সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় জন্মনিবন্ধের কপি সংগ্রহ ও সংশোধনের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। এতে বাড়ছে ক্ষোভ ও ভোগান্তি।
সম্প্রতি জকিগঞ্জ উপজেলার ১নং বারহাল ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনের কপি সংগ্রহ ও সংশোধনের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, সরকার নির্ধারিত গেজেট অনুযায়ী ফি নির্ধারিত থাকলেও প্রতি কপিতে অতিরিক্ত ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে, যা অনিয়ম ও দুর্নীতির শামিল।
বারহাল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কুদালী গ্রামের একজন ভুক্তভোগী জানান, তার মামা ও মামাতো বোনদের জন্মনিবন্ধন অনলাইনে সম্পন্ন ছিল, বাংলা কপিও হাতে ছিল। শুধু ইংরেজি কপি সংগ্রহ করতে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মীরা ৩টি কপির জন্য মোট ৪৫০ টাকা দাবি করেন এবং আদায় করেন, অথচ কোনো রসিদ দেওয়া হয়নি।
তিনি জানান, একই দিন ইউনিয়ন পরিষদে সচিব ও অন্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। এসব প্রশ্নে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছেন।
এ বিষয়ে বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রিপন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের পরিষদ থেকে নির্ধারিত ফির বাইরে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। কেউ ব্যক্তিগতভাবে করে থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
তবে তিনি ফির তালিকা কোথায় টাঙানো আছে কিংবা কেন রসিদ দেওয়া হয়নিÑ এসব প্রশ্নে সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
বারহাল ইউনিয়নের কোনাগ্রামের ঘাট বছরের বৃদ্ধ আখই মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলে প্রবাসে থাকে, এখন তার ঘরে ছেলে জন্ম হয়েছে। নাতির জন্মনিবন্ধন করতে এসে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। নানা অজুহাত দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়েছে। স্কুলে ভর্তি করতে গেলে অবশ্যই জন্মনিবন্ধন দরকার, তাই বাধ্য হয়ে ছেলে ও নাতির জন্য মোট ২ হাজার টাকা দিয়েছি।’
এ বিষয়ে কথা হলে বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। আমাদের পরিষদ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। যদি কেউ এই ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকে, প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউনিয়ন পরিষদ জনসেবার জায়গা, এখানে কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই। আমি স্থানীয়দের অনুরোধ করবÑ এমন অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে আমাদের জানাবেন, আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’
অভিযোগ রয়েছে, এই অনিয়ম শুধু একজন বা দুজন কর্মচারীর ব্যক্তিগত লেনদেন নয়, বরং পুরো পরিষদের একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতভাবে এই ধরনের লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘সচিব, উদ্যোক্তা, এমনকি চেয়ারম্যানও না জেনে থাকবেনÑ এটা বিশ্বাসযোগ্য না। এটা সবাই জানে, কিন্তু কেউ মুখ খোলে না।’
এ বিষয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বারহাল ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি সেবায় কোনো ধরনের হয়রানি সহ্য করা হবে না।’