ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

বরাদ্দ না থাকায় মৌলভীবাজার হাসপাতালে বন্ধ যাচ্ছে ডায়ালাইসিস সেবা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ১০:১৭ এএম
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সরকারি অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে কিডনি রোগীদের জন্য চালু থাকা ডায়ালাইসিস সেবা। বরাদ্দের ঘাটতির কারণে বর্তমানে শুধু পুরোনো ১৫ জন রোগীকে সীমিত সেবা দেওয়া হচ্ছে। নতুন রোগীদের গত এক মাস ধরে এই সেবার আওতায় নেওয়া হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে মোট ১৭টি ডায়ালাইসিস মেশিন থাকলেও বর্তমানে সচল রয়েছে ১৫টি। প্রতিটি রোগীকে ২০ হাজার টাকার প্যাকেজে ৪৮টি সেশনের ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়। প্রতি সেশনের গড় ব্যয় প্রায় ৪০০ টাকা, যেখানে বাকিটুকু সরকারিভাবে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করা হয়ে থাকে। মাসে প্রায় ৩০০ সেশন পরিচালনার জন্য প্রতি বছরে প্রায় ১ কোটি টাকার প্রয়োজন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরোনো রোগীদের জন্য সেবাও আগামী সেপ্টেম্বরের পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে জেলার সীমিত আয়ের কিডনি রোগীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

রোগীরা বলছেন, কিডনি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে নিয়মিত ডায়ালাইসিস ছাড়া বাঁচার উপায় নেই। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে সেবা বন্ধ হয়ে গেলে তাদের ভরসা বেসরকারি হাসপাতাল, যেখানে প্রতি সেশনের খরচ ৩,৫০০ টাকারও বেশি। অনেকেই বাধ্য হয়ে সিলেট শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যা তাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেন। ডায়ালাইসিস প্রয়োজন এমন রোগীদের ৭০ শতাংশই অর্থাভাবে সেবা নিতে পারেন না।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কিডনি রোগী লোকমান আহমেদ বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে আগে ডায়ালাইসিস করাতাম। মাঝে ইনফেকশনের কারণে প্রাইভেট হাসপাতালে করাই। এখন সদর হাসপাতালে গেলে জানায়, নতুন রোগীদের আর নিচ্ছে না। সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস লাগে, আর প্রতি সেশনে খরচ পড়ে ৩,৫০০ টাকা। এত টাকা নিয়মিত খরচ করা অসম্ভব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) ডা. প্রণয় কান্তি দাশ বলেন, ‘আগে থেকে ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন রোগীদের আমরা আরও এক-দেড় মাস সেবা দিতে পারব। তবে নতুন রোগী নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, সেবা পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার আগেই বরাদ্দ পাওয়া যাবে।’

এদিকে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘ডায়ালাইসিস সেবা চালু রাখার জন্য আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।  এরই মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব বরাবর ১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেবা অন্তত আরও এক বছর চালানো সম্ভব হবে।’