ঢাকা বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫

নির্বাচনি হাওয়ায় ভাসছে এনসিপি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ১২:৫২ এএম

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারার নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আগামী ৭-৮ নভেম্বর ঘোষণা করা হতে পারে দলের প্রাথমিক প্রার্থীর তালিকা। এ ছাড়া বিএনপি, জামায়াত বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে নির্বাচনি জোট হবে কি না, তা নিয়ে চলছে দলটির শীর্ষনেতাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে সব আসনে প্রার্থী দিলেও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আসনে প্রার্থী না দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

গতকাল মঙ্গলবার এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আনুমোদন দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ২০২৬ সালে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা, প্রার্থী বাছাই, মাঠ পর্যায়ের সমন্বয়, আইনি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম, মিডিয়া ও প্রচারণা এবং প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং করতে ‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠন করল।

কমিটির প্রধান হয়েছন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সেক্রেটারি হয়েছেন ডা. তাসনিম জারা। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে আছেন আরিফুল ইসলাম আদীব, মাহবুব আলম মাহির, খালেদ সাইফুল্লাহ, এহতেশাম হক, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম মুসা, অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর, সাইফুল্লাহ হায়দার এবং অ্যাডভোকেট মো.তারিকুল ইসলাম।

নির্বাচন সামনে রেখে ৭ বা ৮ নভেম্বর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। প্রাথমিকভাবে ৭০ থেকে ১০০ জনের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। এ বিষয়ে দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা কোনো প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করিনি। তবে ৭-৮ নভেম্বরের দিকে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারি। এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

অন্যদিকে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে কার সঙ্গে জোট করবে, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনিত হতে পারেনি দলটি। এ ক্ষেত্রে দেশের সার্বিক সংস্কার ও নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে আন্তরিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের প্রস্তুতি তাদের। আলাপ চলছে বিএনপির সঙ্গেও। কিছুদিন আগে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা থাকলেও সেই সম্ভাবনা এখন আর নেই। সাম্প্রতিককালে জামায়াত নিয়ে দলটির একাধিক নেতার বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনি জোট গঠনের বিষয়ে এনসিপি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। আগামী ৭ নভেম্বর দলের সাধারণ সভায় নির্বাচনি মনোনয়ন এবং জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা সফল হলে আগামী সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের ঘোষণা আসতে পারে। তবে কোন কোন দলের সঙ্গে জোট হবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়রা নূর এ বিষয়ে বলেন, ‘এখনো জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। কারণ কিছু বিষয়ে যে অস্পষ্টতা আছে, এটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বারবার একটা কথা বলে আসছি, অভ্যুত্থানকে যারা সেইম স্পিরিটে (একই চেতনায়) ধারণ করবে, সেইম অভিপ্রায় যাদের থাকবে, তাদের সঙ্গে আমরা জোট করতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যদি কোনো দল অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ না করে, শুধু নির্বাচন নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের সঙ্গে আমাদের জোট করাটা কঠিন হয়ে যাবে। জামায়াতের সঙ্গে আমরা কিছুতেই যাচ্ছি না, এটা মোটামুটি স্পষ্ট। বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা জোটের রাজনীতি করতে পারি কি না, সেটা নিয়েও আলোচনা চলছে।’

এনসিপির এই নেত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান বলেছেন যে তারা আমাদের চায়। তার থেকে আমরা একটি ইতিবাচক মনোভাব পেয়েছি। তার পরও এখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। জোটের সঙ্গে যদি সমন্বয় করার সুযোগ থাকে, সে ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা আসনে আমরাও প্রার্থী দেব। আমরা ৩০০ আসনের প্রার্থী নিয়ে গুছিয়ে উঠছি।’

বিএনপির সঙ্গে জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন তাদের কতটুকু ইতিবাচক মনোভাব আছে, সেটি দেখতে হবে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। এটি যদি কেউ করতে চায়, আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’

এদিকে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনি আসনে কোনো প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এ বিষয়ে গতকাল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপি কোনো প্রার্থী দেবে না। এই গণঅভ্যুত্থানের পরে নতুন একটি সৌন্দর্য এসেছেÑ খালেদা জিয়া প্রার্থী হয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। তার আপসহীন ও লড়াকু নেতৃত্ব বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অনেক শক্তিশালী করেছে।’ বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকায় দেখা যায় ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ এবং বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হয়েছেন খালেদা জিয়া।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেন, ‘তারেক রহমানও প্রার্থী হয়েছেন। তিনি যদি বাংলাদেশে আসেন, আমরা তাকেও স্বাগত জানাই। জামায়াত ইসলামের আমির, তিনিও প্রার্থী হচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মজলুম ছিলেন, তাকেও আমরা স্বাগত জানাই। আমরা ভাবছি, কীভাবে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জামায়াতের আমির, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সহযোদ্ধা, তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পার্লামেন্টে নিয়ে আসা যায়। সেই চিন্তা থেকেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, খালেদা জিয়ার আসনে এনসিপির পক্ষ থেকে কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না।’