ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

ট্রাম্পকে বুড়ো আঙুল

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘাত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০৪:২১ এএম
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া ম্যাপ। ছবি : সংগৃহীত

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সীমান্তে আবারও উত্তেজনা চরমে। দুই দেশের সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘন ঘন ঘটছে। এতে সীমান্তজুড়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া নাজুক যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আবারও দ্রুত অবনতি ঘটছে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে নতুন করে তিন থাই সেনা ও সাত কম্বোডিয়ান বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু এই উত্তেজনাকে আরও ঘনীভূত করেছে। দুপক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ শুরুর জন্য দায়ী করছে। সীমান্তে থাই বিমান হামলার পর পরিস্থিতি জুলাই-পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ওই সময় পাঁচ দিনের সংঘাতে অন্তত ৪৮ জন নিহত হন এবং হাজারো মানুষ ঘরছাড়া হন।

পুরোনো বিরোধে নতুন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ

দুই দেশের বিরোধ নতুন নয়। উপনিবেশকালীন সীমান্ত নির্ধারণ থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব শত বছরের পুরোনো। ২০০৮ সালে কম্বোডিয়ার বিতর্কিত মন্দির এলাকাকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় তোলার উদ্যোগের পর সংঘাত নতুন মাত্রা পায়। এরপর থেকে ছোটখাটো সংঘর্ষ, হতাহতের ঘটনা এবং সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা প্রায় নিয়মিতই চলেছে।

মে মাসে নতুন করে সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হলে দুই দেশের সম্পর্ক বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে নেমে আসে। উভয় দেশই সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ায়। থাইল্যান্ড থেকে সবজি–ফল আমদানি বন্ধ করে কম্বোডিয়া। পাল্টা থাইল্যান্ডও বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেয়।

কেন আবার সংঘাত?

দুপক্ষের বর্ণনায় স্পষ্ট হচ্ছে, সীমান্তে সামান্য উসকানি বা ভুল ব্যাখ্যা বড় সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।

থাই সেনাবাহিনী বলছে, কম্বোডিয়ার গুলির জবাব দিতে বাধ্য হয় তারা। কম্বোডিয়ার দাবি, আক্রমণ শুরু করেছে থাইল্যান্ড। কেউই প্রথম গুলি চালানোর দায় নিচ্ছে না, কিন্তু ভারী অস্ত্র, বিমান হামলা, রকেট—সবই এখন সীমান্তে ব্যবহার হচ্ছে।

থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া আত্মঘাতী ড্রোন, একাধিক রকেট সিস্টেম ও ভারী কামান ব্যবহার করেছে। কম্বোডিয়ার পাল্টা অভিযোগ, থাই বাহিনী প্রথমে মন্দির এলাকায় অনুপ্রবেশ করে, চুক্তিভঙ্গ করে এবং নির্বিচারে বেসামরিক এলাকায় গোলা ছুড়ে।

উভয় পক্ষের অভিযোগ-প্রতিঅভিযোগের মধ্যেই সীমান্তের সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বাজার ও যোগাযোগব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ট্রাম্পের শান্তি চুক্তির ভবিষ্যৎ

অক্টোবরের শান্তি চুক্তিটিই এখন কার্যত অকার্যকর। ভারী অস্ত্র প্রত্যাহার ও সীমান্তে পর্যবেক্ষক দল গঠনের কথা থাকলেও কিছুই হয়নি। থাইল্যান্ড নভেম্বরেই চুক্তি স্থগিত করে বলে, ‘নিরাপত্তা হুমকি কমেনি’। কম্বোডিয়া বলছে, তারা চুক্তির শর্ত মানছে।

সংঘাতের পর ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে ফিরতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সেনা মোতায়েনের যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে, তাতে দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ভ্রমণ কি নিরাপদ?

উত্তেজনার কারণে ব্রিটিশ ফরেন অফিস ভ্রমণকারীদের কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। দুই দেশেই একই সতর্কতা জারি রয়েছে।

দুই দেশের সম্পর্ক কখন স্বাভাবিক হবে, সে বিষয়ে কারও হাতে স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই। তবে সীমান্তের মানুষ এখন যে ভয় ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে, তা দ্রুত কাটার কোনো লক্ষণও নেই।