার সময় ধরা হয়েছে ১৯৯৮-৯৯ থেকে ২০২৪-২৫ করবর্ষ পর্যন্ত।  

নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সহযোগী হিসেবে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা হত্যায় অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা আমলে সরকারের আনুকূল্যে বিরোধপূর্ণ সম্পত্তি এবং নামমাত্র মূল্যের জমি বন্ধক রেখে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে দুদকে পৃথক ১৩টি অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। এসব অনুসন্ধানে নূরুল ইসলামের স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, নাতি এবং প্রতিষ্ঠানটির বেতনভুক্ত কর্মচারীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।