মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:০৩ পিএম

ফুলেল শ্রদ্ধায় বদরুদ্দীন উমরকে  শেষ বিদায়

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:০৩ পিএম

ফুলেল শ্রদ্ধায় বদরুদ্দীন উমরকে  শেষ বিদায়

ফুলের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আর স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে লেখক, গবেষক, মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরকে শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত তার মরদেহ রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে। এ সময় বুদ্ধিজীবী, সরকারের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ প্রয়াতের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। শহিদ মিনার থেকে বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে জানাজার পর বিকেলে জুরাইন কবরস্থানে তার দাফন হয়।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বদরুদ্দীন উমর অসাধারণ একজন মানুষ; তিনি কখনো আপস করেননি। জ্ঞানী ছিলেন, প-িত ছিলেন। তার গবেষণা আমাদের পথ দেখিয়েছে। তিনি কখনো হতাশাবাদীও ছিলেন না। সব সময় আশার পথ দেখিয়েছেন। তার কাজের জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

৯৪ বছর বয়সি বদরুদ্দীন উমর গত রোববার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান। পরদিন গতকাল সকাল ১০টায় তার মরদেহ আনা হয় শহিদ মিনারে; এর আগে থেকেই অনেকে জড়ো হন শহিদ মিনার এলাকায়। পরে সোয়া ১০টা থেকে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন। শ্রদ্ধা জানাতে এসে কবি ও ভাবুক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমাদের আগামী দিনের ইতিহাসের যে বিবর্তন ঘটবে, সেখানে বদরুদ্দীন উমর থাকবেন। আমাদের যে জাতিবাদী ধারা, সেই ধারার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ তিনি। বদরুদ্দীন উমর স্রোতে গা ভাসাতেন না; যা বিশ্বাস করেছেন, তা বলেছেন। সেই বিশ্বাস মানুষের পক্ষে। এখন বিশ্বব্যাপী শ্রেণি-সংগ্রামের যে লড়াই, তাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিতে তত্ত্বগত গুরুত্ব অনেক। সেখানে তার ভূমিকা রয়েছে। ৫ আগস্টের পর যে নতুন ধারার রূপান্তর, সেখানেও তাকে মনে রাখতে হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রাজনীতির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এবং সাংগঠনিক চর্চায় বদরুদ্দীন উমরকে পাঠ করতেই হবে। তিনি আজন্ম মানুষের পক্ষে গবেষণা করেছেন, রাজনীতির তত্ত্বগত বিশ্লেষণ করেছেন। এ কাজ তিনি আনন্দ চিত্তেই করেছেন। তিনি বলেছেনও, এমন জীবনই তিনি যাপন করতে চেয়েছেন। ফলে তিনি নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্টই ছিলেন।’

বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম। পরে তিনি বলেন, ‘বদরুদ্দীন উমর আমাদের দেশের একজন খুবই গুরত্বপূর্ণ লেখক ও গবেষক। তার বইগুলো এ ভূখ-ের রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, তার মতাদর্শিক সততা এবং বুদ্ধিজীবীসুলভ সাহস। জায়গাটিতে আমাদের গুটিকয়েক বুদ্ধিজীবীর মধ্যে একজন হবেন। দেশ যখন সংকটে পড়ে তখন বুদ্ধিজীবীরা পথ দেখান। বদরুদ্দীন উমর আমাদের সেই আলোকবর্তিকা, যিনি বারবার এ দেশকে সংকটে পথ দেখিয়েছেন।’

সরকারের শ্রদ্ধা

অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাও শ্রদ্ধা জানান। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের বলেন, একজন আপসহীন মানুষ চলে গেলেন। তিনি কখনোই আপস করেননি। তাকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, বিতর্কও হয়েছে। তিনি নিজের আদর্শে ছিলেন অবিচল। আমাদের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন যে বুদ্ধিজীবী, তিনি বদরুদ্দীন উমর। তিনি ইতিহাসের সত্য লিখেছেন।

রাজনীতিকদের শ্রদ্ধা

জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। এ সময় তিনি বলেন, বদরুদ্দীন উমর বুদ্ধিজীবী হিসেবে সব সময় ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, শোষকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শোষিতের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আমরা অনেক বুদ্ধিজীবীকে দেখেছি, বুদ্ধিকে বন্ধক রেখে কাজ করতে দেখেছি। তিনি বিবেক-বুদ্ধি বন্ধক রাখেননি। মানুষের মুক্তির পক্ষে থেকেছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দুটি কারণে তাকে আমাদের মনে রাখতে হবে। তিনি যে মতাদর্শিক জায়গা থেকে রাজনীতি করেছেন, শেষ পর্যন্ত তিনি সেই আদর্শে অবিচল থেকেছেন। আর তিনি আজীবন মানুষের পক্ষে থেকেছেন, আপস করেননি। বাম ধারার সব পক্ষের সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক ছিল। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তরফে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বদরুদ্দীন উমর হাসিনার শাসনকে ফ্যাসিবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে গেছেন। আমাদের জুলাইয়ে যখন আন্দোলন চলছিল, তখনই তিনি এটাকে অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী কাঠামোর যে ভিত্তি, তা হলো বাহাত্তরের সংবিধান।

সেটি বাতিল করে বাংলাদেশকে এমন জায়গায় দাঁড় করাতে হবে, যেন আর কখনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া না দিতে পারে। বদরুদ্দীন উমরের কাজকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী সাংবাদিকদের বলেন, বদরুদ্দীন উমরকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেই অপরিহার্যতা তিনি তৈরি করেছেন। তিনি শিক্ষকতা করেছেন, গ্রামে ঘুরে বেরিয়েছেন। সংগঠন করেছেন। তার পার্টি হয়তো নানা কারণে বড় পার্টি হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আমরা তার সান্নিধ্য পেয়েছি, তার আদর্শ মানুষের প্রতি নিষ্ঠাবান, জনগণের স্বার্থের প্রতি তার পক্ষপাতিত্ব আছে। ভবিষ্যতেও মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে বদরুদ্দীন উমর প্রেরণা জোগাবেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!