আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিদ্যমান স্ট্রাইকিং ফোর্সের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা চায় জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার-ইসির সঙ্গে বৈঠকে দলটির তরফে এই দাবি জানানো হয়। বৈঠক শেষে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, বৈঠকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটিংয়ের জন্য বেশি ‘ডকুমেন্ট’ না দিয়ে প্রবাসীদের নিবন্ধন সহজ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে গণভোট যেন গৌণ না হয় সেজন্য সংসদ নির্বাচনের আগে করার দাবি রয়েছে দলটির। আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতি গুছিয়ে আনছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে সরকার নির্বাচন প্রচারাভিযান শুরু করেছে। তবে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোটের বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
সনদ জারি ও গণভোট : জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোট আয়োজন নিয়ে যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে তা নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দিকনির্দেশনা চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার। সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল জামায়াতের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, গণভোটের বিষয়ে আটটি দল ৩ নভেম্বর বসেছিলাম। পাঁচ দফা দাবির মধ্যে আদেশ জারির বিষয়ে ফোকাস দিয়েছি আমরা। দেরি হয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহ পার হলেও দ্রুত জারির জন্য বলেছি। গণভোট এ আদেশকে শক্তিশালী করবে।
জামায়াতের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, এ গণভোট যেনতেনভাবে যেন না হয়। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট হলে, তা যেনতেনভাবে হবে বলে মনে করেন তারা। তিনি আরও বলেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে একই দিনে হলে নানা জটিলতা হবে। সবার আগ্রহ থাকবে প্রার্থীর দিকে। গণভোট গৌণ হয়ে যাবে। পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে যেকোনো দিন (গণভোট) হতে হবে।
জামায়াত বিষয়টি ইসিকে বলেছে তুলে ধরে আযাদ বলেন, ইসি বলেছে, সরকার যদি বলে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করবে। আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) সকালে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দেব। দাবি সুস্পষ্ট-গণভোট যেন সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পৃথক দিবসে হয়। আরপিও সংশোধন ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী থাকলেও বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যেভাবে তারা (ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারসহ) স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রয়েছে, সেভাবে ভোট দেখতে চায় জামায়াত।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয়, এমন কিছু হলে যেন কঠোরভাবে দমন করে সরকারÑ এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী এখন যেভাবে স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে, এটাও কার্যকর থাকবে। আর ভোটে আইনশৃঙ্খলার কাজও করবে।
পোস্টাল ভোটিং : নিবন্ধন সহজ করার দাবি : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আগের বৈঠকের আলোচনার ১৮ দফার প্রস্তাবের কিছু কিছু বিষয়ে সিইসির কাছে অগ্রগতি জেনেছেন তারা। ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচনের সময় ঠিক হয়েছে, আমরা চাই এ সময়ে নির্বাচন হোক। নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে তাতে ব্যত্যয় ঘটছে কি না, সামনে এসেছে। প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগকেও স্বাগত জানায় জামায়াত। পোস্টাল ভোটিং অ্যাপে নিবন্ধনের শর্তে পানির বিল, বিদ্যুতের বিলসহ নানা জটিলতাগুলো যেন বাদ দেওয়া হয়। কমিশন নিশ্চিত করছে, এটা নিশ্চিত করবেন। জন্ম নিবন্ধন লাগবে, এনআইডি কার্ড আর ঠিকানার বিষয়ে জোর দিচ্ছে। এতে প্রবাসীদের নিবন্ধন করায় সহজ হবে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়া নিয়ে ‘কনফিউশন’ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। আযাদ বলেন, কনফিউশন’ হচ্ছে, আমিরে জামায়াত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তুরস্কে গেছেন; ওমরাহ করেছেন- সবখানে প্রবাসীদের উদ্বেগ রয়েছে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। সে বিষয়ে ইসির নজরে আনতে আমরা ‘ফরমালি’ এসেছি।
পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য ১৬ নভেম্বর নিবন্ধন অ্যাপ উদ্বোধনের কথা রয়েছে। জামায়াতের এ নেতা বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে যে নিবন্ধন হবে তা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে ইসি। ওখানে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, এটা পরীক্ষামূলক হয়েছে। এ বিষয়টি তারা যাচাই করতে এসেছেন, আসলে কি ঘটেছে। ইসির সঙ্গে বৈঠকে সংশয় কিছুটা কেটেছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তার ভাষ্য, এটা চূড়ান্ত নয়। ১৮ নভেম্বর থেকে অঞ্চলভিত্তিক সময়সূচি দিলে তারা প্রবাসীরা অ্যাপে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে নিবন্ধন করবেন।
আযাদ বলেন, কমিশন জানিয়েছেন দুটি ভিন্ন বিষয়। ভোটার রেজিস্ট্রশন চলমান। পোস্টাল ভোটিং সুনির্দিষ্ট সময় ১৮ নভেম্বর শুরু হয়ে নির্ধারিত সময়ে বন্ধ হয়ে যাবে। ইসির নির্ধারিত সময়ে পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন। ইসি এটা নিয়ে প্রচার করবে, আমরা সহযোগিতা করব।

