ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৩২ পিএম

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। দেশের বর্তমান অবস্থা ও আগামীর রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রূপালী বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ।

রূপালী বাংলাদেশ: জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন দেখছেন? 

জয়নুল আবদিন ফারুক:  জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষ গণতন্ত্রের চর্চা থেকে বঞ্চিত। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দেশে গণতন্ত্রের চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে অনেকেই সংসদ নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চাচ্ছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে, সরকারের ভেতর থেকেই নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চলছেÑ এমন সন্দেহও আছে। সন্দেহের নানা কারণও রয়েছে। পতিত আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো সচিবালয়ে ও বিভিন্ন অধিদপ্তরে বসে আছে।

অথচ তাদের বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের এই প্রেতাত্মাদের সরাতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। গত ১৭ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছিল, ড. ইউনূস তা পরিষ্কার করবেনÑ এমন স্বপ্ন দেখেছিল দেশের মানুষ। যে দুর্বিষহ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, দেশকে সেখান থেকে বের করে দ্রুত গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেবেন। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ধোঁয়াশা বিএনপি মেনে নেবে না। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি এক আল্লাহ ছাড়া পৃথিবীতে আর কারোর কাছে মাথা নত করবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও বিএনপি কোনো আপোষ করবে না। 

রূপালী বাংলাদেশ: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে হতে হবেÑ এমন দাবি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন। 

জয়নুল আবদিন ফারুক: শুধু শেখ হাসিনা নয়, শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনেও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। দিল্লির প্ররোচনায় বাংলাদেশের কিছু লোক যদি আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেন, তবে জনগণ তা প্রতিহত করবে। নির্বাচন বানচাল করার জন্য নানা পদ্ধতি, নানা কায়দা, পিআর, মব সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আমরা দেখেছিÑ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলার জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের হৃদয় থেকে শহীদ জিয়ার নাম মুছতে পারেনি। দেশের জনগণ জানে, শহীদ জিয়ার দল যতবারই ক্ষমতায় গিয়েছে, জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। তারেক রহমানের যে আত্মত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারে, তাহলে তারেক রহমান বাংলাদেশের আগামী প্রধানমন্ত্রী হবেন।

রূপালী বাংলাদেশ: বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলার যে চিত্র, সেখান থেকে নির্বাচনকালীন পরিবেশ বিঘœ হওয়ার কোনো শঙ্কা দেখেন কি না? 

জয়নুল আবদিন ফারুক : প্রশাসনে পতিত আওয়ামী লীগের যে প্রেতাত্মা ছিল, তা এখনো বিদ্যমান। নির্বাচনের শঙ্কা নিয়ে যে কথা হচ্ছে, এই শঙ্কা দূর করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। যেসব প্রেতাত্মা সচিবালয়ে, কলকাতায় এবং দেশে বসে গুপ্তচরবৃত্তি করে প্রশাসনের মধ্যে প্রেতাত্মা ঢুকিয়ে দিচ্ছে, তারা আগামী নির্বাচন বানচাল করার প্রক্রিয়া শুরু করছে। এদের বিরুদ্ধে, এদের তালিকা অনতিবিলম্বে প্রকাশ করে আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে হবে। তাহলে মানুষ আর শঙ্কা করবে না। 

রূপালী বাংলাদেশ: আসন্ন নির্বাচন ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্র দেখেন কি না?

জয়নুল আবদিন ফারুক: গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি নানা মহল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকেই এক হয়ে রাজপথে থাকতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে. তা রুখতে আরও ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় হতে হবে। যতই দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্র আসুক না কেন, সব ষড়যন্ত্র আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করব। বিএনপির রাজপথের রাজনৈতিক সঙ্গীদের প্রতি আহ্বান, অতীতে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে যেভাবে তারা সঙ্গে ছিল, এখনো থাকবে। ইনশাআল্লাহ, আগামীর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে।

রূপালী বাংলাদেশ: আগামীর বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান?

জয়নুল আবদিন ফারুক: দেশের জনগণের  খাদ্যে, চিকিৎসাসহ সব মৌলিক চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে, তা বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচিতে উল্লেখ রয়েছে। বিএনপির রূপরেখা কার্যকর হলে, দেশের সুশাসন নিশ্চিত হবে, আইনের শাসন নিশ্চিত হবে এবং নিরপরাধ কোনো মানুষ সাজাপ্রাপ্ত হবে না, অপরাধীরা ছাড়া পাবে না। এমন একটি সামাজিক অবস্থা, একটি বন্দোবস্তের জন্যই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল লড়ছে। আগামীতে আমরা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি ইস্পাত-কঠিন ঐক্য গড়ে তুলব, যার মাধ্যমে কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না।

রূপালী বাংলাদেশ: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসবেন কবে?

জয়নুল আবদিন ফারুক: দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাইÑ অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। শিগগিরই দেশে ফিরছেন দলের কা-ারি ও তাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই জানিয়েছেনÑ ‘শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে।’ মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। দেশের প্রতিটি মানুষ দুটি বিষয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তার আগে তারা তারেক রহমানের দেশে ফেরা। তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে দলীয়ভাবে বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

রূপালী বাংলাদেশ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

জয়নুল আবদিন ফারুক: আপনাকে এবং রূপালী বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।