মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স ছড়ালেও  টনক নড়ছে না স্বাস্থ্যকর্মীদের 

রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০২৫, ১১:৫৯ পিএম

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স ছড়ালেও  টনক নড়ছে না স্বাস্থ্যকর্মীদের 

রংপুরে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত দুই রোগীর মৃত্যুর পরও টনক নড়ছে না স্বাস্থ্য বিভাগের। সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। আক্রান্ত রোগীরা বলছেন, হাসপাতালে গিয়েও মিলছে না ওষুধ। কোথায় গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে তা নিয়ে বিভ্রান্ত রোগীরা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহিন সুলতানার আচরণেও হতভম্ভ হয়ে পড়েছেন তারা। 

এদিকে রংপুর জেলায় ১৩ লাখ গরু রয়েছে। গরু থেকে মানবদেহে অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর। রোগ প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭০ হাজার গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ১০ লাখের বেশি গরু ভ্যাকসিনের আওতার বাইরে। 

অসুস্থ গরুর মাংস থেকে রংপুরে এখন পর্যন্ত অর্ধশত মানুষের দেহে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে কয়েক শতাধিক গরুর দেহেও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের দাবি, অ্যানথ্রাক্সে ৮-১০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, কমপক্ষে শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের সূত্রমতে, রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় প্রতিদিন আড়াইশ গরু জবাই করা হয়। অ্যানথ্রাক্স আতঙ্কে এখন অনেকে তাদের গরু অসুস্থ হলেই জবাই করে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে।

পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা জেলার পীরগাছার ৮ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছেন। কাউনিয়ায় ৩ জন, মিঠাপুকুরে ৪ জনের দেহে অ্যানথ্রাক্স শনাক্তের খবর পাওয়া গেছে। 

ঢাকা থেকে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায় উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে। পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেনি, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছেন এ রকম ২০ জন রোগীর তথ্য রয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগে। 

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গাউসুল আজিম চৌধুরী জানিয়েছেন, অ্যানথ্রাক্স নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। নমুনা পরীক্ষা করে বেশ কয়েকজনের দেহে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. আবদুল হাই সরকার অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বলেন, যে পরিমাণ গরু অ্যানথ্রাক্সে মারা গেছে তার চেয়ে কয়েক গুণ গরু অসুস্থ অবস্থায় জবাই করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে রোগটি মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছে।

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃত্যু ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, ‘আইইডিসিআর নমুনা সংগ্রহ করেছিল। তার রিপোর্ট পাঠিয়েছে। এখনো দেখিনি। রিপোর্টে কী আছে, দেখে বলতে হবে।’

ভয়াবহ এই রোগ রংপুরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু রংপুর স্বাস্থ্য বিভাগের মাথাব্যথা নেই এ নিয়ে। মেডিকেল টিম গঠন করেই দায়সারা। মাঠেও যাচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। সিভিল সার্জন ডাক্তার শাহিন সুলতানা বলেছেন, মাঠে মেডিকেল টিম রয়েছে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।

রংপুর বিভাগজুড়ে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি পশু জবাই করা হচ্ছে। কিন্তু এসব পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। বিভাগে ১ হাজার ৩০৩টি হাট-বাজার রয়েছে, তবে কোথাও নেই আধুনিক কসাইখানা বা ভেটেরিনারি সার্জনের উপস্থিতি।

আইন অনুযায়ী, পশু জবাইয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে রোগাক্রান্ত পশুর মাংস সরাসরি মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। এর মধ্য দিয়ে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা একসঙ্গে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। 

প্রচলিত আইনে মাংস ব্যবসা শুরুর আগে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নিতে হয়। এরপর প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাংস বিক্রির লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু রংপুর বিভাগের অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ীরই এ ধরনের সনদ নেই। অনেকে নিয়মটির ব্যাপারে জানেনই না।

সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় গরু থেকে মানুষে অ্যানথ্রাক্স রোগ ধরা পড়ে। অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ নিয়ে দুজন মারাও যান। তাদের মধ্যে অসুস্থ গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটতে গিয়ে আক্রান্ত হন একজন। অন্যজন অসুস্থ গুরুর মাংস রান্না করতে গিয়ে আক্রান্ত হন। এ ছাড়া আরও অনেকজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে পাশের গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়ও। কিন্তু সেখানেও মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেই। করা হয় না নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এই উপজেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি স্পটে দৈনিক গরু-ছাগল জবাই করা হয় ৬০ থেকে ৬৫টি।

তারাগঞ্জ উপজেলায় মাংস ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬০ জনেরও বেশি; কিন্তু কারো লাইসেন্স নেই। এমনকি এ উপজেলায় জবাইয়ের আগে পশুর স্বাস্থ্যও পরীক্ষা করা হয় না। 

তারাগঞ্জের মাংস ব্যবসায়ী হাসিনুর ইসলাম বলেন, ‘মাংস ব্যবসার জন্য প্রাণিসম্পদ থাকি লাইসেন্স নিবার নাগে, এটা জানতাম না। কয়েক দিন আগে মিটিংয়ে শুনেছি। এখন নিব। আমরা অসুস্থ পশু জবাই করি না। ওই জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি না। শেড দখলে তাই গরু বাইরে জবাই করি।’

জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় কোনো মাংস ব্যবসায়ীর লাইসেন্স নেই। তারা শুধু ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে ব্যবসা করেন। অনেকের তাও নেই। আমরা সভা করে সব মাংস ব্যবসায়ীকে লাইসেন্স ও পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বলেছি। তারা আবেদন করলে আমরা যাচাই-বাছাই করে লাইসেন্স প্রদান করব। এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। বৈধভাবে মাংস ব্যবসা না করলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

সুন্দরগঞ্জ পৌর বাজার ইজারাদার ও মাংস ব্যবসায়ী মো. শুকুর আলী বলেন, ‘পৌরসভায় নিয়মিত পরীক্ষা হয়। এটা সব জায়গায় করা উচিত। বিশেষ করে বামনডাঙ্গা, রামগঞ্জ ও বেলকায়। এর মধ্যে রামগঞ্জ বাজারে বেশি অসুস্থ গরু জবাই করা হয়। আর এ মাংসগুলো তারা সব জায়গায় পাইকারি দেয়।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার দে বলেন, ‘সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা এবং রামগঞ্জ বাজারের কসাইখানায় পুরো সাপোর্ট দিচ্ছি আমরা। সেখানে পরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই গরু-ছাগল জবাই করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বাকি কসাইখানাগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’

রংপুর বিভাগের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. আব্দুর হাই সরকার বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ থেকে মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য আমরা মাঠপর্যায়ে উদ্বুদ্ধ করছি। আমরা নিয়মিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে চাই; কিন্তু চরম জনবল সংকটের কারণে তা সম্ভব হয় না। প্রতিটি হাটে চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হয় না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে হাট-বাজারগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!