দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট দিতে উন্মুখ শিক্ষার্থীরা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচন আয়োজনের জন্য গতকাল মঙ্গলবার সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙখলা বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। চবিতে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে ভোট প্রদান করবে। নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষেও সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও ফুটেজ সংরক্ষিত থাকবে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আমার দায়িত্ব পবিত্রতার সঙ্গে পালন করতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি বুথে সর্বোচ্চ ৫০০ শিক্ষার্থীর ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ২৬টি ও হল সংসদের জন্য ১৪টিসহ মোট ৪০টি ভোট দিতে পারবেন।’
এদিকে নির্বাচনি প্রচার বন্ধ থাকলেও ভোট দিতে গতকাল ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কাছে ইশতেহার মোতাবেক প্রতিশ্রুতির কথা জানাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন প্রার্থীরাও।
এর আগে গত সোমবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ, অনুষদ ভবন, ঝুপড়ি ও বিভিন্ন স্পটে শেষ মুহূর্তের প্রচার করেছেন প্রার্থীরা। রাত ১০টা পর্যন্ত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ঘাম ঝরানো ব্যস্ততা দেখা গেছে।
চবি ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী মারুফা জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য চাকসু নির্বাচন জরুরি ছিল। প্রায় তিন যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের নিয়ে আমরা আশাবাদী।’
ভোট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদ ভবনকে কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রায় ২৭ হাজার ৫০০ ভোটার এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এ জন্য পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১৪টি কেন্দ্রে হল সংসদ ও ১টি কেন্দ্রে হোস্টেল সংসদ নির্বাচন হবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে আলাদা ভোটকেন্দ্র রাখা হয়েছে।
নির্বাচনে নির্বিঘœ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। ভোটারদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩০টি বাসের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি শাটল ট্রেনও চলবে অতিরিক্ত শিডিউলে।
চাকসু নির্বাচনে মাঠে লড়ছেন ৯০৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে লড়ছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। ভিপি পদে ২৪, জিএস পদে ২২, এজিএস পদে ২১, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২, সহ-খেলাধুলা সম্পাদক ১৪, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক ১৭, সহ-সাহিত্য সম্পাদক ১৫, দপ্তর সম্পাদক ১৭, সহ-দপ্তর সম্পাদক ১৪, ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক ১৩, সহ-ছাত্রী কল্যাণ সম্পাদক ১০, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক ১১, গবেষণা সম্পাদক ১২, সমাজসেবা সম্পাদক ২০, স্বাস্থ্য সম্পাদক ১৫, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক ১৭, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক ১৬, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক ১৭, সহ-যোগাযোগ সম্পাদক ১৪, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক ৯, পাঠাগার সম্পাদক ২০ ও নির্বাহী সদস্য পদে ৮৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে ১৪টি হল সংসদে লড়ছেন ৪৭৩ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ছাত্রদের ১০টি আবাসিক ইউনিটে ৩৫০ জন এবং ছাত্রীদের ৫টি হলে ১২৩ জন।
তথ্যসূত্র বলেছ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ভোটার রয়েছেন ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে ১৬ হাজার ১৮৯ জন পুরুষ ও ১১ হাজার ৩২৯ জন নারী ভোটার। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে ১টি বিশেষ কেন্দ্রে।
প্রকৌশল অনুষদে ৪ হাজার ৩৬ জন, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনে ৫ হাজার ২৬৩ জন, বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ৪ হাজার ৫৩৮ জন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবনে ৬ হাজার ৬০৬ জন এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে ৭ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী ভোট দেবেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন