ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে ক্যাম্পাস বইছে উৎসবের আমেজ। নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় ১৮টি হলে ১৩টি পদে মোট ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গতকাল সকাল থেকে ডাকসু পদপ্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের মধুর ক্যান্টিন, অপরাজেয় বাংলার সামনে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিতরণ করছেন লিফলেট। প্রার্থীরা দিচ্ছেন- শিক্ষার্থীদের নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানের অঙ্গীকার।
তবে বেশ কিছু আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও করেন তারা। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ায় বিভিন্ন প্যানেলের ব্যানার সরিয়ে নিয়েছে আচরণবিধিসংক্রান্ত টাস্কফোর্স। এদিকে, হত্যাচেষ্টা মামলায় নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভিপিপ্রার্থী জালাল আহমদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ছাত্রদলের মনোনীত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। পাশাপাশি, নির্বাচন ঘিরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) ভিপিপ্রার্থী আব্দুল কাদের।
ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ায় বিভিন্ন প্যানেলের ব্যানার সরিয়ে নিয়েছে আচরণবিধিসংক্রান্ত টাস্কফোর্স। গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে টানানো ব্যানারগুলো নামিয়ে একটি ভ্যানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় টিএসসি, সামাজিক বিজ্ঞান চত্বর, চারুকলা, হলপাড়া এবং কার্জন হলে ছাত্রশিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, স্বতন্ত্র জামালুদ্দীন খালিদ ও এনসিপির বহিষ্কৃত নেতা মাহিন সরকারের ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ’, উমামা ফাতেমার ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের ব্যানার টানাতে দেখা যায়। ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থীরা যেকোনো হ্যান্ডবিল, পোস্টার, লিফলেট বিলি করতে পারবেন।
তবে ক্যাম্পাসের কোথাও এগুলো টানানো কিংবা প্রদর্শন করা যাবে না। যেসব প্রার্থী এরই মধ্যে ব্যানার, ফেস্টুন, বোর্ড টাঙিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন তাদের সেগুলো সরিয়ে নিতে গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি দেয়। চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দিন সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আচরণবিধির ধারা-৭ (ক) অনুযায়ী নির্বাচনি প্রচারের জন্য কেবল সাদা-কালো পোস্টার, লিফলেট বা হ্যান্ডবিল ছাপানো ও বিলি করা যাবে। পিভিসি, কাপড় বা অন্য কোনো মাধ্যমে ছাপানো বা লেখা ব্যানার, ফেস্টুন ও বোর্ড টাঙানো যাবে না।
এদিকে, হত্যাচেষ্টা মামলায় ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র ভিপিপ্রার্থী জালাল আহমদকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমান তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রুমমেটকে ছুরিকাঘাতের অভিযোগে জালাল আহমদের বিরুদ্ধে ঢাবি প্রশাসন শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করে। এরপর সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাবির হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নম্বর রুমে রবিউল হক নামের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেন জালাল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যমতে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাগবিত-ার জেরে রুমমেট রবিউলকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন জালাল। আহত রবিউল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। আহত রবিউল হক বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে জালাল রুমে এসে বাতি জ¦ালায় এবং শব্দ করতে থাকে। এতে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তখন আমি বলি, সকালে আমাকে লাইব্রেরিতে যেতে হবে অযথা শব্দ করবে না, ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। এতে সে রেগে গিয়ে আমাকে অবৈধ ও বহিরাগত বলে। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে আঘাত করে।’
এদিকে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ছাত্রদলের মনোনীত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, ভোটদান নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগছাস ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের। ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের এ প্রার্থী বলেন, ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সব দেখেও নির্বিকার ভূমিকায় রয়েছে।