*** শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
*** ২৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে ১০ জন
*** স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা
*** গড়ে প্রতিদিন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন ৯০ জন রোগী
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ৫০ শয্যা হাসপাতাল হলেও প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। ২৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও ১০ জন দিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। সামান্য রোগ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে জেলা হাসপাতালে। চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ২০-২৫ দিন ধরে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকায় হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ, ফিরে যাচ্ছেন প্রসূতি মায়েরা।
এদিকে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও সিলেট অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রীতম দাশ। এনসিপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ঘুরে দেখেন এবং রোগী, তাদের স্বজন ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসপাতালে অবস্থানকালে তিনি বিভিন্ন সমস্যার খোঁজখবর নেন। রোগীদের অভিযোগ শোনার পাশাপাশি চিকিৎসকদের কাছ থেকেও দৈনন্দিন কার্যক্রম ও সমস্যার কথা শোনেন তিনি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গড়ে প্রতিদিন জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেন ৯০ জন রোগী, বহির্বিভাগে আসেন ৩০০ জন এবং ভর্তি থাকেন প্রায় ৪০ জন। কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (বিষয়হীন) ছয়জন থাকার কথা, আছেন মাত্র একজন এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা বা সহকারী সার্জন সাতজনের জায়গার আছেন মাত্র একজন। জ্যেষ্ঠ নার্সের সাতটি পদ শূন্য। এ ছাড়া ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, কার্ডিওগ্রাফার, কম্পিউটার অপারেটর, স্বাস্থ্য সহকারী, ওয়ার্ড বয়, আয়া, বাবুর্চি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অনেকগুলো পদে জনবল কম আছে। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন ও ইসিজি মেশিনটিও অকেজো পড়ে আছে।
সরেজমিন কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত নারী, শিশু ও পুরুষ ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। চিকিৎসকদের চেম্বারের বাইরে রোগীদের দীর্ঘ সারি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরিবর্তে উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তারা (স্যাকমো) রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। বহির্বিভাগে আসা রোগীরা কাক্সিক্ষত চিকিৎসক না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। চিকিৎসকের নাম লেখা কক্ষগুলোর বেশির ভাগেই চিকিৎসকের উপস্থিতি নেই। হাসপাতালে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানাচ্ছেন নানা অভিযোগ।
কমপ্লেক্সে রোগী দেখাতে আসা একাধিক রোগী ও তাদের স্বজন বলেন, কমপ্লেক্সে এখন চিকিৎসক কম। নার্সরাই রোগী দেখেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই বললেই চলে। ফলে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না। সব ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। সেবার মানও খুবই খারাপ। সামান্য রোগেও জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা রোগীর তুলনায় কম হওয়ায় খুবই চাপের মধ্যে আছেন কর্তব্যরতরা। হিমশিম খাচ্ছেন তারা। জনবল সংকটের কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চিঠি লিখেও জনবল পাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জনবল বাড়লে রোগীদের আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন এই কর্মকর্তা।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সম্রাট কিশোর পোদ্দার বলেন, খুব কষ্টে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। দ্রুত সময়ের ভেতরে ডাক্তার নিয়োগ দিলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা শারমীন আক্তার জানান, ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা রোগীর তুলনায় কম হওয়ায় আমরা খুবই চাপের মধ্যে আছি। প্রতিনিয়ত আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা জনবল সংকটের কথা জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চিঠি লিখেও জনবল পাচ্ছি না। জনবল বাড়লে রোগীদের আরও ভালো সেবা দেওয়া যাবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও সিলেট অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রীতম দাশ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই হাসপাতালের সমস্যা নিয়ে সংবাদ দেখছি। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন যে সংখ্যক রোগী আসেন, তার তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। পরিছন্নতাকর্মীও অপর্যাপ্ত। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে পর্যাপ্ত জনবল নেই। ফলে চিকিৎসকদের ডাবল ডিউটি করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা সেবার মানও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।