ঢাকা মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

সুখের আশায় এপার-ওপার, তবুও হাহাকার

মাহফুজার রহমান, ফুলবাড়ী
প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৫, ০৯:০১ এএম

টানাটানির সংসারে কিছুটা সচ্ছলতা আনতে এবং পরিবার নিয়ে সুখে থাকার স্বপ্ন নিয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শত শত পরিবার অবৈধ পথে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে ইটভাটা, কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করে সুখের স্বপ্নও বুনেছিলেন তারা।

কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়েছে। শূন্য হাতে, এক কাপড় ছাড়া অন্য কিছু না নিয়েই তাদের এপার ফিরে আসতে হয়েছে। অথচ সুখের আশায় এপার-ওপার ঘুরে তারা এখন সংসারের হাহাকার কাটাতে পারছেন না। সম্প্রতি ভারত থেকে পুশ ইন হয়ে দেশে ফেরত আসা বেশির ভাগ পরিবারের এমনই অবস্থা।

উপজেলার ঘোগারকুটি গ্রামের দিনমজুর রুবেল মিয়া (২৭) জানান, অভাবের সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় স্ত্রী রোকসানা বেগম (২১) ও শিশুকন্যা রুবাইয়াকে নিয়ে দালালের সহযোগিতায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দিল্লিতে যান। সেখানে ৭ বছর ধরে বিভিন্ন ইটভাটায় স্বামী-স্ত্রী মিলে কাজ করেন। সেখানে আরেক সন্তান খাদিজার (১) জন্ম হয়। অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রায় দুই লাখ টাকা জমাও করি। তবে সাম্প্রতিক পুলিশি অভিযান ও ধরপাকড়ের কারণে তারা ধরা পড়েন। সব কিছু কেড়ে নিয়ে রাতের আঁধারে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর ধর্মপুর সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে পুশ ইন করে। শূন্য হাতে শুধু পরনের কাপড় নিয়ে ঘোগারকুটি গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন তিনি ও তার পরিবার। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে দুমড়েমুচড়ে বসতঘরের জরাজীর্ণ অবস্থা। বর্তমানে বাবার ঘরে গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

একই এলাকার সেকেন্দার আলী (৩৫) জানান, ২০১১ সালে পরিবার নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। রাজস্থান ও হরিয়ানার ইটভাটায় কাজ করেন। ১৪ বছর শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া টাকা মহাজনের কাছে জমা রাখলেও সব ছেড়ে শূন্য হাতে দেশে ফেরত আসতে হয়েছে তাদের। বর্তমানে ছোট ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিনযাপন করছেন তারা।

উত্তর বড়ভিটা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর আব্দুল জলিলও সম্প্রতি ভারত থেকে পুশ ইন হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন। ২০১৫ সালে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে দালালের সহযোগিতায় ভারতে গিয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী সাফিয়া বেগম (৩৩), ছেলে সফিয়ার (১২) ও মেয়ে জেসমিন (৯)-কে নিয়ে বিহার, হরিয়ানা ও রাজস্থানের বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করতেন। প্রায় ১০ বছর পর পুলিশি অভিযান শুরু হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বেচ্ছায় ধরা দেন। সব টাকা-পয়সা ও সম্পদ কেড়ে নিয়ে গভীর রাতে বিএসএফ তাদের সিলেটের মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। শূন্য হাতে দেশে ফিরে বর্তমানে সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

রুবেল মিয়া, সেকেন্দার আলী, আব্দুল জলিলসহ অনেক পরিবার দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থানকালে কষ্টার্জিত টাকা স্থানীয় মহাজনদের কাছে জমা রেখেছিলেন। কিন্তু পুশ ইনের সময় তারা কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। স্ত্রী-পরিজনসহ প্রাণ বাঁচিয়ে দেশে ফিরে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তা ছাড়া বেঁচে থাকার কোনো উপায় দেখছেন না তারা।

এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ফেরত আসা এসব পরিবারের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মহীন যুবক ও যুবতীদের জন্য সরকারিভাবে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’