রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা। শেষ দিনে ক্যাম্পাসে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা দেখা গেছে। তবে শেষ দিনে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতমূলক’ আচরণের অভিযোগ এনে চারটি হলের প্রজেকশন (পরিচিতি) সভা স্থগিত করেছে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’। এদিকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য শেষ সময়ের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করছে নির্বাচন কমিশন। ক্যাম্পাসে মাইকিং করে নির্বাচনসংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা জানানো হচ্ছে।
কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ সম্পর্কে জানা গেছে, নির্বাচনি প্রচারণার শুরু থেকে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ করে সেখানে খাবার বিতরণের অভিযোগ ছিল। পরে গত ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল শিবিরের বিরুদ্ধে প্রজেকশন সভায় খাবার বিতরণের কথা উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দেয়। এই অভিযোগ পাওয়ার পর গত সোমবার সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়া হলে শিবিরের প্যানেলের প্রজেকশন সভায় খাবার বিতরণে বাধা দেয় কমিশন। এ সময় প্রায় ৪০০ প্যাকেট টেস্টি ট্রিটের নাশতা ফেরত পাঠায় কমিশন।
এ ছাড়া এ ঘটনায় গতকাল নির্বাচনের মাত্র এক দিন আগে আচরণবিধির ৪ নম্বর ধারার একটি স্পষ্টীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে সমাবেশে হলের অভ্যন্তরের সরঞ্জামাদি ব্যবহার ও খাবার বিতরণ না করার নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। গতকাল রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শহিদ জিয়াউর রহমান হল, সৈয়দ আমীর আলী হল, নওয়াব আব্দুল লতিফ হল এবং শহিদ হবিবুর রহমান হলে প্রজেকশন সভা স্থগিত করে ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল। গতকাল দুপুরে প্যানেলের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি জানানো হয়।
ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, আমরা নির্বাচন কমিশনের এই পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের কারণে আজকের (গতকাল) প্রজেকশন মিটিং স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন ও ন্যায়নিষ্ঠ শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা অতীতের মতোই আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন।
এদিকে গতকাল প্রচারণার শেষ দিনে সরেজমিন দেখা যায়, বিশ^বিদ্যালয়ের জামাল নজরুল ইসলাম অ্যাকাডেমিক ভবনের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা। তারা ভবনে প্রবেশ ও বাইরে আসা শিক্ষার্থীদের হাতে দিচ্ছেন লিফলেট ও প্রচারপত্র। অনেকে শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট বুকমার্ক দিয়েছেন কেন্দ্রে তার নামটি খুঁজে পাওয়ার জন্য। বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনেই এমন চিত্র ছিল। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বর, আমবাগানসহ শিক্ষার্থীদের প্রধান আড্ডার স্থানগুলো ছিল প্রার্থীদের প্রধান টার্গেট। এ জায়গাগুলোতে তারা জমজমাট প্রচারণা চালিয়েছেন। এ দিন আগত সব শিক্ষার্থীর হাতে প্রার্থীদের প্রচারপত্র দেখা গেছে।
গতকাল দিনের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে প্রচারণায় দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। এদিন সকালে পরিবহন মার্কেটে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির। বেলা ১১টার দিকে প্রচারণায় সেখানে আসেন ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। প্রচার-প্রচারণা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উভয় প্রার্থী।
ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘আমাদের দাবি, নির্বাচন কমিশন যেন পক্ষপাতমূলক আচরণ করা থেকে বিরত থাকে। তারা নিরপেক্ষভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলে, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে।’
ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির বলেন, ‘আমাদের প্যানেলটি সেরা প্রার্থী দিয়ে সাজানো হয়েছে। জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়, সাংস্কৃতিক কর্মী, নাট্যকর্মী এবং ডিনস অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছেন এই প্যানেলে। আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এজিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি। গতকাল দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘রাকসু নির্বাচনে আমি আমার পূর্ণ সমর্থন ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলকে জ্ঞাপন করছি।’
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, রাকসু নির্বাচন নিয়ে কমিশন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে। মোটামুটি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ৩ স্তরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে। এর বাইরে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করবে, প্রক্টোরিয়াল বডি কাজ করবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহায়তায় সব মিলিয়ে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে বলে আশা করছি।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায় আমরা সেটিই দেখব। যেকোনো পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখাব। সুন্দর একটি নির্বাচনের জন্য সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন। আশা করছি, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারব।’
আগামীকাল রাকসু নির্বাচনে ভোট দেবেন ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার। নির্বাচনে ২৩টি পদের বিপরীতে ২৪৭ জন এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫টি পদে ৫৮ জন প্রার্থী লড়াই করবেন। এর ভেতর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) ১৩ ও সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে ১৬ জন।
রাকসুর অন্যান্য পদের মধ্যে ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, সহকারী ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদে ৬, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ১০, সহকারী সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৬, সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৮ জন প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় এসেছে।
এ ছাড়া মিডিয়া ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৯, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৬, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১২, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে ১৬ এবং নির্বাহী সদস্যপদে ৫৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন