বিগত সরকারগুলোর আমলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ‘ভুয়া’ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে (জামুকা) দায়ী করেছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর।
তিনি বলেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর যাত্রাটা কবে শুরু হয়েছে? যেদিন জামুকার জন্ম হয়েছে। জামুকা হলো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সরকারি বৈধতা দেওয়ার প্রধান কারিগর। অর্থের বিনিময়ে তারা মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছে, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দালাল বানিয়ে তাদের মাধ্যমে অর্থ নেওয়া হয়েছে। জামুকা হলো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানানোর প্রধান কারিগর। জামুকা তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মনে এ ধরনের প্রশ্ন ছিল না।’
গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের’ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মুক্তিযুদ্ধে শহিদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর এসে মুক্তিযোদ্ধার সঠিক সংখ্যা ও শহিদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, “এটি কোনো ‘কাল্পনিক কাহিনি নয়’। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তখনকার অ্যাক্টিং প্রেসিডেন্ট অব বাংলাদেশ, তিনি একটি চিঠি লিখেছেন, ‘৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার ভরণপোষণ, যাতায়াত খরচ এবং অন্যান্য খরচ বহন করার মতো টাকা এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নাই।’ টাকা সংগ্রহ করতে হবে। এখন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কতজন আছেন? প্রায় আড়াই লাখ। তার মানে, প্রতি তিনজনে দুজন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আমরা এই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার রাজত্বে বসবাস করছি।”
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে ইতিহাস ও বয়ান লেখা আছে, সেটি ‘সঠিক নয় এবং বিভ্রান্তিতে ভরা’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ একটা খেলনা নয়। জীবন নেওয়া ও দেওয়ার বিষয়। আমরা অস্ত্র নিয়ে অস্ত্র মোকাবিলা করেছি। কখনো আমরা মরেছি, কখনো তাদের হত্যা করেছি। এটা জীবন নেওয়া ও দেওয়ার খেলা ছিল। এটা পল্টনের ভাষণ নয়, এটা সোহরাওয়ার্দীর ভাষণ নয়। এটা ছিল রণাঙ্গন। কিন্তু গণযুদ্ধে কতজন শহিদ হয়েছে, গণশহিদ হয়েছে, তার কোনো তথ্য নাই।’
নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘একটা জাতি মিথ্যা তথ্যের ওপর দাঁড়াতে পারে না। একাত্তরে কতজন গণশহিদ হয়েছিলেন, তার সঠিক তথ্য নাই। এটা মুখস্ত বিদ্যা নয়। এটা হাজার বছরের কোনো কাল্পনিক কাহিনি নয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কতজন মা-বোন ইজ্জত দিয়েছে, তার কোনো সঠিক তথ্য নাই। ৮০-৯০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাকে কারা, কোন স্বার্থে আড়াই লাখ বানিয়েছেÑ এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘তাদের আমরা চিনি না? আমরা মুক্তিযোদ্ধারা টাকার বিনিময়ে বানিয়েছি, আত্মীয়তার কারণে বানিয়েছি। রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে বানিয়েছি।’
জামুকা কী করবে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট কী করবে, সেদিকে না তাকানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণভাবে আপনাদের আহ্বান জানাব যে, রণাঙ্গনে যারা আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তাদের একটি তালিকা তৈরি করবেন। এটার মধ্যে সংজ্ঞার কোনো বিষয় নাই। আমি যাদের জানি, যাদের চিনি, তাদের নিয়ে একটা তালিকা তৈরি করা হবে। আমার ধারণা, আমরা যারা বেঁচে আছি, আমার ধারণা, আমরা ৯০ ভাগ সফলভাবে একটা তালিকা তৈরি করতে পারব। আগামী সম্মেলনের পরে আমাদের প্রধান কাজই হবে এটি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা মুক্তিযোদ্ধারাই তৈরি করবে, জামুকা বা মন্ত্রণালয় নয়।’ ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৫৪টি অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন নঈম জাহাঙ্গীর।