দেশবাসীর দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে একটি শান্তিপূর্ণ উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত করতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গতকাল বুধবার দুপুরে মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড ও স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত কোর্স-২০২৫ গ্র্যাজুয়েশন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। এদিন বাংলাদেশসহ ২৪টি দেশের সামরিক বাহিনীর তরুণ অফিসারদের মধ্যে সনদ তুলে দেন প্রধান উপদেষ্টা।
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘দেশবাসীর দীর্ঘদিনের কাক্সিক্ষত এই নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে একটি শান্তিপূর্ণ উৎসব এবং আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত করতে আমাদের সেনাবাহিনীর সহায়তা একান্তভাবে কামনা করছি।’ এর আগে তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং এ কারণে আমি তাদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করি।’ প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে সামরিক শিক্ষায় উৎকর্ষের স্তম্ভ হিসেবে ডিএসসিএসসির ভূমিকার কথা উল্লেখ এবং নেতৃত্ব গঠনে প্রতিষ্ঠানের প্রতি জাতির আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেন।
এবারের কোর্সে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের ২৪টি দেশের ৩১১ জন তরুণ সামরিক অফিসার অংশগ্রহণ করেন। কোর্স সম্পন্ন শেষে অফিসাররা প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, তারা তাদের অর্জিত জ্ঞান ব্যক্তি ও পেশাগত জীবনে কাজে লাগিয়ে দেশের যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর কঠোর প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান নিজ নিজ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে।’ তিনি কোর্সের সফলতা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী সদর দপ্তর, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সব অংশীজনের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ডিএসসিএসসি কোর্স-২০২৫ এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭০ জন, নৌবাহিনীর ৪৫ জন এবং বিমান বাহিনীর ৩৬ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ৩ জন কর্মকর্তা এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, জর্ডান, কেনিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মালি, নেপাল, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, সিয়েরা লিওন, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, তুরস্ক ও উগান্ডা থেকে আগত ৫৮ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ বছর মোট ৩১১ জন প্রশিক্ষণার্থী গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। এতে বাংলাদেশ পুলিশের ১ জনসহ মোট ১৪ জন নারী কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেন, যা নারীর অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নে প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উচ্চতর দায়িত্ব ও নেতৃত্ব প্রদানের জন্য প্রস্তুত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৫,৩২৯ জন কর্মকর্তা, ২০ জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বন্ধুপ্রতিম ৪৫ দেশের ১,৪৬৫ জন বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাসহ মোট ৬,৮১৪ জন অফিসার এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যগণ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা (চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত), বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অধ্যাপকবৃন্দ ও বিভিন্ন দেশের মিলিটারি বা ডিফেন্স অ্যাটাচি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

