ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

অরক্ষিত রেলগেট যেন মৃত্যুফাঁদ

মিঠুন মাহমুদ, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৮:৫৯ এএম

অনুমোদনহীন অরক্ষিত রেলগেট, ত্রুটিযুক্ত ব্যারিয়ার, গেটম্যানের স্বল্পতাসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে চুয়াডাঙ্গার রেলক্রসিংগুলো। চলতি বছরের সাত মাসেই ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন অন্তত ৯ জন। অথচ দায়সারাভাবে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের দাবি, সমস্যার সমাধান করা হোক।

জানা যায়, ১৮৬২ সালে কলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে রেলপথে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়। সেই থেকে ট্রেন চলাচল করছে। বর্তমানে এই রেলপথ দিয়ে আন্তর্জাতিক, আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ট্রেনে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় মানুষও অনেকটা নির্ভরশীল রেলের ওপর।

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের মানুষ রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করেছে। সেখান দিয়ে শিক্ষার্থী, পথচারীসহ ছোট-বড় যানবাহনগুলো নিয়মিত চলাচল করে। একই অবস্থা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আমিরপুর গ্রামে। গত ৮ জুলাই আমিরপুর রেলগেটে ট্রেনে কাটা পড়ে একই গ্রামের জীবন আলী (২৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। এর আগে ৫ জুলাই রাতে মুন্সীগঞ্জ বেদবাড়ী এলাকার রেলগেটের কাছে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। ওই স্থান দিয়ে যাতায়াতের সময় বেশ কয়েকটি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের দাবি, রেলগেট স্থাপন করে গেটম্যান দেওয়া হোক।

জিআরপি থানা সূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় রেলপথ রয়েছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত গত সাত মাসে এই পথে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন অন্তত ৯ জন।

রেলওয়ের তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩০টি বৈধ গেট রয়েছে। এর মধ্য ১৫টি গেটে গেটম্যান নেই। যার কারণে বৈধগুলো মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া ৫টি অবৈধ গেট রয়েছে। এ সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। রেলপথের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য মানবসৃষ্ট আরও ২৫টি রাস্তা রয়েছে। এসব গেট ও রাস্তা দিয়ে রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচল করে শিক্ষার্থী, পথচারী, ছোট-বড় যানবাহনসহ বিভিন্ন প্রাণী। তবে এসব এলাকার বৈধ ও অবৈধ গেট ও রাস্তায় চলাচলকারীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন পথচারী ও দোকানিরা। ট্রেন আসার সময় হলেই তারা নিরাপত্তার স্বার্থে গেটের কাছে এসে সাবধানে যাতায়াতের জন্য নির্দেশনা দেন।

খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর, মেইল ও পণ্যবাহী ট্রেন দিন-রাতে চলাচল করছে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক রুটে ভারতের গেদে স্টেশন দিয়ে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হয়ে চলাচল করে। এ হিসেবে এত গুরুত্বপূর্ণ রুটে গেটম্যান না থাকায় গেটের কাছে থাকা দোকানি ও সাধারণ মানুষ গেটম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ট্রেন আসা-যাওয়ার সময়।

স্থানীয়রা বলেন, কর্তৃপক্ষ অরক্ষিত রেলগেটগুলোতে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দায় সেরেছে। দীর্ঘদিন এসব রেলগেট অরক্ষিত রয়েছে। বছরের পর বছর কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

আমিনুল ইসলাম নামের একজন বলেন, গেটম্যান ও গেট না থাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচল করছে পথচারী ও ছোট-বড় যানবাহন। দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত থাকার কারণে দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

রায়হান হোসেন নামের আরেকজন বলেন, রেলওয়ের অনেক গেটে পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে স্থানীয় দোকানি ও সাধারণ মানুষ। ট্রেন আসা দেখলেই তারা পথচারীদের সতর্ক করেন। তার মতে, যেখানে মানুষের চলাচল বেশি, সেখানে রেলগেট নির্মাণ ও গেটম্যান প্রয়োজন। তাহলে দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।

চুয়াডাঙ্গা জিআরপি ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) জগদীশ চন্দ্র বসু বলেন, গত ৭ মাসে চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ৯ জন। দুর্ঘটনাকবলিত স্থানগুলোতে রেলগেট প্রয়োজন। এসব স্থানে গেটম্যান থাকলে দুর্ঘটনা কম হতো।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, বৈধ গেটগুলো যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে অবৈধ স্থানে কীভাবে নিরাপত্তা দেব আমরা? মানুষ সহজে হেঁটে চলাচলের জন্য রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছে। বৈধ গেটে লোকবল সংকটের বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। গেটম্যান নিয়োগ পেলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।