সমালোচনার মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাক পরার নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে বিবৃতি পাঠানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অফিস সময়ে পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরিধানের পরামর্শ প্রদানের বিষয়ে নিজ নিজ বিভাগীয় সভায় আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি এবং এ-সংক্রান্ত কোনো সার্কুলারও জারি করা হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মিডিয়ার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বিষয়টি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের গোচরীভূত হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং তার নির্দেশনা মোতাবেক বিষয়টি এই মুহূর্তে প্রত্যাহার করা হলো।’
এর আগে ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ নির্দেশনা জারি করে। গত বুধবার রাতে তা প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু করে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেকে।
নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদারকে শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস, অর্থাৎ ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যরে পোশাক ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেড স্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। পরিহার করতে বলা হয়েছে জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।
নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেছিলেন, এক প্রতিষ্ঠানে সবাই একধরনের পোশাক পরবে, সেই লক্ষ্য থেকেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২১ জুলাই থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, পোশাক নিয়ে যেন সাম্য ও ঐক্য থাকে, কোনো ধরনের মানসিক বৈষম্য না থাকে। আর শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক। নারীদের ক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। কাউকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়নি। তবে যারা পরবেন, তাদের সাদামাটা রঙের হিজাব পরতে হবে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ কেন এমন নির্দেশনা দিয়েছিল, তা দেখার বিষয়। এই সংস্থার কর্মকর্তাÑকর্মচারীরা এমনিতেই মানানসই পোশাক পরেন। এ ব্যাপারে উচ্চপর্যায়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে সংস্থার কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের সঙ্গে আলাপÑআলোচনা করা হয়েছিল কি না, তা-ও আমরা জানি না। তবে আমার ধারণা, এটি হয়তো শুধু সুপারিশ ছিল, নির্দেশনা নয়। আর এ ধরনের বিষয় কর্তৃপক্ষ থেকে সুপারিশ বা প্রত্যাশা পর্যায়ে থাকলেই ভালো।