ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে  নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে  প্রবেশের এখনই সময় 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৭:১৬ এএম

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্রান্তিলগ্নে জ¦ালানিশিল্পের একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা জরুরি। জীবাশ্ম জ¦ালানি পৃথিবীতে গ্রিনহাউস গ্যাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, এতে পৃথিবীর পরিবেশ দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে, সেই সঙ্গে আর্থসামাজিক বৈষম্যের মাত্রাও বেড়ে চলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায্য জ¦ালানি রূপান্তর নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎসের একটি বিকল্প কৌশল শুধু নয়, বরং এটা ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই উন্নয়নও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যায্য রূপান্তরের বিষয়টি বাংলাদেশের মতো একটি দেশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জ¦ালানি চাহিদা বাড়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত সম্প্রসারণশীল, যা বিশ্বব্যাপী এ দেশকে জ¦ালানি সম্প্রসারণ ও ন্যায্য রূপান্তরের বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে গেছে। দেশে এখনো জীবাশ্ম জ¦ালানির ওপর ব্যাপক নির্ভরতায় কয়লা, তেল, তরলীকৃত গ্যাস ইত্যাদি আমদানির কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আর জ¦ালানি নিরাপত্তাহীনতা উভয় দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্র্ণ অবস্থানে রয়েছে।  নবায়নযোগ্য জ¦ালানি ব্যবহারকে উৎসাহিতকরণের ব্যাপক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এর পরিমাণ দেশের মোট জ¦ালানির সামান্য মাত্র। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার নবায়নযোগ্য জ¦ালানিনীতি ২০২৫ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই নীতিতে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যদিও অন্যান্য পরিকল্পনা ও নীতিমালার সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির লক্ষ্যগুলোর অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। তাই এখনই সময় বাংলাদেশে ন্যায্য জ¦ালানি রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা।

উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এশিয়া যৌথভাবে গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফসিল ফুয়েল নন প্রোলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজার হার্জিত সিং। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের কাছ থেকে অন্যান্য দেশ নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ক্ষেত্রে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তা শিখেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৬ ডিগ্রি বাড়ার কারণে আমরা খুবই চিন্তিত। আমাদের নতুন চাপ সহ্য করতে হচ্ছে। যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে আরও সমস্যা তৈরি হবে। আমরা এখনো জীবাশ্ম জ¦ালানির ওপর নির্ভরশীল। নীরব বাণিজ্যযুদ্ধ ও অন্যান্য বাধার কারণে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। অনেক দেশের সক্ষমতা আছে, কিন্তু তারা দায়িত্ব নিতে চায় না, কারণ অর্থের জোগান দিতে হবে। প্যারিস চুক্তিতে জীবাশ্ম জ¦ালানির কথা একবারও বলা হয়নি। তিনি এ সময় ফসিল ফুয়েল নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটিতে অংশগ্রহণকারী দেশের পরিচিতি তুলে ধরেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক বদরুল ইমাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক, সেন্টার ফর রিনিউএবল এনার্জি সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী, ফসিল ফুয়েল নন-প্রোলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভের এশিয়া ক্যাম্পেইনার শিবায়ন রাহা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অধিকার ও সুশাসন কর্মসূচি পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী, সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও পটভূমি ব্যাখ্যা করেন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব শরীফ জামিল। ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকী সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন।

এ সময় শরীফ জামিল বলেন, গত সরকারের কার্যক্রমে বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা তৈরি হয়েছে, আবার সমস্যাও তৈরি হয়েছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে কৃষিজমিসহ জনস্বাস্থ্য, লবণ চাষ, জীবন-জীবিকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে। আমাদের সঠিকভাবে পরিবেশ সমীক্ষা করা দরকার ছিল। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অধিকার ও সুশাসন কর্মসূচি পরিচালক বনশ্রী মিত্র নিয়োগী বলেন, ন্যায্য জ¦ালানিসংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলো কখনোই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে করা হয় না। আমাদের এই জনগোষ্ঠীকে নিয়েও ভাবতে হবে।

ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, জ¦ালানি রূপান্তর নির্ভর করে একটি দেশের সক্ষমতার ওপর। আমাদের আমদানিনির্ভরতার কারণে বারবার জ¦লানির দাম বাড়াতে হচ্ছে। তার পরও আমরা চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। আমাদের সম্পূর্ণ জ¦ালানি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।