ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

রাকসু নির্বাচন

প্রশাসনের জবাবদিহিতা  নিশ্চিতে কাজ করবেন  আলোচিত ৪ ভিপি প্রার্থী

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ১২:৫৬ এএম

আগামী ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া এ নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। নির্বাচনে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরাও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনের শীর্ষ সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে আলোচিত চার প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে রূপালী বাংলাদেশ।

প্রার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যার সমাধানে কাজ করবেন তারা। পাশাপাশি সব পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চান তারা।

আবাসন সুবিধার রোডম্যাপ নিশ্চিত করবেন আবীর: ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’। প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর। তিনি শাখা ছাত্রদলের সহসভাপতি। আবীর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে নির্বাচিত হলে কর্তৃপক্ষ থেকে পূর্ণ আবাসিকের রোডম্যাপ আদায় করে নিতে চান। 

শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, ‘গত ১৭ বছর আমরা পুরো বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতির একটি নেতিবাচক আধিপত্য দেখেছি। এর কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা আসলে ছাত্ররাজনীতিবিমুখ হয়ে গেছেন। ছাত্রনেতারা যে তাদেরই ভাই, তাদেরই বন্ধুÑ এটা তারা মানতে নারাজ। আমার প্রথম কাজ হবে, আমরা যারা ছাত্রদের পক্ষে অধিকার নিয়ে লড়াই করি, ছাত্ররাজনীতি করি আমরা যে তাদের পক্ষের লোক সেটি তাদের বোঝাব। আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হবে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করা। আমরা ভয়-ভীতিমুক্ত একদম নিরাপদ একটি ক্যাম্পাসে গড়ে তুলব। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে আবাসন সংকট নিয়ে কাজ করতে চাই। আমরা পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করার জন্য প্রশাসনকে চাপ দেব। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা অনাবাসিক ভর্তুকি আদায় করব।’ 

এ ছাড়া তিনি পরিবহন সুবিধা বর্ধিতকরণ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন চালুকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সড়ক মেরামতের জন্য কাজ করতে চান। 

আবাসন সংকট নিরসন ও সহাবস্থান নিশ্চিত করবেন জাহিদ: রাবি শাখা ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। তাদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি নির্বাচিত হলে, আবাসন সংকট নিরসন ও ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিত করবেন। 

মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রাচীনতম একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানে সমস্যাগুলো অনেক বেশি। এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। আমরা আমাদের ইশতেহারে ১২ মাসে ২৪টা সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তবে আবাসন সমস্যা সমাধান ও শিক্ষার্থীদের অর্থনৈতিক এস্টাবলিশমেন্টের চেষ্টা করব। যদিও এটা অনেক বড় সমস্যা এটা খুব কম সময়ে সমাধান সম্ভব না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘৯০-এর দশকে ও ৮০-র দশকে যে রাজনীতিতে কোনো সহাবস্থান ছিল না। আমরা ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে কাজ করতে চাই। আমরা ট্যাগিংয়ের রাজনীতিতে ফেরত যেতে চাই না। আমরা সবাই মিলে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই।’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবেন মারুফ: বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশনের নেতৃত্বাধীন প্যানেল ‘রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ’। তাদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ। নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চান তিনি। 

মেহেদী মারুফ বলেন, ক্যাম্পাসে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমরা মনে করি যে একটি অসম লড়াই হচ্ছে। এখানে বড় সংগঠনগুলো টাকা ছড়াচ্ছে। ফলে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে বৃহৎভাবে পৌঁছাতে পারছি না। তবে আমরা মনে করি, আমরা অতীতে যেহেতু শিক্ষার্থীদের নিয়ে লড়াই-সংগ্রাম করেছি। আমার অনুরোধ থাকবে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কে কত দিন কাজ করেছে, এই জিনিসগুলো আপনারা দেখবেন এবং যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। 

তার প্যানেল নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের জন্য কী কাজ করবেন এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে একটা নোংরা রাজনীতির চর্চা হয় যেটা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থীতিশীল করার জন্য যথেষ্ট। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকাংশে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। আমরা চেষ্টা করব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগুলো যেন একটু দূরে রাখা যায়। পাশাপাশি আমরা একাডেমিক এক্সিলেন্সির কথা বলছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগগুলোর ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যে সম্পর্ক থাকা দরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে মানবসম্পদ উৎপাদন করা দরকার সেটা আমরা বের করতে পারছি না। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা হতাশা কাজ করে। সেই জায়গা থেকে রাকসুর ব্যাপ্তি অনুযায়ী সদিচ্ছার সঙ্গে কাজ করতে চাই।’ 

‘এ ছাড়া আমরা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কথা বলেছি। আমরা দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে জবাবদিহিতা পর্যাপ্ত না। শিক্ষার্থীরা আমাদের যেহেতু ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে সেই জায়গায় কথা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে রাকসু ও সিনেটে প্রতিনিধি আওয়াজ তুলতে পারব।’ 

অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করবেন তাসিন খান: সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী সাবেক সমন্বয়ক তাসিন খান। তাদের প্যানেলের পক্ষ থেকে ১২ দফা ইশতেহার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। তার ইশতেহারে অ্যাকাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ ও রিসার্চ ইমপ্যাক্ট দপ্তর চালু করার বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

তাসিন খান বলেন, ‘রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের হাতে নির্বাহী কোনো ক্ষমতা থাকে না। তবে সেই জায়গা থেকে এক বছর সময়ের মধ্যে বাস্তব কিছু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমরা একটা ইশতেহার দিয়েছি। এই অঙ্গীকার আমি বাস্তবায়ন করব। আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী একটা স্ট্রাগল লাইফ পার করে, যার অন্যতম কারণ দক্ষ হয়ে বের হওয়া। এর জন্য আমাদের একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান দরকার। আমরা অ্যাকাডেমিক উন্নয়নে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করার জন্য কাজ করতে চাই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি আধুনিক মানের রিসার্চ দপ্তর চাই। আমাদের গবেষণার জন্য যে স্বল্প বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় সে বাজেটটাও সুষ্ঠু বণ্টন হয় না। যে গবেষণাগুলো হয় সেগুলার সুফল আমরা নাগরিক সমাজ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারি না। গবেষণাগুলো প্রকাশনার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। এটাকে একটি সুশৃঙ্খল জায়গায় নিয়ে আসার জন্য আমরা একটা রিসার্চ ইম্প্যাক্ট দপ্তর প্রতিস্থাপনের জন্য প্রস্তাব করব।’

এ ছাড়া তিনি পূর্ণাঙ্গ সিনেট কার্যকর করতে চান এবং সিনেটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিশ্চিত করতে চান।