খুলনা ওয়াসায় দীর্ঘদিন পর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে বড় ধরনের রদবদল শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে চারটি আঞ্চলিক কার্যালয় ও বিভিন্ন দপ্তরে দুজন কর্মকর্তা এবং ১৮ জন কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছে। আরও প্রায় দেড় ডজন কর্মচারীর নাম বদলির তালিকায় রয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে দীর্ঘ অচলাবস্থার পর কার্যালয়গুলোতে স্বস্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে।
অন্যদিকে, মিটার চুরির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপসহকারী প্রকৌশলী আফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। একই অভিযোগে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল আলম সরদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) করা হয়েছে। এরই মধ্যে আরও দুটি কার্যালয়ের মিটার চুরি সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে। সভায় প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, খুলনা ওয়াসায় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা আড়াই শতাধিক। এর মধ্যে দুই শতাধিক কর্মচারী। পাম্প অপারেটর, অঙ্গনবিদসহ কর্মচারীদের বড় একটি অংশের দৃশ্যমান কাজ কম। তারা কর্মচারী ইউনিয়ন, কর্মচারী সমিতি কার্যালয়ে আড্ডা এবং কাজ না থাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুৎসা, কর্মকর্তাদের হুমকি, টেন্ডার, পাইপলাইন সংযোগের মাধ্যমে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
আর্থিক সুবিধা নিয়ে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহর মেয়াদ বাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তদবির, মন্ত্রণালয়ে ছোটাছুটিসহ বিভিন্ন কাজ করেন তারা। এতে ব্যর্থ হয়ে তারা আরও বেপরোয় হয়ে ওঠেন। পছন্দমতো বদলি, ঠিকাদারি কাজের কমিশনসহ বিভিন্ন কাজ আদায়ে জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীকে হুমকি ও লাঞ্ছিত করেন কয়েকজন। অফিস সূচির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো কার্যালয়ে আসা-যাওয়া শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে একই পদে দায়িত্ব পালন করায় অনেকেই কর্মকর্তাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করেন। আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে নতুন ও পুরোনো মিটার চুরি করে বিক্রি করে দেওয়ারও ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে ওয়াসা কার্যালয়ের কাজের পরিবেশ ভেঙে পড়ে।
এ অবস্থায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পান খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবু সায়েদ মো. মনজুর আলম। তিনি কার্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন। তার অংশ হিসেবে গত ৩ আগস্ট একসঙ্গে ১৬ কর্মচারীকে বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় ও দপ্তরে বদলি করা হয়। এই বদলি বন্ধ করতে কর্মচারী নেতারা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অনড় থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেননি। গত ১১ আগস্ট ইউনিয়নের সাবেক দুই নেতাকে বদলি করা হয়। ১২ আগস্ট বদলি করা হয় দুই সহকারী প্রকৌশলীকে।
সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ যাকে নিয়েÑ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জি এম আবদুল গফফারকে এখনো বদলি করা হয়নি। অঙ্কনবিদ হিসেবে কাজ না থাকায় তিনিই সবচেয়ে বেপরোয় আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে সভাপতি কবির হোসেনসহ ইউনিয়নের অন্য নেতাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে কাজে ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে, তাদের ছাড়াও ১০-১২ বছর ধরে একই পদে থাকা ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করার দাবি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পাম্প অপারেটর হিসেবে দায়িত্বরতদের নিয়মিত কাজ না করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে পাম্প চালু করে তারা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের পক্ষে পরিবারের সদস্যরাই পাম্প চালান এবং বন্ধ করেন। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে পানির পাম্প চালু ও বন্ধ করতে পৃথক জনবল কাজে লাগানোর বিষয়টি অনেককে অবাক করে।
খুলনা ওয়াসার সচিব প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে দায়িত্ব পালন করায় অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। পদ অনুযায়ী কর্মচারী, কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে বদলি করা হচ্ছে। আগামীতে আরও কয়েকজনকে বদলি করা হবে।
খুলনা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সায়েদ মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা চলছে। বদলি কার্যক্রম চলবে। ঢাকা থেকে আইসিটি এক্সপার্ট আনা হচ্ছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কর্মচারীদের হাজিরা, বেতন-ভাতা সব সফটওয়্যারের ভিত্তিতে হবে।
তিনি জানান, মিটার চুরির বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। একজনের বিষয়ে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। পুলিশকে বলা হয়েছে দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে। খুব দ্রুতই খুলনা ওয়াসায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।