রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ ও সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের দ্বন্দ্বে ঝিমিয়ে পড়েছে রাজশাহী জেলা বিএনপির কার্যক্রম। জেলা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন কমিটি গঠন কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। তারা পরস্পর বিপরীত মুখী অবস্থান নিয়েছে। দুজনের মধ্যে কথা বলাও বন্ধ। এ পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি নেই। ঝিমিয়ে পড়ছেন সাধারণ কর্মীরা।
তিন মাসের জন্য গঠন করা আহ্বায়ক কমিটি ইতোমধ্যে ছয় বছর পার করেছে। আহ্বায়ক-সদস্য সচিবের বিরোধের কারণে নেতাকর্মীদের অনেকেই এখন কমিটিই বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। তবে আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলছেন, সদস্য সচিবের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলেও সংগঠনে কোনো প্রভাব পড়বে না। দল দলের মতো করেই চলবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে দলের মনোনয়ন চাইছেন। আর আবু সাঈদ চাঁদ চান রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে মনোনয়ন চান। গোদাগাড়ী-তানোরে বিএনপির ইউনিয়ন কমিটিগুলো নিজের মতো করেই দিতে চাচ্ছিলেন বিশ্বনাথ সরকার। তবে তাতে বাগড়া দিয়েছেন আবু সাঈদ চাঁদ। এরপর দুজনের সম্পর্কের অবনতি হয়। সম্প্রতি তাদের প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয় রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের ইউনিয়ন কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে। এ নিয়ে সম্প্রতি আহ্বায়কের বিরুদ্ধে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সদস্য সচিব।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীর দুর্গাপুরের ইউনিয়ন কমিটিগুলো করার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ছয় সদস্যের গত মে মাসে একটি কমিটি করে দেন। এর প্রধান করা হয়েছিল জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারকে। এই কমিটির তত্ত্বাবধানে গত ২০ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দুর্গাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রত্যেক ইউনিয়নে পাঁচজন করে নির্বাচিত হন। এরপর তারা আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটিও করেন।
কিন্তু আবু সাঈদ চাঁদের অনুসারী কিছু নেতা অভিযোগ তোলেন যে, ইউনিয়ন কমিটিগুলো করার ক্ষেত্রে টাকার লেনদেন হয়েছে। এরপর গত সোমবার জেলার আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ তার একক স্বাক্ষরে ওই ছয় ইউনিয়ন কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেন। এটি দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী উল্লেখ করে চাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন বিশ্বনাথ।
অভিযোগে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারম্যানকে লেখেন, ‘চেয়ারপাসরনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ছয় ইউনিয়ন কমিটি করা হয়েছিল। ২০০৯ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যেসব নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলা, হামলা, জেল, জরিমানার শিকার হয়েছেন তাদের কমিটিতে আনা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় গত ৬ অক্টোবর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ কমিটিগুলোতে স্থগিতাদেশ দিয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেন। এটি বিধিবহির্ভূত এবং গঠনতন্ত্র পরিপন্থি পদক্ষেপ। এ অবস্থায় দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে যা দলের অভ্যন্তরে ও আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘কমিটিগুলো দেওয়ার আগে গতমাসের ২০ তারিখের দিকে আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের সঙ্গে আমি কথা বলি। তিনি আমাকে কমিটি দিতে নিষেধ করেন। কিন্তু যেহেতু চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম কমিটি করতেই একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন এবং সেই কমিটির তত্ত্বাবধানে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়, তাই আমি কমিটি ঘোষণা করি। পরে আবু সাঈদ চাঁদ আমার সঙ্গে কথা না বলেই কমিটিগুলো স্থগিত করেছেন। এ জন্য তার সঙ্গে আমি আর কথা বলিনি।’
বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘আমি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গেও দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, ইউনিয়ন কমিটি স্থগিত করতে পারে উপজেলা কমিটি। জেলা কমিটির হয়ে আবু সাঈদ চাঁদ কমিটি স্থগিত করতে পারেন না। এটা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। তিনি এমন গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করলে তো তার সঙ্গে আমার কথা বলার দরকার নাই।’
আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘বিশ্বনাথ সরকার চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের কথা বলে কমিটি দিলেও তিনি কোনো চিঠি দেখাতে পারবেন না। বরং, আমিই কমিটি স্থগিত করেছি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের সঙ্গে কথা বলে। এ রকম অবস্থার সৃষ্টি হলেও দলে কোনো প্রভাব পড়বে না। দল দলের মতো করেই চলবে বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন। তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলে দলীয় শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। সাধারণ কর্মীরা সাংগঠনিক কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। দ্রুত এই সকল দ্বন্দ্ব বিভেদ দূর করা প্রয়োজন।